দেশজুড়ে ছয় গাড়িতে আগুন মারা গেলেন চালক

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দুটি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রাইভেট কারে, উত্তরা, সূত্রাপুরে বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বাসে অগ্নিসংযোগে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা গেছেন চালক। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ছয়টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনাগুলো নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাজধানীর সূত্রাপুরে মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে রাজধানী পরিবহনের একটি বাস এবং দুইটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা টোল প্লাজার কাছে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে উত্তরা জনপথ মোড়ে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, কাজলায় টোল প্লাজার কাছে রাইদা পরিবহনে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। যে তিনটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে, সেগুলোয় কোনো যাত্রী ছিল না। বাসগুলো পার্কিং করা ছিল। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আগে গত সোমবার দিন ও রাতে ঢাকায় বাসে আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাজধানীতে বাস পোড়ানো হয়েছে তিনটি। বিভিন্ন জায়গায় ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে।

১১ দিনে ঢাকায় ১৭ ককটেল বিস্ফোরণ, ৯ যানবাহনে অগ্নিসংযোগ: মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত রাজধানীর ১৫টি স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে। এছাড়া গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা চলছে : ডিএমপি কমিশনার বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন স্থানে ককটেল সদৃশ বস্তু নিক্ষেপ এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তার ভাষায়, ১ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫টি স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত দুই দিনেই ৯টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে এবং ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জন গ্রেফতার হয়েছে।

ঝটিকা মিছিল, ভাড়ায় আনা অংশগ্রহণকারী : ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থেকে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তারা ১৪টি ঝটিকা মিছিল করেছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, এসব স্বল্পস্থায়ী ঝটিকা মিছিলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫২ জনকে ঝটিকা মিছিলের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও অংশগ্রহণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বেশিরভাগ ঢাকার বাইরে থেকে অর্থের বিনিময়ে আনা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হেলমেট ও মাস্ক পরে তারা ভোরবেলা বা ব্যস্ত সময়ে লক্ষ্যস্থলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।

অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেবেন না : রাজধানীবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনও অপরিচিত ব্যক্তিকে আশ্রয় দেবেন না। মেস, হোটেল, গেস্টহাউজে বোর্ডার তোলার আগে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করুন। কোনও সন্দেহজনক চলাফেরা দেখলে দ্রুত ৯৯৯ নম্বরে জানান।

তিনি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের যানবাহন অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখবেন না। সাম্প্রতিক যেসব বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে, অধিকাংশই রাতে ফাঁকা ও অরক্ষিতভাবে রাস্তায় পার্ক করা ছিল। যাত্রীবাহী বাস নয়, বরং যেগুলো ফাঁকা ছিল সেগুলোকেই টার্গেট করে আগুন দিয়েছে।

নাশকতা প্রতিরোধে জনগণের সহায়তা চাই : ডিএমপি কমিশনার বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছি। এখন যারা নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে, তাদের প্রতিরোধে জনগণের সহায়তা প্রয়োজন। ঢাকাবাসী অতীতে যেমন ভূমিকা রেখেছে, এবারও তেমনভাবেই এই অপতৎপরতা রুখে দেবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, জনগণ ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করলে যে কোনও নাশকতা প্রতিহত করা সম্ভব।