ফিলিস্তিনিদের মুক্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে উল্লাস
শক্তি প্রদর্শন করে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিল হামাস
* জীবিত-মৃত ইসরায়েলিদের ফেরত দিল হামাস * জিম্মিমুক্তি প্রক্রিয়ায় শক্তি প্রদর্শনে হামাসের বিপুল সশস্ত্র যোদ্ধা মোতায়েন * বন্দিরা ফিরে আসার পর ফিলিস্তিনে উল্লাস * হামাসের অস্ত্রসজ্জিত থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন রয়েছে : ট্রাম্প * ট্রাম্পের বক্তব্যে বাধা, টেনেহিঁচড়ে বের করা হলো ইসরায়েলি এমপিকে * উড়োজাহাজ থেকে গাজার জিম্মি মুক্তির ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ দেখলেন ট্রাম্প
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এম জাফিউল ইসলাম

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর জিম্মি হওয়া ইসরায়েলিদের মধ্যে জীবিত সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। মুক্ত ২০ জনকে দাতব্য সংস্থা রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। গতকাল সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি। সাত ও ১৩ জনের দুই দফায় তারা মুক্তি পান। ১৩ জনের দ্বিতীয় দলটিকে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে রেড ক্রসের বাসে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাসটি তেলআবিবের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে হামাস।
দিনের আগের অংশে সাত জিম্মিকে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। চুক্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে বাকি ৪৭ জিম্মির লাশও ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে ওই প্রক্রিয়া আজকের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছে না তেল আবিব। ৪৭ জনের পাশাপাশি ২০১৪ সালে গাজায় নিহত এক ইসরায়েলি সেনার লাশও হামাস হস্তান্তর করবে। জিম্মিদের মুক্তির খবরে তেল আবিবের ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ জমায়েত হওয়া হাজারো ইসরায়েলি উল্লাসে ফেটে পড়েন। অপরদিকে, চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আটক হাজারো ফিলিস্তিনি এখনও মুক্তির অপেক্ষায় আছেন। এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, সকল জীবিত জিম্মি ও মৃতদের লাশ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবেন না। মুক্তি পেতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ২৫০ জনকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের দায়ে আটক করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ‘ইসরায়েলি নাগরিক’ হত্যার অভিযোগ আছে।
পাশাপাশি, আরও ১ হাজার ৭০০ জনকে গাজার যুদ্ধ চলাকালীন সময় ইসরায়েলি সেনা আটক করে। হামাসের দাবি, অন্যান্যদের পাশাপাশি সাত শীর্ষ ফিলিস্তিনি নেতাকেও মুক্তি দিতে হবে। সর্বশেষ তথ্য মতে, এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। অপরদিকে, গাজা শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে মিশরের শার্ম এল-শেখ শহরে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে গাজার ভবিষ্যৎ ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে গাজা শান্তি সম্মেলনে বিশ্বনেতারা আলোচনা করবেন। এতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। তবে এতে ইসরায়েল বা হামাসের অংশগ্রহণ না থাকায় পুরো উদ্যোগটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
জিম্মিমুক্তি প্রক্রিয়ায় শক্তি প্রদর্শনে হামাসের যোদ্ধা মোতায়েন : ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়ায় হামাস সদস্যদের সশস্ত্র উপস্থিতি দেখা গেছে। চলমান প্রক্রিয়াকে হামাস শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল সোমবার ধারণকৃত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি হাসপাতালের সামনে হামাসের কয়েক ডজন সশস্ত্র সদস্য সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে একজনের ইউনিফর্মে দলটির সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের চিহ্ন দেখা গেছে। তার শোল্ডার প্যাচ (সশস্ত্র গোষ্ঠীর ইউনিফর্মে কাঁধে থাকা পরিচয় চিহ্ন) থেকে তাকে ‘শ্যাডো ইউনিট’-এর সদস্য হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। হামাসের তথ্য অনুযায়ী, এই বিশেষ ইউনিট জিম্মিদের পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রেড ক্রসের মাধ্যমে গাজা থেকে সাতজন জীবিত জিম্মিকে ফেরত পেয়েছে তারা। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৮টায় প্রথম ধাপে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আরও ২৬ জনের লাশ এবং দুইজনের অজানা পরিণতির ব্যাপারে সোমবারের মধ্যেই দফারফার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলে থাকা প্রায় দু’হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেও মুক্তি দেওয়ার কথা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েল সরকারের দাবি, হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় পূর্ণ সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হামাসের জিম্মায় গাজায় শুধু ২০ জন জিম্মি বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হয়। গাজাযুদ্ধের অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ছিল, ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে জীবিত জিম্মি ও মৃতদের লাশ ফেরত দেওয়া। শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে রয়েছে গাজায় হামাসের শাসনের অবসান ও তাদের নিরস্ত্রীকরণ। ২০০৭ সালে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে উৎখাত করার পর থেকে ওই অঞ্চল শাসন করে আসছে হামাস।
