যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনছে সৌদি

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

পারমাণবিক প্রকল্প এবং মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনা- বেচা নিয়ে চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এ তথ্য জানায় হোয়াইট হাউস।

হোয়াইট হাউস জানায়, দুই দেশ পারমাণবিক শক্তি বিষয়ে একটি যৌথ ঘোষণায় সই করেছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বহু- বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতার আইনি ভিত্তি তৈরি হবে। এতে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের বিষয়টি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুমোদন করেছেন। এর অংশ হিসেবে ভবিষ্যতে সৌদি আরবকে উন্নত মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া হবে। মোহাম্মদ বিন সালমান ওয়াশিংটন সফরে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব আমেরিকার ভবিষ্যতের ওপর বিশ্বাস রাখে। সাত বছর পর হোয়াইট হাউসে এই প্রথম সফরে গিয়ে তিনি ও ট্রাম্প বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা নিয়ে কয়েকটি চুক্তি করেন।

যুবরাজ হোয়াইট হাউসের ডিনারে সংক্ষিপ্ত ভাষণে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব নয় দশক ধরে একসঙ্গে কাজ করছে, কিন্তু চুক্তির দিনটি ছিল বিশেষ দিন। মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিগন্ত অনেক বড় এবং বিস্তৃত। আমরা কিছু চুক্তিতে সই করছি, যা সম্পর্ক উন্নয়নের দরজা খুলে দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি যুবরাজকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার অন্তর্বর্তী বোর্ডে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া ডিনারে ট্রাম্প অতিথিদের জানান, তিনি সৌদি আরবকে নাটো-বহির্ভূত প্রধান মিত্র দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন।

সৌদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মিত্র বলল যুক্তরাষ্ট্র : সৌদি আরবকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একজন হিসেবে ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্মানে নৈশভোজে অতিথিদের সামনে এ ঘোষণা দেন তিনি। গত মঙ্গলবার নৈশভোজে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা সৌদি আরবকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর বাইরের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র (নন-ন্যাটো মেজর অ্যালাই) হিসেবে মনোনীত করে আমাদের সামরিক সহযোগিতাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৯টি দেশকে এ মর্যাদা দিয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এখনই আপনাদের প্রথমবারের মতো এ কথা বলছি। কারণ, তারা চেয়েছিলেন, আজ রাতের জন্য বিষয়টা একটু গোপন রাখা হোক।’ শুধু গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ঘোষণাই নয়; বরং ট্রাম্প চান, গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিষদ গঠিত হবে, তাতেও একজন হিসেবে কাজ করবেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশা করি, যুবরাজ, আপনি ওই পরিষদে থাকবেন। আশা করি, আপনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই বলেন, তিনি ওই পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

খাসোগি হত্যার বিষয়ে সৌদি যুবরাজ কিছুই জানতেন না, দাবি ট্রাম্পের : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ‘কিছুই জানতেন না’। মঙ্গলবার তিনি ওয়াশিংটনে যুবরাজকে স্বাগত জানিয়ে এ মন্তব্য করেন। তবে ট্রাম্পের বক্তব্য ২০২১ সালে প্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। খাশোগি হত্যায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুবরাজ খাশোগিকে ‘গ্রেপ্তার বা হত্যা’ করার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছিলেন। তবে যুবরাজ অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। এর আগে খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘খাসোগির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে যুবরাজ কিছুই জানতেন না। আমাদের অতিথিকে বিব্রত করার দরকার নেই।’ এ প্রসঙ্গে যুবরাজ বলেন, হত্যাকাণ্ডটি ‘বেদনাদায়ক’ ও ‘বড় ভুল’, তবে সৌদি আরব যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সৌদি আরব সেটিকে নেতিবাচক, মিথ্যা ও অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করে। যুক্তরাষ্ট্র ওই সময় কয়েকজন সৌদি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। তবে যুবরাজের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ট্রাম্পের বিশেষ নৈশভোজে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে রোনালদো : বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিশেষ এক নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং ইলন মাস্ক। ট্রাম্প রোনালদো এবং তার সঙ্গিনী জর্জিনা রদ্রিগেজকে সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান। এই বিশেষ নৈশভোজে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনে থাকা ইলন মাস্ক। ছিলেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক, ফিফা সভাপতি জিয়ান্তি ইনফান্তিনো ও মার্কিন গলফার ব্রাইসন ডি-শ্যাম্বোসহ অনেকে। তবে রোনালদোর ওয়াশিংটন সফরের সঠিক কারণ পুরোপুরি জানা যায়নি। রোনালদো বর্তমানে সৌদি প্রো লিগের দল আল নাসরে খেলছেন এবং সৌদি আরবের ফুটবলের ‘মুখ’ হিসেবে পরিচিত।হোয়াইট হাউসে ডিনারের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোনালদোর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার ছেলে রোনালদোর বিশাল ভক্ত। ব্যারন তার (রোনালদোর) সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছে। আমার মনে হয়, আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কারণে আমার প্রতি তার সম্মান কিছুটা বেড়ে গেছে।’