কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি জানাল জামায়াতও

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে কাদের কাদের নিয়ে এই আপত্তি, তাদের নাম প্রকাশ করেনি দলটি।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা উপদেষ্টা তাদের ব্যাপারে বলেছি, সকলের ব্যাপারে নয়। আমরা বলেছি, কিছু কিছু লোক আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) বিভ্রান্ত করে। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু আপনার কিছু লোক আপনার পাশে আপনাকে বিভ্রান্ত করে এবং ওরা কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করে আমরা মনে করি। তাদেরকে, তাদের ব্যাপারে আপনাকে হুঁশিয়ার থাকা দরকার।’

একদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপিও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। নাম উল্লেখ না করে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিতে প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছিল দলটি।

বৈঠকে কোনো উপদেষ্টার অপসারণের দাবি তুলেছেন কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন দৃষ্টি আকর্ষণ করছি... আমরা প্রথমদিন যাইয়াই অপসারণ চাইনি। আমরা বলছি, আমরা এখন দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা সময় দিচ্ছি। আপনাকেও শুনতে দিচ্ছি। যদি না হয় তাহলে আমরা যা যা করার, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা চিন্তা করব।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো দাবি তোলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে এখনও সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হচ্ছে। তার দল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় আছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোনো ব্যত্যয় না হলে অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি। জামায়াতে ইসলামীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, এমন প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলছেন যে উনি এগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছেন এবং যেটা করতে হবে, সেটি উনি করবেন, ইনশা আল্লাহ।’

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চাইল জামায়াত : প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, নভেম্বর মাসের শেষ দিকে গণভোট এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য ‘এক্সট্রা জুডিশিয়াল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ জারির বিষয়ে আলোচনা হয় বলেও সাংবাদিকদের জানান আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। বৈঠকে তিনি জামায়াতে ইসলামীর চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বহু দলের পরিশ্রমে আমরা যে ঐকমত্যে পৌঁছেছি তাতে অনেকে সই করেছে। এখন প্রয়োজন জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে আদেশ কে দেবেন এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। আমরা চাই এটা প্রধান উপদেষ্টা দেবেন। আইনগত ব্যত্যয় না ঘটলে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সাংবাধিনাকি আদেশ জারি করে জুলাই সনদের আইনের ভিত্তি ঘোষণা দিতে পারেন।’ তাহের আরও বলেন, ‘গণভোটের ব্যাপারে বলেছি। বিএনপিও গণভোটে রাজি হয়েছে। তবে বিএনপি জটিলতা তৈরি করেছে। তারা চাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হোক। কিন্ত গণভোট হলো সংস্কারের সঙ্গে জড়িত, এটাকে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে মেলানো যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি অজুহাত দেখাচ্ছে গণভোটের সময় নেই। কিন্ত গণভোটের যথেষ্ট সময় আছে। নভেম্বরেই সেটা করা যাবে। এই গণভোট হলেই তাহলে জনগণের সিদ্ধান্ত নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে, নয়তো আগের মতোই হবে।’

আব্দুল্লাহ তাহের বলেন, ‘আমরা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে এই পরিশ্রম প-শ্রম হবে। ড.ইউনূস এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। একটা আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানান।’