নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় শহিদদের পরিবার

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে যে, সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে তারা কঠোর আন্দোলন গড়ার বাধ্যতামূলক পথ ভাবছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারের ঢাকা ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানায়।

এই সমাবেশের পূর্বভাগে রাজধানীর পল্টন মোড়ে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল ছোটখাটো এক সমাবেশও করে; তারা নভেম্বরে গণভোটের দাবি জানিয়ে আসছে।

শহিদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পরে আমরা নতুন বাংলাদেশ চেয়েছি; কিন্তু সেই বিপ্লব এখনো রাষ্ট্রীয় ও আইনি মর্যাদা পায়নি। জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও অধিকার এখনো সুনিশ্চিত নয়। এটা আমাদের জাতির জন্য অপমানজনক।” তিনি আরও বলেন, এক বছরেও ‘জুলাই যোদ্ধা’ ও তাদের পরিবারের আইনি ভিত্তি না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বিপ্লবকে ‘ঝুঁকিতে ফেলছে’। প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে তিনি মন্তব্য করেন, “আপনারা সরকারের প্রধান প্রতিশ্রুতি জুলাই সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করবেন। অন্যথায় আপনি বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের কলঙ্ক হিসেবে বিবেচিত হবেন।”

শহীদুল ইসলামদের যুক্তি রক্তের উপর গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার; তাদের কথায়, “সরকারের নিজের অস্তিত্বের জন্য” হলেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রয়োজন। তিনি প্রশ্নও তোলেন—“জুলাই সনদ যদি আইনি ভিত্তি নাই পেল, তাহলে আপনাদের সরকারটাই তো অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। কেন পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে এটাকে আইন ভিত্তি দেবে?”

জানানো হয়, গত ২৬ অক্টোবর তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দেখা করে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেছেন। শহীদ আসহাবুল ইয়ামিনের বাবা মহিউদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো সই করলেও সেখানে ‘জুলাই যোদ্ধা’ ও তাদের পরিবারের কোন প্রতিনিধি না থাকায় এ সনদের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির ঘাটতি রয়েছে—এ জন্য লিখিত সনদের আইনি ভিত্তি প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই সনদের ৮৪টির মধ্যে ৫৪টি বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে; যেখানে দ্বিমত আছে সেগুলোর সমাধানের জন্য গণভোট দরকার।’

শহীদ শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ নয়—স্বাধীন আমরা ৭১ সালে হয়েছি। আর জুলাইয়ে যে বিপ্লব হয়েছে, আমি মনে করি একাত্তরের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেই আকাঙ্খা পূরণ করতে হয়েছে।” তিনি যোগ করেন, নির্বাচনের পূর্বে আহত ও শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসন ও আইনি স্বীকৃতি প্রয়োজন।

শহীদ শেখ শাহরিয়ার মতিনের বাবা আব্দুল মতিন ও শহীদ মনিরুল ইসলামের মেয়ে রুফাইদা ইসলাম চাঁদনি বক্তব্যে তাদের ব্যথা তুলে ধরেন এবং দাবি করেন—“আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চাই।” বক্তারা সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া অন্যরা জানিয়েছেন, অভিযান ও বার্তা হিসেবে যদি প্রয়োজন পড়ে তারা গণঅভ্যুত্থানের মতো রাজনৈতিক পথে ফেরার সমর্থক হবেন। প্রকাশ্য বক্তব্যগুলোতে তারা সতর্ক করে বলেন—আইনি স্বীকৃতি ছাড়া দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে দুর্বলতা থাকবে এবং সরকারের নৈতিক ভিত্তি ধাক্কা খাবে।