
পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করলে যুক্তরাষ্ট্রের সব সমর্থন হারাবে তেলআবিব। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এমনই কঠোর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বলে পলিটিকো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি দুইজন সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ভ্যান্স ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা ও নীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হতাশা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।
সূত্র জানায়, গত রোববার ইসরায়েলি হামলায় ৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ইসরায়েল এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
একজন হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তা পলিটিকোকে বলেন, যা প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, সেটিই প্রেসিডেন্টের প্রকৃত অনুভূতি প্রকাশ করে। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ সংক্রান্ত ইসরায়েলি সংসদের নতুন বিলের সমালোচনা করেছেন।
গাজা চুক্তি নষ্ট করলে ট্রাম্পের রোষানলে পড়বেন নেতানিয়াহু - মার্কিন কর্মকর্তা : ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নষ্ট করলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন, এক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা। মূলত একদিন আগেই ইসরায়েলি পার্লামেন্ট পশ্চিম তীর সংযুক্তকরণ তথা দখল সংক্রান্ত দুটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে এবং এরপরই ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হলো। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর একটি অনুষ্ঠানে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস-এর প্রতিবেদক বারাক রাভিদ বলেন, ওই মার্কিন কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন- ‘নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অত্যন্ত সূক্ষ্ম এক ভারসাম্যের দড়িতে হাঁটছেন। যদি তিনি এভাবে চলতে থাকেন, তাহলে গাজা চুক্তি নষ্ট করে ফেলবেন, আর যদি তিনি চুক্তি নষ্ট করেন, তাহলে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে একদমই ছাড়বেন না।’
মার্কিন ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেট গত বুধবার দখলকৃত পশ্চিম তীরের অংশ সংযুক্তকরণ সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাবনার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বলে শোনার পর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স হতবাক হন। ইসরায়েলে কূটনৈতিক সফর শেষে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন তিনি।
এ বিষয়ে তেল আবিবের বেন গুরিয়ন এয়ারপোর্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভ্যান্স বলেন, ‘যদি এটি রাজনৈতিক নাটক হয়, তবে এটি অত্যন্ত বোকামি। ব্যক্তিগতভাবে আমি এতে ক্ষুব্ধ। ‘একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তাও চ্যানেল ১২-কে জানান, পার্লামেন্টে এই ভোটাভুটির কারণে যে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে তা নেতানিয়াহুকে কয়েক দিন আগেই সতর্ক করা হয়েছিল; কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।
প্রসঙ্গত, নেসেট বুধবার পশ্চিম তীরের কিছু অংশ সংযুক্ত করার দুটি বিল প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দেয়। এগুলো আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার আগে আরও তিন ধাপে পাস হতে হবে।
মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রকাশ্য আপত্তি সত্ত্বেও এই ভোটাভুটি হয়। এর আগে গত মাসে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে পশ্চিম তীর দখলের বিল স্থগিত করলেন নেতানিয়াহু : যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার পর ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে পাস হওয়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের দখল সংক্রান্ত বিলের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন দখলদার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ এক প্রতিবেদনে বলছে, ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটের চেয়ারম্যান ওফির কাৎজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত যাতে (পশ্চিম তীরের) জুদেয়া ও সামারিয়ার সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিলটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’
এর আগে গত বুধবার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের দুই এলাকা জুদেয়া ও সামারিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে বিল পাস হয় নেসেটে। বিলটি উত্থাপনের পর ১২০ আসনের নেসেটে এটি মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাস হয়। বিলটির পক্ষে ভোট পড়েছে ২৫টি, বিপক্ষে পড়ে ২৪টি। বাকি ৭১ জন ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন, যার মধ্যে নেতানিয়াহু নিজে এবং লিকুদ পার্টির বেশ কয়েকজন এমপি আছেন। তবে জোট সরকারের অংশ হিসেবে থাকা জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচের দল এর পক্ষে ভোট দেয়।
