ডিসেম্বরে আসবেন তারেক রহমান

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

২০০৭ সালের ৭ মার্চ এক-এগারোর ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সরকারের সময় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য তিনি স্বপরিবার লন্ডনে যান। পরে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্রমান্বয়ে তারেক রহমান তার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় সব মামলা থেকেই অব্যাহতি পান। তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সম্প্রতি দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা হবে। মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আর এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নভেম্বরের ২০-২১ তারিখের দিকে সৌদি আরব গিয়ে পবিত্র ওমরা পালন করবেন। ওমরা শেষ করে তিনি লন্ডনে ফিরে আসবেন এবং সেখান থেকে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশে ফেরার পর তারেক রহমান রাজধানীর গুলশান-২ অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে অবস্থান করবেন। বিএনপি ওই বাড়ির সংস্কার ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। ওই বাড়ি ১৯৮১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ করা হয়েছিল। এবার তারেক রহমান ওই ঐতিহাসিক ঠিকানায় বসবাসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম জানিয়েছেন, গুলশানের ওই বাসায় পূর্ণাঙ্গ সংস্কার চলছে। বিদেশ থেকে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম আনা হচ্ছে এবং জাপান থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি শিগগিরই পৌঁছাবে। এর আগে দু’টি বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে। গাড়ির অনুমতি পাওয়া গেছে, তবে অস্ত্রের লাইসেন্স এখনও হাতে আসেনি।

ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইসহ বিএনপির মূল নেতৃত্ব তিনিই দেবেন। নিজে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও তারেক রহমান এরই মধ্যে জানিয়েছেন। তবে বিএনপি বিজয়ী হলে তারেক রহমান নাকি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা এখনও পরিষ্কার হয়নি। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়া সুস্থ ও সক্ষম হলে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। না হলে তারেক রহমান হবেন সেটা প্রায় চূড়ান্ত।

এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, গোটা দেশের মানুষ দুটি বিষয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। একটি হলো- আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু এর আগে তারা তারেক রহমানের ফেরার অপেক্ষায় আছে। তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গত শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই দলের নির্বাহী প্রধান দেশে ফিরবেন। গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ এই কথা জানান।

জানা যায়, তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে দলীয়ভাবে বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরেফিরে এমন আলোচনাই চলছে। যদিও তারেক রহমান ঠিক কবে নাগাদ দেশে ফিরছেন, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারণ করা না হলেও ঢাকায় বিএনপির নেতারা বলছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অথবা ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, দলের এই শীর্ষ নেতাকে দেশের মাটিতে গণঅভ্যর্থনা জানাতে বিএনপি প্রস্তুত। আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ নানা দিক মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তাই কোন সময় দেশে ফিরলে বিএনপির রাজনৈতিক অর্জনের পাশাপাশি ব্যক্তি তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনটা ফলপ্রসূ হয়, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি জোরালো আলোচনা আছে। তার অভ্যর্থনা উপলক্ষে ঢাকায় বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা আছে বিএনপির। ওই সমাবেশে তারেক রহমান সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় বিএনপি। দিনটিতে বিমানবন্দরসহ রাজধানীতে বৃহত্তম জমায়েত করার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দরসহ ঢাকায় বিএনপির বিশাল একটি শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে। এমতাবস্থায় তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময় নিয়ে একাধিক আলোচনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এটি হতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে অথবা তফসিল ঘোষণার পরপরই। এ সময়ে দেশে ফিরে তিনি দলের পক্ষে একটি জোয়ার সৃষ্টি করে নির্বাচনে ভালো ফল আদায়ে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিন-তারিখ নিয়ে নানামুখী চিন্তা রয়েছে বিএনপির।

ধারণা করা হচ্ছে, তারেক রহমান দেশে ফেরার পর গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়িতেই থাকবেন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকার তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই বাড়ি বরাদ্দ দেয়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার এই বাড়ির নামজারি সম্পন্ন করে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র খালেদা জিয়ার হাতে হস্তান্তর করে। এর পাশের বাড়ি ফিরোজায় ভাড়া থাকেন বেগম খালেদা জিয়া।

গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ-এর কাছে ভাড়া দেওয়া ছিল। কোম্পানিটি চলতি বছরের শুরুর দিকে বাড়িটি ছেড়ে দেয়। এখন নতুন করে বাড়ির ভেতরে-বাইরে রং করাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ চলছে।

প্রসঙ্গত, তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন। ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়ার পর থেকে তিনি সেখানে বসবাস করছেন।