আট দলের সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই

* যারা গণভোট নিয়ে টালবাহানা করছেন, তারা পালাবেন কোথায়, প্রশ্ন চরমোনাই পীরের * ১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থিকে রাজপথে নামতে দেব না : মামুনুল হক * গণভোট না হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ২০২৯ সালে : আযাদ

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না তাদের জন্য ২০২৬ সালে কোনো নির্বাচন নেই। জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের কথা একটাই- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গণভোটের ব্যাপারে সব দল একমত। তাহলে তারিখ নিয়ে এই বায়নাবাজি কেন? একমত যখন একমত হয়েই জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেছি, তখন গণভোট আগে হওয়াই হচ্ছে যুক্তিযুক্ত। এর মধ্য দিয়ে আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে। এর ভিত্তিতেই আগামী সংসদের নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন হোক। এ নিয়ে কেউ ধুম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাবেন না। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাবেন না। আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে সব দল মতামত দিয়েছি। আট দলের পক্ষ থেকে ডজনখানেক নোট অফ ডিসেন্ট আমরা দেইনি। প্রস্তাবনা যৌক্তিক মনে করে আলাপ আলোচনায় আমরা ইতিবাচক মত দিয়েছি।

‘এরপর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি চার্টার তৈরি হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ যা বলবে বাকিরা তা মেনে নেবে। কিন্তু আমরা দেখলাম কেউ কেউ তা মেনে নিতে রাজি নন।’ তিনি বলেন, আপনি যদি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখান জাতীয় নির্বাচনে আপনি শ্রদ্ধা দেখাবেন কীভাবে? সব বায়না ভুলে যান। জুলাই শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখান। জুলাইয়ে যারা লড়াই করেছে যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছে, তাদের বুকের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন।

শফিকুর রহমান বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- জনতার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। জনতা কী চায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। যদি এই ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হন তাহলে নিজের পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন। আমাদের সহযোদ্ধারা আমাদের হাতে মুক্তির প্রাথমিক পরিবেশটা উপহার দিয়েছে, আমরা জনগণের চূড়ান্ত মুক্তি আদায় করেই ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ।

আমরা গণভোটের ব্যাপারে অনড় থাকবো উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, আমরা ভদ্র ভাষায় কথা বলছি, ভদ্র ভাষায় কথা বলবো। কিন্তু আমাদের দাবির ব্যাপারে হিমালয়ের মতো অনড় থাকবো। এ দাবি জনগণের দাবি, কোনো দলের দাবি নয়। এ দাবি বিপ্লবের দাবি, এ দাবি ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে বাংলাদেশের জনগণ মাথা নত করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের দাবি আদায় না হবে আমাদের আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলতে থাকবে। আমরা আজ শীর্ষ নেতারা মিলিত হবো। পরবর্তী কর্মসূচি শিগগির জানতে পারবেন।

যারা গণভোট নিয়ে টালবাহানা করছেন তারা পালাবেন কোথায় : মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে পাঁচ দাবিতে ৮টি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, বাংলাদেশে দুই শ্রেণির মানুষ এখন দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এক শ্রেণির আমরা যারা দেশপ্রেমিক, আরেক শ্রেণি হলো ক্ষমতাপ্রেমী। আওয়ামী লীগ সরকার দেশপ্রেমিক ছিল না, তারা ছিল ক্ষমতাপ্রেমী। তারা কিন্তু একপর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছে। এসময় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট হওয়ার চিন্তা করছেন, যারা গণভোট নিয়ে টালবাহানা করছেন- আপনারা পালাবেন কোথায়? আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এছাড়া কিন্তু আপনাদের পালানোর কোনো জায়গা নেই।

মুফতি রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো না। যদি আপনাদের উদ্দেশ্য ভালোই হয়ে থাকে, যেখানে আইনি ভিত্তির ব্যাপারে আপনারা একমত পোষণ করেছেন। সেখানে গণভোটে এত গড়িমসি কেন? এটা জাতির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো আমরা শান্তিপ্রিয়, বারবার রাস্তায় রোদে আমাদের পোড়াচ্ছেন- আর কত রাস্তায় নামতে হবে?

কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, এরপর আমরা বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ নিয়ে এমন কর্মসূচি ঘোষণা করবো, আপনি গণভোট নির্বাচনের আগে দিতে বাধ্য হবেন। আমাদের ওই পথে আপনারা হাঁটাবেন না। আমরাও ওই পথে হাঁটতে চাই না। আজকের জাতীয় সমাবেশের মাধ্যমে আপনাদের আমরা বারবার অনুরোধ করছি। এরপরও যদি আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে কিন্তু পরে আমরা কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।

বাকশালপন্থিকে রাজপথে নামতে দেবো না : আগামী ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, বাহাত্তরের পরাজিত বাকশালপন্থিরা আগামী ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লকডাউনের নামে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থিকে বাংলার রাজপথে নামতে দেবো না। যদি কেউ নামার অপচেষ্টা চালায় আমরা তাদের রাজপথে মোকাবিলা করবো ইনশাআল্লাহ। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে পাঁচ দাবিতে ৮টি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, যারা জুলাই সনদের গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করছেন আমরা তাদের সমস্যার কথা জানতে চাই। কোনো যুক্তি নেই। তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করার ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার ঘোষণা দিচ্ছি, রক্ত দিয়ে যেই ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি- প্রয়োজনে আবার রক্তের সাগর প্রবাহিত হবে। বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না। মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ আজ স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগ বাহাত্তরের বাকশালপন্থি, আরেক ভাগ জুলাইয়ের বিপ্লবপন্থি। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং পক্ষের কাছে আমার সুস্পষ্ট জিজ্ঞাসা, সবাই যার যার অবস্থান পরিষ্কার করুন। হয় আপনি জুলাই বিপ্লবের পক্ষে, আর না হয় আপনি বাহাত্তরের বাকশালপন্থি। তিনি আরও বলেন, অনতিবিলম্বে জুলাই সনদকে সরকারি আদেশের মাধ্যমে এর প্রাথমিক আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে জুলাই বিপ্লবপন্থিরা বরদাশত করবে না। আমরা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, জুলাই বিপ্লবে শাহাদতবরণকারী বীর শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে জুলাই বিপ্লবের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট ছাড়া বাংলার মাটিতে আমরা আর কোনো কিছুই হতে দেবো না।

গণভোট না হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ২৯ সালে- আযাদ : মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে ৮ দলের সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, গণভোট ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী গণভোট না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৯ সালে।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ?‘কেউ কেউ বলছেন সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান সংশোধন করে গণভোটের ধারা বাতিল করেছিলেন শেখ হাসিনা। এখন যারা বলেন সংবিধানে গণভোট নেই, তারা কি তাহলে হাসিনার সুরে কথা বলেন না?’ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের কথা সংবিধানে লেখা আছে। ২০২৪ এ যদি নির্বাচন হয়, তাহলে ২০২৬ সালে নির্বাচন হবে কোথায় লেখা আছে? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে ২০২৯ সালে।

তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সমাজকে নতুন ভিত্তিতে শক্তিশালী করতে এবং নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করতে হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারের অংশ হিসেবে গণভোট দিতে হবে। নির্বাচনের আগে গণভোট ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নও হবে না, সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়।’ বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আপনারা আবার নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চান, বাংলাদেশের জনগণ এ ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে হতে দেবে না। আসুন সরকারকে বলতে চাই জুলাই সনদ আদেশ জারি করুন।