পুলিশের লাঠিপেটার পর কর্মবিরতির ডাক প্রাথমিক শিক্ষকদের
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শাহবাগ অভিযমুখে যাওয়া প্রাথমিকের শিক্ষকদের লাঠিচার্জ করে, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ ও টিএসসির মধ্যবর্তী সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ শিক্ষক আহত হন। আহত শিক্ষকদের উদ্ধার করে রিকশায় তুলে বা কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের ধাওয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক-সেদিক ছুটতে দেখা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষকরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এক শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত দিয়েছে পুলিশ, লাঠিচার্জ করেছে। আমার কাপড় ছিঁড়ে গেছে। আমরা এই সরকারের পুলিশের কাছে এ ধরনের আচরণ আশা করিনি।’
পুলিশের লাঠিচার্জে আহত আরেক শিক্ষক বলেন, ‘পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড মেরেছে, আমি সামনে দাঁড়ানো ছিলাম। আমরা শিক্ষক, আমরা কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আমার রক্ত যখন গেছে, দশম গ্রেড নিয়ে ফিরব।’ আন্দোলনরত অন্য এক শিক্ষক বলেন, ‘আমরা শান্তভাবে ছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের গায়ে হাত তুলেছে। আমরা যে শিক্ষক, আমাদের সেই মূল্য দেওয়া হলো না।’ বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। তারা সড়ক থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনকারী ডিএমপি রমনা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে পক্ষ আছে। একটা পক্ষ আমাদের জানাল যে তারা শহিদ মিনারে ফিরে যাবেন। কিন্তু আরেকটা পক্ষকে দেখলাম পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগের দিকে চলে যাচ্ছে। তখনই আমরা অ্যাকশনে যাই। তার আগে আমরা কিছু করিনি।’ সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো- ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি বাস্তবায়ন।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে চারটি সংগঠন এ আন্দোলন পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেমণ্ডশাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।
পুলিশের লাঠিপেটার পর কর্মবিরতির ডাক প্রাথমিকের শিক্ষকদের : তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হওয়ার পর নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন, পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করবেন।
আন্দোলনকারী ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান। এর আগে বিকেলে শাহবাগে প্রাথমিক শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশ চড়াও হয়। লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেডে শতাধিক শিক্ষক আহত হন। শিক্ষকদের অভিযোগ, পুলিশ হামলা চালিয়েছে বিনা উসকানিতে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শিক্ষকেরা বাধা উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে এগোলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
হামলার পরপরই শামছুদ্দীন মাসুদ বলেছিলেন, তারা শহিদ মিনারে ফিরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতির পদে রয়েছেন। এমন আরও কয়েকটি সংগঠন নিয়ে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ গড়ে তুলে এই আন্দোলন চলছে।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা জাতীয় বেতন - স্কেলের ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। তা ১০ম গ্রেডে করার দাবিতে এখন আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকেরা। তাদের অন্য দুটি দাবি হলো শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া। কিছুদিন আগে তারা সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। তবে সেখান থেকে এগিয়ে এখন ১০তম গ্রেডে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। এত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড ছিল ১১তম। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে রিট আবেদনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়িয়ে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড দশম গ্রেড হওয়ার পথ তৈরি হলো। সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে শিগগিরই সরকারি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করার চেষ্টাও করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
