এবার ‘শাহবাগ ব্লকেড’ পালনের ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

আন্দোলনকারী ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বলেন, দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন। এর মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আজ দুপুর ১২টায় শাহবাগ মোড় ব্লকেড কর্মসূচি পালনের জন্য রওনা দেবেন তারা।

গতকাল বিকেলে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হাইকোর্ট মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পরে সেখানেই অবস্থান নেন তারা। সেখান থেকে রাতে নতুন কর্মসূচির কথা জানান শিক্ষকনেতা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। এতে সারা দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন। কিন্তু সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তারা। লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছুড়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও সংহতি জানান।

শিক্ষক-কর্মচারীদের বাকি দুটি দাবি হলো- শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শতাংশের হিসাবে বাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিলে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ হারে দিলে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি, ১০ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি এবং ৫ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই হিসাব অনুযায়ী বাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়।

গতরাতে হাইকোর্টের মাজারগেটে অবস্থান ছেড়ে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে ফিরে যান এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। রাতে সেখানেই অবস্থান করবেন বলে জানান তারা।

এদিকে, শিক্ষকদের এই তিন দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি। পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘দেশ গড়ার কারিগর আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের দাবি মেনে নিন।’ এর আগে গত রোববার শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

গতকাল দুপুরে তৃতীয় দিনের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা বলছেন, তারা শিক্ষা উপদেষ্টার ‘আলোচনার প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে তারা হাসনাত আবদুল্লাহর অনুরোধে বিকাল চারটা পর্যন্ত সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পিছিয়েছেন। তারা বিকেল চারটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি করবেন। শিক্ষকনেতারা বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকালে শিক্ষা উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে আমরা আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ করার বিষয়ে অনড় আমরা।