শহিদ মিনারে ‘আমরণ অনশনে’ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দাবি আদায়ে টানা ৯ দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের দাবির বিষয়ে গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি অনুবিভাগ থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, সরকারের বাজেট সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা) প্রদান করা হবে। কিন্তু সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘অপর্যাপ্ত ও অবমাননাকর’ আখ্যা দিয়ে তারা গতকাল সোমবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ঘুরে দেখা গেছে, শহিদ মিনার এলাকায় শিক্ষকদের বড় একটা অংশ অবস্থান করছেন। তাদের কেউ স্লোগান দিচ্ছেন, আবার কেউ নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করছেন। শিক্ষক শামুসুল রহমান মিঞা বলেন, আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে সোচ্চার। আমরা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব। গত রোববার সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে যে ঘোষণা দিয়েছে, তা আমাদের জন্য খুবই নগন্য ও অপমানজনক। আমরা আর কোনো কথা বলতে যাব না। আমরা সোমবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছি। আমাদের এই কর্মসূচি চলমান থাকবে।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ৫ অক্টোবর ঘোষণাটি প্রকাশ্যে আসার পর শিক্ষক-কর্মচারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাড়িভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায়।

রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘ভুখা মিছিল’ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়। শহিদ মিনার থেকে শিক্ষা ভবনের দিকে যাত্রা শুরু করলে হাইকোর্টের মাজার গেটে পুলিশ ও বিজিবির বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শিক্ষক-কর্মচারীরা শহিদ মিনারে ফিরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সন্ধ্যায় সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

শিক্ষক আন্দোলনে সংহতি, বিএনপি বলল ৫ শতাংশ ‘এনাফ নয়’ : মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া বাড়ানোসহ তিন দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি দলের পক্ষ থেকে এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।’ সোমবার আন্দোলনরত শিক্ষক- কর্মচারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান শহীদ উদ্দীন চৌধুরী। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যেভাবে গত নয় দিন প্রখর রোদে আপনারা আন্দোলন করছেন, এটা তো করার কথা ছিল না। আমরা অনেক সময় অনেকভাবে দেখেছি, শিক্ষকদের বারবার রাস্তায় আসতে হয়। আন্দোলন করতে হয়। আবেদন করতে হয়। সেই কেন-এর উত্তরটা দিতে যেয়ে আমরা আপনাদের বলছি, আগামী দিনে আর যাতে আন্দোলন না করতে হয়, সে জন্য ওই পূর্ণ জাতীয়করণের কথাটাই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।’ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়ে শহিদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এই প্রতিশ্রুতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি শিক্ষক- কর্মচারীদের আন্দোলনে বিএনপির পক্ষ থেকে সংহতির কথাও জানান। শিক্ষক-কর্মচারীদের উদ্দেশে শহিদ উদ্দীন চৌধুরী আরও বলেন, ‘আপনাদের দাবি অন্তর্বর্তী সরকার এর মধ্যে মেনে নিয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাবি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছানোর জন্য, ২০ পারসেন্টের যে দাবি, সেটা এখনো হয়তো আপনারা পান নাই। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।’

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। কোনো বিশৃঙ্খলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন দেলোয়ার হোসেন আজিজী। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিবর্তন হবে, কিন্তু শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। যদি বিকেলের মধ্যে আমাদের দাবি মানা হয়, তাহলে রাতের মধ্যে আমরা শহীদ মিনার ছেড়ে চলে যাব।’ মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিৎসাভাতা ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ১২ অক্টোবর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।