
আগের সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে ধরাশয়ী হওয়ার পর সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। ফলে চারিদিক থেকে ধেয়ে আসতে থাকে সমালোচনার তীর। তাই পাহাড় সমাপ চাপ নিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজরা ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ে শুরুটা দারুণ করে বাংলাদেশ দল। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হতাশায় পুড়তে হয় স্বাগতিকদের। নাটকীয় টাইয়ের পর সুপার ওভারে হার মানতে হয় লাল সবুজ দলকে। কিন্তু সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে সফরকারী দলকে চেপে ধরে টাইগাররা। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসানের ঝলকে পাওয়া বিশাল পুঁজি নিয়ে স্পিনাররা কাজ সেরেছেন অনায়াসে। খেলা শেষ হয়ে যায় প্রায় ২০ ওভার আগেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছে ১৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। রানের দিক থেকে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় জয়। আগে ব্যাট করে সৌম্যের ৮৬ বলে ৯১ ও সাইফের ৭২ বলে ৮০ রানে ভর করে ২৯৬ রান তুলে বাংলাদেশ। জবাবে নাসুম আহমেদ, তানভির ইসলামদের স্পিনে হাবুডুবু খেয়ে ক্যারিবিয়ানরা গুঁটিয়ে যায় স্রেফ ১১৭ রানে। চারজন স্পিনার এত ভালো বল করেছেন যে একমাত্র পেসার হিসেবে খেলা মোস্তাফিজুর রহমানকে এক ওভারও বল করতে হয়নি। কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমন অভিজ্ঞতা তার প্রথম। সিরিজ জিতলেও ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে দশেই থাকছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে ৯ নম্বরে উঠতে পারতেন মেহেদী হাসান মিরাজরা।
মন্থর ও টার্নিং উইকেটে ২৯৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় পঞ্চম ওভারে নাসুমের স্পিনে আঘাত পায় সফরকারীরা। ওপেনার আলিক আথানেজকে এলবিডব্লিউতে ফেরান নাসুম। সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করে কাটা বাঁহাতি ব্যাটার। তিনে নামা আকিম আগুস্তকে ৩ বলের বেশি টিকতে দেননি নাসুম, তিনিও হয়েছেন এলবিডব্লিউ। আরেক ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ১৭ বলে ১৮ করে নাসুমের বলে বোল্ড হয়ে ফিরলে তলানির দিকে হাঁটতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক শেই হোপ দলটিকে বাঁচাতে পারতেন। তানভিরের বলে তিনি অনেকটা উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে বিদায় নিলে ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে ক্যারিবিয়ানরা। সেই চাপ ঝেড়ে আর দাঁড়াতে পারেনি তারা। বিস্ফোরক ব্যাটার শেরফাইন রাদারফোর্ড পুরো সিরিজের পর এদিনও হন ব্যর্থ, রোস্টন চেজ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। দুজনকেই ছাঁটেন রিশাদ হোসেন।
শেষ দিকে আকিল হোসেন ১৫ বলে ২৭ করে কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছেন। ১১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফল বোলার নাসুম। রিশাদ ৩ উইকেট পান ৫৪ রান দিয়ে। দুপুরে টানা তৃতীয় টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়া বাংলাদেশের ইনিংসের গল্পটা সৌম্য-সাইফকে ঘিরে। আগের দুই ম্যাচের ঠিক বিপরীতে গিয়ে দারুণ শুরু আনেন তারা। উইকেটে টার্ন-বাউন্স থাকলেও দুজনে থিতু হয়ে যান দ্রুত। পরে চার-ছক্কায় রান বাড়াতে থাকেন অনায়াসে। মাঝের ওভারে স্ট্রাইক রোটেশনও ছিলো দেখার মতন।
রানে-বলে ফিফটি স্পর্শ করে সৌম্য আরও হাত খুলেন, সাইফ তার ছক্কা মারার দক্ষতার ছাপ দেখাতে থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটির রেকর্ড হয়ে যায়। ২৫.২ ওভারের ১৭৬ রানের জুটিতে রেকর্ড হয়েছে আরও। মিরপুরের মাঠ দেখেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি, একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়েও এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি। তবে ওপেনারদের ঠিক বিপরীত খেলেছেন বাকিরা। পরের ২৫ ওভারে বাংলাদেশ যোগ করে ১২০ রান, হারায় ৭ উইকেট। বল নরম হয়ে এলে মিরপুরের এই পিচে রান করা যে কত কঠিন দেখা যায় প্রত্যেকের খেলায়। ইনিংস বিরতিতেই ম্যাচের গতিপথ আসলে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি ভালো শুরু পেত তাহলে হয়ত লড়াই জমতে পারত। কিন্তু শুরুর দশ ওভারেই দলটি ম্যাচ থেকে ছিটকে পরে।
বাংলাদেশের স্পিনের সামনে স্রেফ মুখ থুবড়ে পড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। নতুন বলে নাসুম আহমেদের কোনো জবাব খুঁজে পাননি তারা। প্রথম তিনটি উইকেটই নেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এরপর তানভির ইসলাম ও রিশাদ হোসেনের ছোবলে ভেঙে পড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। শেষ দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন মিরাজ। নেতৃত্ব নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে থাকা অলরাউন্ডার অধিনায়ক হিসেবে পেলেন প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার উঠে সৌম্য সরকারের হাতে। অবধারিতভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজ হন রিশাদ হোসেন। দুই দল এখন লড়বে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের সিরিজটি শুরু সোমবার।