রামাল্লা ও গাজায় পৌঁছেছে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বহনকারী বাস
হামাস পরিচালিত ‘প্রিজনার্স অফিস’ জানিয়েছে, সোমবার (১৩ অক্টোবর) বাসে করে মুক্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের একটি বড় দল পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহর ও গাজা উপত্যকায় পৌঁছেছে। দুই পক্ষের যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে, হামাস গাজায় আটক থাকা সব জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েলও ১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে মুক্ত করেছে।
প্রিজনার্স অফিস জানায়, রামাল্লায় পৌঁছানো বন্দিদের বাসগুলো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলকৃত ওফার কারাগার থেকে যাত্রা শুরু করে। অন্তত একটি বাস গাজা উপত্যকাতেও প্রবেশ করেছে।
সোমবার হামাস গাজায় আটক থাকা বাকি ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকেও মুক্তি দেয়। দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধের পর এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় গাজায় স্বস্তির বাতাস বইছে। চুক্তির অংশ হিসেবে নিহত ২৮ জন জিম্মির লাশও ফেরত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে, যদিও ঠিক কবে তাদের হস্তান্তর করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলে, টেলআভিভের এক স্কোয়ারে জড়ো হওয়া জিম্মিদের পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে, যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো জানায় যে মুক্ত জিম্মিরা এখন রেড ক্রসের তত্ত্বাবধানে। দেশজুড়ে হাজার হাজার ইসরায়েলি বড় পর্দায় সেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। পরে ইসরায়েল সরকার জিম্মিদের ঘরে ফেরার প্রথম ছবিগুলো প্রকাশ করে। প্রকাশিত ছবির মধ্যে একটি ছিল গালি ও জিভ বারম্যান নামের যমজ ভাইবোনের পুনর্মিলনের মুহূর্তের, যেখানে তাদের মুখে অবিশ্বাসের অভিব্যক্তি স্পষ্ট। আগে মুক্ত হওয়া কিছু জিম্মি জানান, ২৮ বছর বয়সী এই যমজদের গাজায় আলাদাভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। প্রকাশিত প্রাথমিক ছবিগুলোতে দেখা যায়, এবার মুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা জানুয়ারিতে মুক্ত হওয়া কিছু জিম্মির তুলনায় অপেক্ষাকৃত সুস্থ ও কম ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কারাগার থেকে শত শত বন্দি মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। তবে ওফার কারাগারের কাছে জমায়েত জনতার ওপর ইসরায়েলি পতাকাবাহী সাঁজোয়া যান থেকে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়। মাথার ওপর ড্রোন উড়তে থাকায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় অপেক্ষমাণ ভিড়। এ ঘটনার আগে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল একটি লিফলেট, যাতে সতর্ক করা হয়েছিল, যারা ‘সন্ত্রাসী সংগঠনকে’ সমর্থন করবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে। ঘটনাস্থলে থাকা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাংবাদিকরা ওই লিফলেটের কপি পান, তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও গাজার ভবিষ্যৎ এবং হামাসের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বড় প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে, তবুও এই বন্দি ও জিম্মি বিনিময় বিশ্বের কাছে এক আশাব্যঞ্জক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি হয়তো ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানের সম্ভাবনা তৈরি করছে। এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় গাজার বহু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে থাকা মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠানোর পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
হামাসের অস্ত্রসজ্জিত থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন রয়েছে- ট্রাম্প : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজায় হামাসের পুনরায় নতুন করে অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র জানে। তিনি দাবি করেছেন, এই গোষ্ঠীটিকে ‘কিছু সময়ের জন্য’ সশস্ত্র থাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ইসরায়েলে পৌঁছানোর আগে এয়ার ফোর্স ওয়ানে থাকা এক সাংবাদিক হামাসের ‘নতুন করে অস্ত্রসজ্জিত’ হওয়ার এবং নিজেদের ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে ট্রাম্প বলেন, কয়েক মাস ধরে চলা যুদ্ধের পর এই গোষ্ঠীটি গাজায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘তারা এ ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলেছে এবং আমরা তাদের কিছু সময়ের জন্য অনুমোদন দিয়েছি। আপনাকে বুঝতে হবে, তারা সম্ভবত ৬০ হাজার মানুষ হারিয়েছে। এটা অনেক বড় ক্ষতি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে গাজায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসা বাসিন্দারা যেন নিরাপদে পুনর্গঠন করতে পারেন। তিনি গাজাকে ‘আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংসপ্রাপ্ত’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, মানুষ নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসার সময় ‘অনেক খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে’।
ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণ
ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আজ একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ‘ঐতিহাসিক ভোর’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানান। তিনি তাকে ‘অসাধারণ সাহসী একজন মানুষ’ বলে অভিহিত করেন। এ সময় পার্লামেন্টে উপস্থিত সদস্যদের অনেকে নেতানিয়াহুর ডাকনাম ‘বিবি’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে আলোচনায় সহায়তাকারী আরব দেশগুলোকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তাদের একসঙ্গে কাজ করাটা ‘অবিশ্বাস্য এত বিজয়’। ট্রাম্প আরও বলেন, এখন ইসরায়েলের ‘স্বর্ণযুগ আসবে’ এবং এটি সমগ্র অঞ্চলের জন্যও ‘স্বর্ণযুগ’ হবে।
ট্রাম্পের বক্তব্যে বাধা, টেনেহিঁচড়ে বের করা হলো ইসরায়েলি এমপিকে : ট্রাম্পের বক্তব্যে বাধা দেওয়ায় টেনেহিঁচড়ে বের করা হলো একজন ইসরায়েলি এমপিকে। গতকল সোমবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ঘটেছে এই ঘটনা। জানা যায়, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন উপলক্ষে ইসরায়েল সফরে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সফরকালে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখেন তিনি। এসময় পার্লামেন্টের এক সদস্য তাতে বাধা দিলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দ্রুত তাকে বাইরে নিয়ে যান। ঘটনাটি দেখে ট্রাম্প ‘খুবই কার্যকর’ বলে মন্তব্য করেন এবং এরপর নিজের বক্তব্য চালিয়ে যান।
উড়োজাহাজ থেকে গাজার জিম্মি মুক্তির ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ দেখছেন ট্রাম্প!
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ অনুযায়ী ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এরইমধ্যে প্রথম ধাপে সাত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে গোষ্ঠীটি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসরায়েলের পথে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে থেকেই জিম্মি মুক্তির সরাসরি সম্প্রচার দেখছেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট জানিয়েছেন, ইসরায়েলের উদ্দেশে আকাশ পথে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এয়ার ফোর্স ওয়ানে বসেই গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির সরাসরি সম্প্রচার দেখছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের দেখা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের একটি ছবি শেয়ার করে তার ক্যাপশনে লেখেন, ‘ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে’।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে ওয়াশিংটন থেকে দীর্ঘ ফ্লাইট শেষে শিগগিরই ইসরায়েলের অবতরণ করবেন ট্রাম্প। সেখানে নেতানিয়াহু ও জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। এছাড়া ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটেও তার ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টার দিকে মিশরের উদ্দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রওনা হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, হামাসের মুক্তি দেওয়া সাতজন বন্দি এখন তাদের হেফাজতে রয়েছে এবং তারা ‘ইসরায়েলি ভূখণ্ডের পথে’ রয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যে সাত জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে তারা হলেন যমজ সন্তান গালি এবং জিভ বারম্যান, মাতান অ্যাংরেস্ট, অ্যালোন ওহেল, ওমরি মিরান, এইতান মোর ও গাই গিলবোয়া-দালাল। জর্ডানের আম্মান থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক নূর ওদেহ জানিয়েছেন, বন্দিদের ‘অবস্থা মোটামুটি ভালো’ এবং তারা ‘কোনো চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াই হেঁটে চলাফেরা করতে পারছেন’।
গাজাবাসীর জন্য ২ কোটি পাউন্ড সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য : যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মানুষের জন্য দুই কোটি পাউন্ড মানবিক সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য। এ অর্থ গাজাবাসীর জন্য সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবায় ব্যয় করা হবে। ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে আজ সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে আলোচনায় বসছেন বিশ্বনেতারা। আলোচনায় যোগ দিতে মিসরে গেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। সেখানেই সহায়তার বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।
এ অর্থায়ন চলতি বছর ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের দেওয়া ১১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ডের বৃহত্তর সহায়তা প্রতিশ্রুতির অংশ। ‘শান্তি পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাজ্য পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় সমর্থন করবে। উভয় পক্ষের মানুষ যাতে নিরাপদে তাদের জীবন পুনর্নির্মাণ করতে পারে’ কিয়ার স্টারমার এমনটাই বলতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। শারম আল শেখে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ ২০টির বেশি দেশের শীর্ষ নেতাদের এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও অংশ নিতে পারেন সম্মেলনে।