এদিকে ইসরায়েলের পার্লামেন্টারি বিধি অনুসারে, আইনে পরিণত হতে বিলটির চার দফা ভোটাভুটি পেরোতে হবে। পরবর্তী ধাপে বিলটি নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে পাঠানোর কথা। তবে নেতানিয়াহু নির্দেশ জারি করার পর আপাতত বিলটির ওপর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ভোট হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের জুদেয়া ও সামারিয়া দখল করেছিল ইসরায়েল। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরের এই দুই ভূখণ্ড ইসরায়েলের দখলেই আছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের দৃষ্টিতে পশ্চিম তীর ইসরায়েলের দখলদারির আওতায় থাকা একটি অঞ্চল। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) স্পষ্টভাবে রায় দিয়েছিল যে, পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের অন্য ভূখণ্ডে ইসরায়েলের উপস্থিতি অবৈধ। রায়ে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব ইসরায়েলকে সেসব অঞ্চল থেকে সেনা ও অবৈধ বসতি প্রত্যাহার করতে হবে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার প্রশ্নই আসে না। আমি এ বিষয়ে আরব দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তারা আমাদের বড় সমর্থন দিয়েছে। এমন কিছু ঘটলে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সব সমর্থন হারাবে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের উচিত এখন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনায় মনোযোগ দেওয়া, নতুন দখল নয়।’
অন্যদিকে বিল অনুমোদনের সময়ই ইসরায়েলে অবস্থান করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। বৃহস্পতিবার তিনি তেলআবিবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসরায়েল পশ্চিম তীর নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিতেও এমন কোনো বিষয় নেই। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা এই পদক্ষেপ সমর্থন করব না।’
এছাড়াও বিলটি পাস হওয়ার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘তারা (ইসরায়েল) নেসেটে একটি বিল পাস করেছে, আমাদের পক্ষ থেকে এই বিলকে কোনো সমর্থন দেওয়া হবে না। কারণ আমরা এটিকে গাজায় শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছি।’
পশ্চিমতীর দখলে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বিল পাস, ১৫ দেশের নিন্দা : সম্প্রতি ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার বিল প্রথম ধাপে পাস করেছে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট। এক বিবৃতিতে তেল আবিবের এ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আরব ও ইসলামিক বিশ্বের ১৫টি দেশ। বিবৃতিতে নিন্দা জানানো দেশগুলো হলো- কাতার, জর্ডানের হাশেমি রাজতন্ত্র, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, জিবুতি, সৌদি আরব, ওমান, গাম্বিয়া, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মিশর, নাইজেরিয়া, আরব লীগের সাধারণ সচিবালয় এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)।
বিবৃতিতে তারা নেসেটের এই দুটি প্রস্তাব অনুমোদনকে ‘দখলকৃত পশ্চিম তীর এবং অবৈধ ইসরায়েলি উপনিবেশগুলোর ওপর তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার প্রকাশ্য প্রচেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে একে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশনগুলোর (বিশেষ করে ২৩৩৪ নং প্রস্তাব) নগ্ন লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। এই রেজোলিউশনে ১৯৬৭ সাল থেকে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে (আল-কুদসসহ) ইসরাইলের গণবিন্যাস, চরিত্র ও অবস্থান পরিবর্তনের সকল পদক্ষেপের নিন্দা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) পরামর্শমূলক অভিমতও উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে, আদালত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব বেআইনি এবং বসতিস্থাপন ও সংযুক্তিকরণের সব পদক্ষেপ অবৈধ। গত বৃহস্পতিবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে, তারা ২০২৫ সালের ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সম্পর্কিত পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে। ওই অভিমতে আদালত পুনরায় নিশ্চিত করেছে যে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন অনুযায়ী ইসরায়েল দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে (গাজাসহ) জনগণের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করার এবং জাতিসংঘ ও এর সংস্থাগুলোর (বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সব রকম সহযোগিতা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বহন করে।
ইসরায়েলের ওপর অর্থনৈতিক ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান এরদোয়ানের : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘনের দায়ে দখলদার ইসরায়েলের ওপর অর্থনৈতিক ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
ওমান থেকে সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) এমন মন্তব্য করেন এরদোয়ান। তিনি জানান, সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে। এছাড়া যুদ্ধবিরতি অক্ষুণ্ণ রাখতে তুরস্ক কাজ করছে বলে জানান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি নিরাপদ রাখতে তুরস্ক সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। হামাস চুক্তি মেনে চলছে। তারা প্রকাশ্যে বলছে যুদ্ধবিরতির প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু অপরদিকে ইসরায়েল চুক্তি ভঙ্গ করেই চলছে।’
“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কাজ করতে হবে যেন ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মেনে চলে। তারা যেন যুদ্ধবিরতি মানতে বাধ্য হয় সেজন্য অর্থনৈতিক ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।”
গত দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বর্বরতার কারণে ইসরায়েল-তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। তার্কিস প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর প্রধান হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর সেখানে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের আলোচনা চলছে। এই বাহিনীতে তুরস্কের সেনা থাকায় আপত্তি জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, গাজাকে যে কোনো ধরনের সহায়তা করতে তারা প্রস্তুত আছেন।
