মাঠে থাকবে এক লাখ সেনা, দেড় লাখ পুলিশ
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে দেড় লাখ পুলিশ। এছাড়া সারা দেশে দায়িত্ব পালন করবে সাড়ে ৫ লাখ আনসার।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান ইসি সচিব।
সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, মহাপুলিশ পরিদর্শক বাহারুল আলম, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, আনসার, র্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই, এনটিএমসি, সিআইডি এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)-এর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছেন। সভা শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়।
আখতার আহমেদ বলেন, সবাই অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনে কোনো উদ্বেগ নেই। সেনাবাহিনী বর্তমানে যেভাবে আছে অর্থাৎ ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারেই থাকবে। এছাড়া আরপিও অনুযায়ী যেভাবে প্রস্তাব এসেছে সেভাবেও মোতায়েন হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ১ লাখ সেনা সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশ কাজ করবে দেড় লাখ। আরও বেশি সদস্য আসবে আনসার থেকে। সর্বমোট প্রায় ৬ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
আগে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পাঁচ দিনের জন্য মোতায়েন করা হত। এবার আট দিনের জন্য মোতায়েনের প্রস্তাবনা এসেছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব হলো, ভোটের আগের তিনদিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরে চারদিন মোতায়েনের, এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখব।’ লুট হওয়া অস্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লুট হওয়া ৮৫ শতাংশ রিকভারি হয়েছে, বাকিটা হয়নি কাজ চলমান।
তিনি জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সবগুলো বাহিনী তাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় নিজস্ব কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এতে দু’টি সুবিধা পাওয়া যাবে, একটি হলো- তারা নিজস্ব বাহিনীর প্রয়োজনে এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পাশাপাশি নির্বাচনকে আরও অবাধ, সুষ্ঠু করার জন্য যে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তারা সেটি করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো শঙ্কা প্রকাশ করেনি। তবে নিরাপত্তা পরিকল্পনার অনেক কিছু নির্বাচনে বাজেটের উপর নির্ভর করবে।
যে সব কারণে নির্বাচনে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ইসির : নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইসির আনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভার কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ড্রোন একটি আধুনিক প্রযুক্তি হলেও নির্বাচনকালীন সময়ে এর ব্যবহার নানা ধরনের ঝুঁকি ও অসুবিধা তৈরি করতে পারে।
ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার চারটি প্রধান কারণ হলো : গোপনীয়তা লঙ্ঘন, নিরাপত্তার ঝুঁকি, আইন ও বিধি লঙ্ঘন এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি। ড্রোন ব্যবহার করে ভোটারদের ব্যক্তিগত স্থান, অফিস, কিংবা ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব যা ভোটের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে লঙ্ঘন করতে পারে। অননুমোদিত ড্রোন ব্যবহার করে বিপজ্জনক বস্তু বা বিস্ফোরক বহন করা সম্ভব যা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও জনসমাগমের ওপর হামলার ঝুঁকি তৈরি করে। ড্রোন পরিচালনায় কিছু আইনগত নিয়ম রয়েছে, কিন্তু অনেকেই তা অনুসরণ করে না। ফলে নির্বাচনি এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে ড্রোন উড্ডয়ন আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হতে পারে। এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে ভোটদানের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা অপব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে যা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে।
কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তিনটি পর্যায়ে কাজ করে থাকে। তফসিল ঘোষণার পূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাতে নির্বাচনপূর্ব পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে। অপরাধী ও দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত এই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। যাতে প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাতে পারে এবং ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পারে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আমর্ড পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ভোটগ্রহণ শেষে সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা রোধে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনি তদন্ত কমিটি সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।ইসি জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যেই অগ্রসর পর্যায়ে রয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, নির্বাচনকালীন সময়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন।
