বায়বীয় ধারণা থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়

রিভিউ শুনানি শেষে আইনজীবী

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়া বলেছেন, বিচারপতি খায়রুল হক বলেছিলেন- ‘অনির্বাচিত সরকার সাংবিধানিক নয়, তাই বাতিল করা হয়েছে’। কোনো নির্বাচন ছাড়াই বিগত ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এসব নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সে সময় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল না। গুম-খুন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে এমনটি হতো না। এক বায়বীয় ধারণা থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয় বলেও মনে করেন তিনি।

শরীফ ভূইয়া বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেহেতু বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে গঠন হয়েছে, তাই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে এ সরকারের অধীনে হবে। এর পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। গত মঙ্গলবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনের প্রথম দিনের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট কারিশমা জাহানসহ অন্য আইনজীবীরা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করেন। পরবর্তী শুনানির জন্য গতকাল বুধবার দিন রাখা হয়েছিলো। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. বদরুদ্দোজা বাদল ও কায়সার কামাল এবং জামায়াতের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের শরীফ ভূইয়া বলেন, সাংবিধানিক রীতিনীতির ভুল প্রয়োগের কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই রায়ে দেশের বাস্তবতা বিবেচনা করা হয়নি। যার কারণে তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে একতরফা। এক হাজার মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। আশা করি শুনানির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসবে। তিনি বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব দলের সম্মতি ছিল। বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর ভিত্তিতেই আদালত এই আইন পাস হয়। অথচ বিগত দিনে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা না দিয়েই এক ধরনের বায়বীয় আদেশে এ সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। সাড়ে ৭০০ পৃষ্ঠার এ রায় রায় ছিল অপ্রয়োজনীয় ও অপচয়। আমরা মনে করি এটি ছিল দেশের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

শরীফ ভূইয়া আরও বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক বলেছিলেন- অনির্বাচিত সরকার সাংবিধানিক নয়, তাই বাতিল করা হয়েছে। অথচ বিগত সরকারের অধীনে অনির্বাচিত অনেক উপদেষ্টা ছিলেন। যারা টেকনোক্যাট মন্ত্রী হয়ে পদমর্যাদা থেকেও বেশি প্রভাব খাটিয়েছেন। অপরদিকে নির্বাচিত সরকারের অধীনে বিগত ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সেই সময় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল না। গুম-খুন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে এমনটি হতো না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ১৪ বছর আগে আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে (৪:৩) রায় দিয়েছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষমতায়, আদালতের রায়ের পর তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী এই সরকারব্যবস্থা বাদ দেয় শাসনতন্ত্র থেকে।

আইনজীবী শরীফ ভূইয়া বলেন, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার পৃথককরণ সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বা প্রতিনিধিত্বমূলক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলা যায় না।