গণভোট ঘিরে উত্তাল রাজনীতি

‘ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হতে পারে’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজনীতির মাঠ ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন ঘিরে গণভোটের দাবিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনকে ‘অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক’ বলে দাবি করেছে বিএনপি। অন্যদিকে, সনদ বাস্তবায়নের জন্য নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন চাইছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সনদের জনগণসমর্থিত রূপরেখা বাস্তবায়ন ছাড়া জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। এদিকে, তারুণ্যনির্ভর এনসিপি আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দলটির মতে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে দেশে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। এনসিপির মতে, সনদটি কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য নয়, বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক কাঠামো ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বহন করে।

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন অনিশ্চিত এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হতে পারে বলে মনে করছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বিজয় নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী পাল্টাপাল্টি দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির চায়, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। অপর দিকে নভেম্বরে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন চাইছে জামায়াতে ইসলামী।

এ পরিস্থিতিতে এবি পার্টির চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাদের দল কখন গণভোট চায়। জবাবে মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করি, সরকার চূড়ান্তভাবে যখন গণভোট আয়োজন করবে, তা রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে। ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন আয়োজনে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে এবং প্রফেসর ইউনূসকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হতে পারে।’ তখন পরিস্থিতি ভয়ানক জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির পক্ষ থেকে আবারও বিবদমান পক্ষগুলোকে অহমিকা ও তর্কবিতর্ক ছেড়ে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সুপারিশ কার্যকরে একমত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

মজিবুর রহমান বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাহী আদেশ জারির পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সংসদের প্রথম ৯ মাসে (২৭০ দিন) সংবিধান সংস্কার পরিষদ সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। মজিবুর রহমান আরও বলেন, যেসব বিষয় সংবিধানসংশ্লিষ্ট নয়, তা সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং সুপারিশের অনেক বিষয় আছে, যা অফিস আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এসব বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের কোনো মতভিন্নতাও নেই। প্রথম দুই ভাগের বিষয়গুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শেষ ভাগের প্রস্তাবগুলোর জন্য দুটো বিকল্প রাখা হয়েছে এবং গণভোটে জনগণের বৈধতা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। গণভোটের দিনক্ষণ ঠিক করার বিষয়টি সরকারের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি নিয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।