শরীরে ১৮ ক্ষতচিহ্ন, রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ তৎপর

যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার পল্লবীতে প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এতে বেরিয়ে এসেছে একাধিক আঘাত ও গুলির চিহ্ন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে তার ময়নাতদন্ত করেন সহকারি অধ্যাপক ডা. নাশাত জাবিন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়ার শরীরে ১৮টি ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এসব ক্ষতের বেশির ভাগই গুলির আঘাত এবং কিছু আঘাত পাশ্ববর্তী টিস্যুতে চেপে ধরার বা ছিটকে পড়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে।

সহকারি অধ্যাপক ডা. নাশাত জাবিন, মৃত্যু গুলিবিদ্ধ হওয়ার ফলেই হয়েছে। ক্ষতগুলোর প্রকৃতি দেখে বোঝা যায়, হামলাকারীরা খুব কাছ থেকে লক্ষ্যভেদীভাবে গুলি করেছে। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে কাগজপত্র হাতে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের কান্না আরও বেড়ে ওঠে। হাসপাতালের করিডোরজুড়ে শোকের ভারী আবহ নেমে আসে।

স্বজনরা জানান, হত্যার পেছনে রাজনৈতিক শত্রুতা, ব্যক্তিগত বিরোধ কিংবা জনপ্রিয়তার ঈর্ষান্বিত হওয়ার কারণ থাকতে পারে। কিবরিয়া এলাকায় পরিচিত রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। স্থানীয়ভাবে দলীয় কার্যক্রম ও বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে তার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিবারের মতে, ঠিক এই জনপ্রিয়তাই কারও কারও জন্য বিরক্তির কারণ ছিল। কিবরিয়ার ছোট ভাই বলেন, আমরা কাউকে দায়ী করছি না, আবার কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখতেও পারছি না। আমাদের ভাইয়ের মৃত্যুর কারণ খুব পরিকল্পিত মনে হয়েছে। এমন টার্গেটেড হামলা একদিনে সিদ্ধান্ত হয় না।

গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে প্রাণ হারান যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের একটি দোকানে ঢোকার পরপরই কয়েকজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি খুব কাছ থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। মুহূর্তেই কিবরিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনার সময় দোকানে কাজ করা কয়েকজন কর্মচারী ও আশপাশের লোকজন আতঙ্কে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। ঘটনার সময় দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার একজন চালকও গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন। স্থানীয়দের ভাষ্য, হামলাকারীরা গুলি ছুঁড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভয়ে লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, আর সেই বিশৃঙ্খলার মাঝেই চালকটি গুলিবিদ্ধ হন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ঘটনার পর থেকেই পল্লবীর বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, দিনদুপুরে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে তারা আতঙ্কিত। অনেক দোকানপাট রাতের আগেই বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাজুড়ে পুলিশের অতিরিক্ত টহল চলছে।

হত্যার রহস্য উদঘাটন পুলিশ তৎপর : রাজধানীর পল্লবীতে গোলাম কিবরিয়া নামে এক যুবদল নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। ডিএমপির মুখপাত্র জানান, পল্লবীর ঘটনায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম জনি।

তদন্তকাজ চলমান জানিয়ে মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, তদন্ত একদম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। উদ্ধার করা যায়নি অস্ত্র। দোষীদের গ্রেফতারে আমরা সচেষ্ট আছি। পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ মাসে রাজধানীতে ১৯৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে অক্টোবরে রাজধানীতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ১৮টি। বেশির ভাগ ঘটনায় আমরা দ্রুততম সময়ে দোষীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আরও জানান, যেকোনো ধরণের নাশকতা প্রতিহতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে রাজধানীতে। পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন রয়েছে।