লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের জামিন হাইকোর্টে

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিন চেয়ে এই দুজনের করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ফজলুর রহমান এবং আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া শুনানিতে ছিলেন।

মঞ্জুরুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ও রমজান আলী শিকদার এবং আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী। হাইকোর্ট মঞ্জুরুল আলমকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন জানিয়ে আইনজীবী রমজান আলী শিকদার বলেন, ‘ফলে তাঁর কারামুক্তিতে আপাতত বাধা নেই।’

লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া বলেন, হাইকোর্ট রুল দিয়ে তাঁর মক্কেলকে (লতিফ সিদ্দিকী) অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নিলে তাঁর কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

গত ২৮ আগস্ট সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম ছিল। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না। সেদিন সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা ছিল। তবে তা শুরু হয় বেলা ১১টায়। আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান। শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।

লতিফ সিদ্দিকীর জামিন বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থার প্রমাণ - কাদের সিদ্দিকী : আজকে লতিফ ভাইয়ের জামিনে বিচার বিভাগের প্রতি এখনো যে সাধারণ মানুষের আস্থা, তার প্রমাণ বহন করে বলে বিশ্বাস করি। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিনের পর এ কথা বলেছেন ছোট ভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। গতকঅল বৃহস্পতিবার জামিন আদেশের পর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এদিন, হাইকোর্টের বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসন লিয়নের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমকে ছয় মাসের জামিন দেন। আদালতে পৃথক আবেদনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন ও রমজান আলী শিকদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম ইব্রাহিম খলিল।

আদেশর পরে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার ৮৬ বছরের বড় ভাই, তার বয়স দেখানো হয়েছে ৭৫ বছর। আমারই কিন্তু ৮০ বছর। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম জয় বাংলা বলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু আমার ধ্যান-জ্ঞান, আমার চিন্তা-চেতনা। যতদিন বেঁচে থাকবো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেঁচে থাকবো। স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকবো। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেঁচে থাকবো। তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি এখনো আমাদের সবার আস্থা আছে। আজকে লতিফ ভাইয়ের জামিনে বিচার বিভাগের প্রতি এখনো যে সাধারণ মানুষের আস্থা, তার প্রমাণ বহন করে বলে বিশ্বাস করি। এ মামলায় যাদের অন্যায়ভাবে এখনো জেলে রাখা হয়েছে, আমি অনুরোধ করবো সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক, মুক্তি দেওয়া হোক।