সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে সন্তুষ্ট করছে বিএনপি
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল ইসলাম অমর

চলতি মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সারা দেশের শত শত মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, মনোনয়নের জন্য চূড়ান্ত করতে হাইকমান্ড দেখছে তাদের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক শক্তি ও জয়ের সম্ভাবনা। প্রাথমিক খসড়া তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সারা দেশের ৯টি বিভাগকে ভাগ করে নিয়ে আগ্রহীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এই তালিকা প্রণয়নের কাজ করছেন দলের শীর্ষ পাঁচ নেতা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ উচ্চপর্যায়ের এই টিমে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির আরও তিনজন নেতা।
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতা ও সাক্ষাৎকারদাতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী নির্ধারণের প্রাথমিক খসড়া তালিকার কাজ শেষের দিকে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেট ও খুলনা বিভাগ, নজরুল ইসলাম খান রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন কুমিল্লা ও বরিশাল বিভাগ এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ ময়মনসিংহ বিভাগের আগ্রহী প্রার্থীদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে খসড়া তালিকা প্রস্তুত করছেন।
সাক্ষাৎকার দেওয়া কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, আলোচনায় প্রত্যেক আসনের আগ্রহীদের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কথা বলেছেন। জানাচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা। তবে খসড়া তালিকা প্রণয়ন করলেও চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণায় ভিন্ন কৌশল নেবে বিএনপি। দলটি এখনই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করবে না।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রার্থীদেরকে দলের নির্দেশনা জানিয়ে উল্লেখ করেছেন, প্রত্যেক আসনে একজনই চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন। এক্ষেত্রে আগ্রহীরা যেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকেও মনোযোগী হন। বিশেষ করে, আগামী নির্বাচন দলের দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জে পরিণত হওয়ায়, বিদ্রোহী প্রার্থিতা নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারেক রহমান।
গত কয়েকদিনে সাক্ষাৎকার দেওয়া একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, আগ্রহীর সংখ্যা একাধিক হলেও দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাকে বিজয়ী করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আসনের দাবিদার শক্ত প্রার্থীদেরকে পরবর্তী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, সরকারে আসার সুযোগ হলে নতুন দায়িত্ব প্রদানসহ নানা ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর তারেক রহমান দলের নির্বাচনী অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, আমরা প্রতিটি এলাকা থেকে এমন একজনকে দলীয় মনোনয়ন দিতে চাই, যিনি স্থানীয় সমস্যা বোঝেন এবং জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিএনপি প্রায় অর্ধেক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে। ‘৩০০ আসনের মধ্যে প্রায় ১৫০টিতে একক প্রার্থী দিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে বাকিগুলোতে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া একটু জটিল।’ তিনি বলেন, ‘কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী আছে। সেখানে সিনিয়র নেতারা ওই প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন।’
বিদ্রোহী প্রার্থী যেন কেউ না হয়, সে জন্য মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের বিকল্প পদের আশ্বাস দিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
এ প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, এটা তো খুবই স্বাভাবিক। দিজ ইজ গুড। বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, একের অধিক প্রার্থী থাকবে, নিজেদের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা, আগ্রহ, প্রতিযোগিতা থাকাটা খুব স্বাভাবিক। এখন তাদের মধ্য দিয়ে যাকে ফিট মনে করা হয়, কে উইন করতে পারেন, গ্রহণযোগ্যতা যার বেশি, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। অন্যরা তাকে সহযোগিতা করবেন।
তারেক রহমানসহ সিনিয়র পাঁচ নেতার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ সেল প্রাথমিকভাবে আলোচনার ভিত্তিতে একটি খসড়া তালিকা তৈরি করবেন। এই তালিকা স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার পর চূড়ান্ত করা হবে, বলে জানান কমিটির একজন নেতা। তিনি উল্লেখ করেন, অনেককেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সরাসরি সবুজ সংকেত দিয়েছেন। প্রার্থী নির্ধারণেও থাকবে নানা কৌশল। কয়েক স্তরে সাজানো হবে তালিকা। একটি তালিকা হবে দলের আগ্রহীদের সমন্বয়ে।
এরপর স্থায়ী কমিটিতে যুক্তি-তর্ক শেষে হবে যোগ-বিয়োজন। এরপর যুগপতে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টনের আলোচনা শেষে করা হবে আরেকটি তালিকা।
প্রথম দিকে আগ্রহীদের নাম ও জটিল আসনগুলোতে একাধিক প্রার্থীর নাম রাখবে বিএনপি। বিশেষ করে শেষ মুহূর্তে কাকে বাদ দেওয়া হবে, সেটি নির্ভর করবে তারেক রহমানের ওপর। তিনি নির্বাচনি কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ঢাকার আসনগুলোতে প্রার্থী নির্ধারণে তারেক রহমান নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জানিয়ে দেন।
দলের নেতৃত্বের দীর্ঘদিনের অনুশীলনের কথাও উল্লেখ করেন স্থায়ী কমিটির এই নেতা। তিনি মনে করেন, বিগত সময়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হতো। এ বছরও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারেক রহমানকেই দল দায়িত্ব দেবে। এক্ষেত্রে নতুনত্ব আসতে পারে বেগম জিয়ার কোনও বিশেষ সুপারিশের মাধ্যমে। কোনও কোনও আসনে তিনি নিজে নিজের কোনও পছন্দের কাউকেও মনোনয়ন দিতে পারেন।
