আলু : বিপদে কৃষক
বাজারে ধস, বিপাকে কৃষক-ব্যবসায়ী
নীলফামারী
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্বপ্না আক্তার স্বর্ণালী শাহ্, নীলফামারী

নীলফামারীতে হিমাগারে মজুত থাকা বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেকেও আলু বিক্রি করতে হচ্ছে এখন। এতে একদিকে কৃষকরা বাজারে আলু ছাড়তে আগ্রহ হারাচ্ছেন, অন্যদিকে বেশি দামে কিনে মজুত রাখায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, জেলার সরকারি-বেসরকারি ১১টি হিমাগারে বর্তমানে প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। এর মধ্যে কৃষক পর্যায় থেকে সংগৃহীত আলুর পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। দাম কমে যাওয়ায় বাকি আলু সংগ্রহে কৃষকদের অনীহা তৈরি হয়েছে। ফলে হিমাগার মালিকদের জন্যও এই আলু এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে নতুন আলু ওঠা শুরু হবে। এতে পুরোনো আলুর চাহিদা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চাষিরা।
কৃষক মোস্তফা ইসলাম বলেন, এক কেজি আলু মাঠ থেকে হিমাগার পর্যন্ত তুলতে আমাদের ২০-২২ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। অথচ এখন সেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। এতে আমরা পুরোপুরি লোকসানে। আরেক কৃষক জামিল উদ্দিন জানান, বেশি দামে বিক্রির আশায় হিমাগারে আলু রেখেছিলাম; কিন্তু এখন সংরক্ষণ খরচই তুলতে পারছি না।
চাষি জিয়ারুল হক বলেন, এইভাবে দাম কম থাকলে আগামী মৌসুমে আলু চাষ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে। অনেকেই হয়তো চাষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। শুধু কৃষকরাই নয়, ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। আলু ব্যবসায়ী বাবু হাসান বলেন, ‘চড়া দামে আলু কিনে রাখার পর এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে লোকসানে। বাজারে দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখছি না।’
উত্তরা বীজ হিমাগারের ম্যানেজার দিপু রায় জানান, ‘বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা হিমাগার থেকে ধীরগতিতে আলু নিচ্ছে। এতে জায়গা খালি হচ্ছে না; কিন্তু বিদ্যুৎ ও সংরক্ষণ খরচ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে’।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর রহমান জানান, এ বছর জেলায় প্রায় ৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলুর বীজ রোপণ শেষ হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নতুন আলু বাজারে আসবে। যদি দাম ভালো থাকে, কৃষকরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এ বছর নীলফামারীতে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা গেলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে এবং বাজারে স্থিতিশীলতাও ফিরবে।
