নভেম্বরে না হলেও নির্বাচনের আগে গণভোট চায় জামায়াত
* নির্বাচন দেরি হলে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা- বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা আছে : আমির * দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় জামায়াতের দুই সদস্যের কমিটি
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’কে আইনি ভিত্তি দিতে অবিলম্বে গণভোট আয়োজনের দাবি আসছে জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনের আগে গণভোট না হলে সারাদেশে আন্দোলন করবে দলটি। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন।
এতদিন দলটি নভেম্বর মাসে গণভোটের দাবি করেছিল। এরই মধ্যে নভেম্বর মাসের ৫ দিন অতিবাহিত হতে চলেছে, কিন্তু গণভোটের প্রস্তুতি নেই নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জামায়াতের সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, নভেম্বর মাসে না হলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। গণভোট জুলাই সনদ আদেশ শক্তিশালী করবে। গণভোট হলে এটা আদেশ হবে। গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হলে বিশৃঙ্খলা হবে। তখন গণভোটে কম ভোট পড়বে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে হবে না, ওই দিনে মানুষের ফোকাস থাকবে জাতীয় ভোটে। কারও পাতানো ফাঁদে পা দেওয়ার সুযোগ নেই। আগে গণভোট হতে হবে, গণভোট যেন আগে হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াত আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেও জানান দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।
নির্বাচন দেরি হলে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা- বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা আছে- জামায়াতের আমির : অন্যদিকে গতকাল সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সামনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সবাইকে নিয়েই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব। এটা দেরি হলেই বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা ও বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
টানা তৃতীয়বার জামায়াতের আমির নির্বাচিত হওয়ার পর এটি শফিকুর রহমানের সিলেটে প্রথম সফর। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশ ভ্রমণ করে দেশে ফেরেন। গতকাল বিমানবন্দরে সিলেট জামায়াতের নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে জামায়াত অবস্থান থেকে সরে আসবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রের ফর্মুলা হচ্ছে একাধিক দল থাকবে, একাধিক আদর্শ থাকবে। সবাই নিজ কর্মসূচি, আদর্শ ও দাবি নিয়ে আসবে। আমার দাবি বাস্তবায়ন হতে হবে এমনটি নয়। আমি বলব, আমার দাবিটাই মনে করি শ্রেষ্ঠ দাবি, জনগণ এইটা বিবেচনায় নেবে। আমরা যা করি জনগণকে নিয়ে করব। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করব না। জনগণ বুঝলে আমরা বিশ্বাস করি এটা গ্রহণ করবে। গ্রহণ না করা পর্যন্ত যেহেতু এইটা আমরা জনগণের জন্য উত্তম মনে করি, সেই কারণে আমরা আমাদের দাবি অব্যাহত রাখব।’
নির্বাচনে জোট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আসলে আমরা কোনো জোট করার সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা কোনো জোট করব না, এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা নির্বাচনে সমঝোতা করব। আমরা যে কথাটা বলেছি, প্রত্যেকটি জায়গায় একটা বাক্স হবে। সেই নীতিতেই আমরা আগাচ্ছি। এখানে শুধু ইসলামি দল নয়, ইসলামি দলের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক প্রতিশ্রুতিশীল আরও যারা আছেন, তারাও ইতিমধ্যে সংযুক্ত হচ্ছেন। আরও সংযুক্ত হবেন ইনশাল্লাহ। আমরা সবাইকে নিয়েই দেশ গড়তে চাই।’ গণভোট প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমাদের অবস্থান হচ্ছে যে গণভোট না হলে কিসের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচনটা হবে। এ জন্য আমরা চাই গণভোট আগে হোক এবং সনদ যেটা, সেটা আইনি বাস্তবতা খুঁজে পাক।’ অতীতে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘অতীতে যারা এমনটি করেছেন, তারা কেউ অতি উৎসাহী হয়ে করেছেন। আবার সেই অতি কেউ উৎসাহীদের সঙ্গে তাল মিলাইতে গিয়ে হয়েছে। কিন্তু জনগণ যখন জেগে উঠবে, তখন কারও তাল জায়গায় থাকে না, তখন সবাই বেতাল হয়ে পড়ে। তখন জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়। উনাদের যে ইচ্ছা, সেই ইচ্ছার আর প্রতিফলন হয় না।’ শফিকুর রহমান বলেন, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি অনলাইনে বিভিন্ন সমস্যার জন্য নির্ধারিত সময়ে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারেননি। এ জন্য তিনি আরও ১৫ দিন নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির দাবি জানান। এ ছাড়া জামায়াত ক্ষমতায় যেতে পারলে প্রবাসীদের আনুপাতিক হারে সরকারের বিভিন্ন স্তরে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে বলে জানান। পাশাপাশি সিলেটে যোগাযোগব্যবস্থার সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জামায়াত সোচ্চার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় জামায়াতের দুই সদস্যের কমিটি : নির্বাচনী কাঠামো, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট বিষয়ে ‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কমিটির সদস্যরা হলেন- সংগঠনটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। বুধবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাহী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শেষে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এই কমিটি গঠন করেন। এর আগে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজনসহ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৈরি হওয়া ‘রাজনৈতিক সংকট’ নিরসনে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান জামায়াতের নায়েবে আমির তাহের।
