যুব নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুন মানচিত্র গড়তে চায় জামায়াত
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে এমন নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে ও পরিচালিত হবে যাতে সমাজের স্লোগান ‘নতুন নেতৃত্ব, নতুন বাংলাদেশ’ বাস্তবায়িত হবে। যুব নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুন মানচিত্র গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচিত প্রতিনিধি সংবর্ধনা-২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।
ডা. শফিকুর বলেন, অতীতের কলুষিত ছাত্ররাজনীতিতে নির্বাচিত ছাত্রসংসদী ভূমিকা পালন না করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত হয় বা অসত্ম উপায়ে রুজিচালাত- এ ধারা বদলাতে হবে। তিনি দাবি করেন, বর্তমান ছাত্রসংসদগুলোতে সততার পরীক্ষা শতভাগ উত্তীর্ণ দেখতে চান এবং এতে এক ভাগও ফেল মেনে নেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচিত ছাত্রনেতাদের গণ্ডি কেবল ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ থাকবে না; তারা জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্বে সামনে থাকবে। তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদের প্রতি জাতির অনেক পাওনা আছে- তারা তা ফেরত দেবে বলে আশা রাখি। ডা. শফিকুর আরও বলেন, তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ কীভাবে গড়বে- তার রিহার্সেল হচ্ছে ছাত্রসংসদের মাধ্যমে। তিনি ছাত্রসংসদকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সেন্টার অব একাডেমিক এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রধান দায়িত্বশীল দলে পরিণত করতে বলেন এবং গবেষণা সংস্কৃতি ফেরাতে তাগিদ দিয়েছেন।
ছাত্রসংসদ নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যতের বৃহৎ নেতৃত্বের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। তোমাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে চাই। দেশের ককপিটে তোমাদের বসাতে চাই। তোমরা ককপিটে বসে দেশ পরিচালনা করবা। পেছন থেকে আমরা তোমাদের জন্য দোয়া করবো, শক্তি জোগাবো। ভুল করলে কানে কানে তোমাদের বলে সংশোধন করাবো। কথা না শুনলে হাতে ধরে বকা দেবো। যদি তাও না শুনো তাহলে সম্মানের সঙ্গে আসন থেকে জাতিকে সঙ্গে নিয়ে তোমাদের সরিয়ে দেবো। রাগ করো না। তোমাদের সেইভাবেই প্রস্তুত হতে হবে। জামায়াত আমির বলেন, তোমরা পারবা, পেরেছো। একটা হস্তিকে তোমরা এই সমাজ থেকে তাড়াতে পেরেছো। তোমাদের নেতৃত্বে সেটা সফল হয়েছে। তোমাদের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল বন্ধ হয়েছে, ডালের ঘনত্ব বেড়েছে- তাহের : বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ছাত্রশিবির পরপর চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট লাভ করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে, ছাত্রশিবির একটা মাত্র সংগঠন নয়, শিবির হলো সমগ্র দেশের ছাত্র-সমাজ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল বন্ধ হয়েছে। গাঁজা-মদের আড্ডা বন্ধ হয়েছে। ডালের ঘনত্ব বেড়েছে। তিনি বলেন, তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা একটি আদর্শবাদী দলকে সমর্থন দিয়েছে। আগামী নির্বাচনেও ৪ কোটি তরুণ ছাত্র সমাজ সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের পজেটিভ পরিবর্তনের জন্য আদর্শবাদী দলগুলোকে যেন বিজয়ী করে। আগামী নির্বাচনে আর একটা মিরাকল হতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ জয়ের যে রিফ্লেকশন, এটা আগামীতেও হবে। আমরা এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, ছাত্রশিবির পরপর চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট লাভ করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে, ছাত্রশিবির একটা মাত্র সংগঠন নয়, শিবির হলো সমগ্র দেশের ছাত্র-সমাজ।
ড. তাহের বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল বন্ধ হয়েছে। গাঁজা-মদের আড্ডা বন্ধ হয়েছে। ডালের ঘনত্ব বেড়েছে।
ছাত্র সংসদ নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে হয়েছে। সারাদেশ তাদের সঙ্গে ছিল। আপনাদের সংগ্রাম ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করেছে ভারতে। আপনাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি। এই সংগ্রাম দিয়ে দেশের দুর্নীতিকে সাগরে ফেলে দিতে হবে। এই লড়াইয়ে আপনারা ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা ভূমিকা রাখবেন।
নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ব্যবসা চলবে না- ডাকসু ভিপি : শুক্রবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচিত প্রতিনিধি সংবর্ধনা-২৫ অনুষ্ঠানে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম। বলেছেন, নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইন্ডাস্ট্রি, ব্যবসা চলবে না। ফ্যাসিবাদী আমলে একটি দল সবসময় মুক্তিযুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ফ্রেমিং করতো, ব্যবসা করতো। শাহবাগ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইন্ডাস্ট্রির কোনো ব্যবসা চলবে না। জুলাই চেতনা নিয়ে যারা ব্যবসা করতে চাইবে, সেই ব্যবসাও চলবে না। সাদিক কায়েম বলেন, জুলাই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে যারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাইবে- শুধু সেই রাজনীতিই চলবে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব- জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করুন।
ডাকসু ভিপি বলেন, শহিদদের আত্মত্যাগ ও গাজীদের সেক্রিফাইসের মাধ্যমে আজকে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। শহিদরা যে জন্য জীবন দিয়েছে আমরা সেই বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। সেটিই এখন আমাদের মূল দায়িত্ব। ‘নতুন বাংলাদেশের রাজনীতি হবে ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড পলিটিক্স এন্টিক পলিটিক্স। নতুন বাংলাদেশে মাসল পলিটিক্স চলবে না। চাঁদাবাজির রাজনীতি চলবে না। টেন্ডারবাজির রাজনীতি চলবে না। নতুন বাংলাদেশে ফাও খাওয়ার রাজনীতি চলবে না।’ সাদিক কায়েম বলেন, যারা ফ্যাসিবাদের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চায়, তারা দিল্লির বয়ান দেয়। মুজিববাদী বয়ানে তারা আবার ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনতে চায়। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের যে করুণ পরিণতি হয়েছিল, তার চাইতে খারাপ পরিণতি তাদের হবে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনকে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে হবে উল্লেখ করে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে আপনারা জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করছেন না। আপনাদের মধ্যে আমরা দাম্ভিকতা দেখতে পাচ্ছি।
