ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন খালেদা জিয়া
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই মামলায় কারাগারে যাওয়ার আগে সবশেষ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে রাজনীতির মাঠে দেখা গিয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর পটপরিবর্তন, নানা ঘটনা আর অসুস্থতায় রাজনীতির মাঠ থেকে অনেকটা আড়ালে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর আবারও আলোচনায় আসেন খালেদা জিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেত্রী অংশ নেবেন কি না। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, এটা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের ওপর। যদি তার স্বাস্থ্য ভালো থাকে তাহলে নিশ্চয়ই অংশ নেবেন। আর যদি ভালো না থাকেন তাহলে ডাক্তারদের পরামর্শে ব্যবস্থা নেবেন।’ রাজনীতির মাঠে বিএনপি নেত্রীর অনুপস্থিতে ২০১৮ সাল থেকেই দলের হাল ধরেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলটি ভোটে জয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এবং তিনি যদি নিজেকে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য তিনি ফিট, তাহলে অবশ্যই তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই হবেন প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’
দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইশতেহারের ওপর কাজ চলছে আমাদের। ইশতেহারে অনেক কিছুই থাকে, এর মধ্যে ৩১ দফা মোল্ড থাকবে। দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যেন শক্তিশালী হয়, সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়টিও ইশতেহারে অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে। দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে শক্ত অবস্থানে নেয়াই হবে বিএনপির প্রধান কাজ।’
তফসিলের আগে বা পরে নয়, কয়েকটি সমস্যা দূর হলে শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
নভেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন বলে অনেক দিন ধরে শোনা গেলেও ঠিক কোন সময় তিনি ফিরবেন তার দিনক্ষণ জানা যাচ্ছিল না। অবশেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই দলের নির্বাহী প্রধান দেশে ফিরবেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ এই কথা জানান। ২০০৭ সালে এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় কারামুক্ত হয়ে সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার অনুপস্থিতিতে পাঁচ মামলায় সাজা দেওয়া হয়। এছাড়াও দায়ের করা হয় শতাধিক মামলা। তার বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। তারেক রহমান চলে আসেন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। সব মামলা থেকে এরইমধ্যে খালাস পেয়েছেন। তবে এক বছরের বেশি সময় পরও তিনি দেশে ফিরেননি।
সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান জানান তিনি শিগগির দেশে ফিরবেন। এরপর থেকেই তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারেন, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইসহ বিএনপির মূল নেতৃত্ব তিনিই দেবেন। নিজে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও তারেক রহমান এরইমধ্যে জানিয়েছেন। তবে বিএনপি বিজয়ী হলে তারেক রহমান নাকি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন- সেটা এখনও পরিষ্কার হয়নি। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়া সুস্থ ও সক্ষম হলে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। না হলে তারেক রহমান হবেন সেটা প্রায় চূড়ান্ত।
চলতি মাসেই ২০০ প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেবে বিএনপি : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, চলতি মাসেই ২০০ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এনসিপির সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছে। তবে বিএনপি আর এনসিপি জোটভুক্ত হবে কি না, সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে। যদিও জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জোটভুক্ত হলে দলগুলো অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারতেন। এটি পরিবর্তনে সম্মতি ছিল অধিকাংশ দলের। আমরা আশ্বস্ত ছিলাম, কিন্তু যেভাবে আরপিও পাস হলো- তাতে আকারে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না।
আগামী নভেম্বরের মধ্যেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
এদিকে, বিএনপির হাইকমান্ড বলছে এবার শুধুই পরিচিতি দিয়ে মনোনয়ন মিলবে না। প্রার্থী হতে হলে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় এবং রাজনৈতিক ত্যাগ ও তিতিক্ষা থাকতে হবে। কোনোনোভাবেই বিতর্কিত, নিষ্ক্রিয় কিংবা সুযোগসন্ধানীরা যেন প্রার্থী হতে না পারেন, সেজন্যই এমন প্রক্রিয়ায় তারা হাঁটছেন।
নির্বাচন করতে আগ্রহী এক নেতা বলেন, ‘দল যেটা ভালো মনে করবে, সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তা মেনে নেব। আমরা চাই আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে যাতে কেউ মনোনয়ন পান। আমরা বিশ্বাস করি, দল জনপ্রিয়, ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বেছে নেবে।’
৫০টির বেশি আসনে একক প্রার্থী থাকায় সেগুলো নিয়ে অনেকটা নির্ভার বিএনপি। তবে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন এমন আসনের নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। একক প্রার্থী নিশ্চিতের টার্গেট নিয়ে কাজ করা নেতারা ডাক পাওয়াদের দিচ্ছেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বার্তা। কোনোভাবেই দল মনোনীত প্রার্থীর বাইরে যাওয়া যাবে না- এমন কড়া নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