যুদ্ধবিরতির পরও গাজার মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা দূর হচ্ছে না -ডব্লিউএইচও : যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও গাজায় ক্ষুধার সংকট বিপর্যয়কর পর্যায়ে আছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস গাজার মানুষের ক্ষুধা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এ সতর্কবার্তা দেন। এদিকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার পক্ষ থেকে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, অবরুদ্ধ গাজায় যে পরিমাণ খাদ্যসরবরাহ করা হচ্ছে, তা সেখানকার মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, গাজায় প্রতিদিন দুই হাজার টন ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর কথা থাকলেও এর চেয়ে অনেক কম পৌঁছাচ্ছে। এর কারণ, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে বর্তমানে মাত্র দুটি প্রবেশদ্বার খোলা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনও বিপর্যয়কর পর্যায়ে আছে। কারণ, যা প্রবেশ করছে, তা একেবারেই যথেষ্ট নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকার কারণে ক্ষুধাজনিত সংকটে কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
গত বুধবার জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষ প্রচণ্ড রকমের অনাহারে ভুগছেন। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীও আছেন। জাতিসংঘ বলেছে, অপুষ্টিজনিত এ সংকট গাজায় ‘পুরো এক প্রজন্মের ওপর’ ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘ গত বুধবার সতর্ক করে বলেছে, গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষ প্রচণ্ড রকমের অনাহারে ভুগছেন। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীও আছেন। জাতিসংঘ বলেছে, অপুষ্টিজনিত এ সংকট গাজায় ‘পুরো একটি প্রজন্মের ওপর’ ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপনির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটন গত বুধবার বলেন, গাজায় এখন নবজাতকদের ৭০ শতাংশই অপরিণত অবস্থায় বা কম ওজন নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে এ হার ছিল ২০ শতাংশ।
স্যাবারটন আরও বলেন, ‘অপুষ্টির প্রভাব শুধু মায়ের ওপর নয়, নবজাতকের ওপরও পড়ে। এ কারণে শিশুটি সারা জীবন দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে এবং তার জন্য দীর্ঘসময় ধরে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হতে পারে।’
গত আগস্টে গাজা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা অঞ্চলের পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ‘বিপর্যয়কর অবস্থার’ মুখোমুখি।
গত আগস্ট মাসে গাজা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা অঞ্চলের পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ‘বিপর্যয়কর অবস্থার’ মুখোমুখি।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে উপত্যকাটিতে মানবিক সহায়তা প্রবেশের পরিমাণ বাড়ানোর কথা ছিল। সে অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টন সহায়তা প্রবেশ করানোর কথা জাতিসংঘের। তবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি গত মঙ্গলবার বলেছে, প্রতিদিন গাজায় মাত্র প্রায় ৭৫০ মেট্রিক টন খাবার পৌঁছাচ্ছে। কারণ, গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন মাত্র দুটি ক্রসিং চালু আছে। এগুলো হলো, দক্ষিণে কারেম আবু সালেম ও মধ্যাঞ্চলে আল-কারারা ক্রসিং। ফিলিস্তিনি এনজিও পিএআরসির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক পরিচালক বাহা জাকুত বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও গাজা অঞ্চলের পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় আছে।’
জাকুত উদাহরণ দিয়ে বলেন যে বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকলেট ও সোডা ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বীজ ও জলপাইয়ের মতো পণ্যগুলো এখনও সীমিত পরিমাণে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। যেসব পণ্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে- সেসব শিশু, নারী ও সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পুষ্টিমান পূরণ করে না।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, কিছু ফলমূল ও সবজি গাজায় প্রবেশ করলেও সেগুলোর দাম অত্যন্ত বেশি। এক কেজি টমেটো আগে যেখানে ১ শেকেলে পাওয়া যেত, তা এখন প্রায় ১৫ শেকেলে বিক্রি হচ্ছে। এরই মধ্যে অক্সফাম, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি ত্রাণ সংস্থা গতকাল একটি খোলাচিঠি প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল অবৈধভাবে গাজায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। ইসরায়েল সরকার নিয়মিতভাবে তাদের (সংস্থাগুলোর) মানবিক কার্যক্রম শুরুর আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গাজায় ত্রাণ বিতরণে ১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নাকচ করা হয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর ছয়টি আবেদনও।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করা ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে আছে- তাঁবু ও ত্রিপল, কম্বল, গদি, খাদ্য ও পুষ্টিসামগ্রী, স্বাস্থ্য কিট, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের সামগ্রী, সহায়ক যন্ত্রপাতি এবং শিশুদের পোশাক। যুদ্ধবিরতির সময় এসব সামগ্রীর ওপর থেকে সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়া দরকার বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।