ছাত্র সংসদ নির্বাচন

ছাত্রশিবির ২৪, ছাত্রদল ১

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে মোট ২৬টি পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে- প্যানেলটির প্রার্থীরা সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদসহ ২৪টি পদে বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে, মাত্র একটি পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে মৌখিকভাবে ফল প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি। তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সাঈদ বিন হাবিব জয়ী হয়েছেন ৮ হাজার ৩১ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাফায়াত হোসেন পেয়েছেন ২ হাজার ৭২৪ ভোট। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট, তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাজ্জাত হোছন মুন্না পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. শাওন পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৫ ভোট, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজাহারুল ইসলাম বিপ্লব পেয়েছেন ৪ হাজার ২৫৩ ভোট। সহ-খেলাধুলা সম্পাদক তামান্না মাহবুব প্রীতি পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২৯ ভোটে জয়।

সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক হারেজুল ইসলাম পেয়েছেন ৫ হাজার ৩২২ ভোট, সহ-সম্পাদক জিহাদ হোসাইন জিহাদ জয়ী হয়েছেন ৬ হাজার ৭৮১ ভোটে। দপ্তর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান সামান্য ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন — তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫৮ ভোট, আর প্রতিদ্বন্দ্বী তাহসান হাবিব পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৬ ভোট। সহ-দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৮২ ভোটে জয়। ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে নাহিমা আক্তার দ্বীপা পেয়েছেন ৬ হাজার ১৬৫ ভোট, তার নিকটতম সুমাইয়া সিকদার পেয়েছেন ৩ হাজার ৮২৬ ভোট। সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস রিতা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৩৬ ভোটে জয়। বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মাহবুবুর রহমান পেয়েছেন ৬ হাজার ১২৮ ভোট, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক তানভীর আঞ্জুম শোভন পেয়েছেন ৫ হাজার ৬২২ ভোট। সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে তাহসিনা রহমান নির্বাচিত হয়েছেন ৪ হাজার ২২৭ ভোটে। স্বাস্থ্য সম্পাদক আফনান হাসান ইমরান পেয়েছেন ৫ হাজার ১১ ভোট, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক মোনায়েম শরীফ পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৭৯ ভোট, আর ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সোহান জয়ী হয়েছেন ৪ হাজার ৯৮৭ ভোটে। যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে মো. ইসহাক ভূঁঞা পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৬৩ ভোট, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ফজলে রাব্বি তৌহিদ সর্বাধিক ৭ হাজার ৩৭৬ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৮৫ ভোট, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক ওবায়দুল সালমানও বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন- জান্নাতুল ফেরদৌস সানজিদা (৬,১১৫ ভোট), আদনান শরীফ (৪,৭৮৯ ভোট), আকাশ দাশ (৪,৪১৫ ভোট), সালমান ফারসী (৪,৪১২ ভোট) এবং সোহানুর রহমান (৪,৩১২ ভোট)। এবারের চাকসু নির্বাচনে ২৬টি পদে মোট ৪১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২৭ হাজার ৫১৬ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন।

শিবিরের নিরঙ্কুশ জয় : দীর্ঘ ৪৪ বছরের অপেক্ষার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (চাকসু) ইসলামী ছাত্রশিবির নেতৃত্বে ফিরে এসেছে। সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ ভিপি ও জিএসসহ ২৪টি পদে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি সংগঠনের জয় নয়, বরং দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রায় প্রতিফলিত করেছে। নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, এই নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি। সবাই বিজয়ী হয়েছেন। আমরা নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীকে সৃজনশীল চিন্তা প্রকাশ করতে দেখেছি। শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, যে দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর দিয়েছেন, তা আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করব। নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সাঈদ বিন হাবিব বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হলো ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। ভিপি পদে মো. ইব্রাহিম হোসেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট। জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব ৮ হাজার ৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট। চাকসুর ২৬টি পদের মধ্যে ছাত্রদল প্যানেল থেকে একমাত্র জয় পেয়েছেন আইয়ুবুর রহমান। সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে তামান্না মাহবুব জয়ী হয়েছেন। ছাত্রশিবির সর্বশেষ জয় পেয়েছিল ১৯৮১ সালের নির্বাচনে। এরপর ৪৪ বছর ধরে ক্যাম্পাসে তাদের প্রকাশ্য কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দীর্ঘ নীরবতার পর গত বছরের আগস্টে তারা রাজনীতিতে ফিরে আসে এবং মাত্র এক বছরের মাথায় চাকসু নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। ১৯৭০ সাল থেকে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র সাতবার। ২৭ হাজার ৫১৬ জন ভোটারের মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের রায় প্রদান করেছেন। পাঁচটি অনুষদ ভবনের ৭০০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছে।