গণভোট নিয়ে আইন ৩-৪ দিনের মধ্যে
জানালেন আসিফ নজরুল
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে যে গণভোট হবে, সে বিষয়ে তিন-চার দিনের মধ্যে আইন করে ফেলার তথ্য দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, গণভোট আইন আমরা খুব দ্রুত করতে যাচ্ছি। এই সপ্তাহে করে ফেলব। ধরেন, আজ কী বার, বৃহস্পতিবার বার তো? ধরেন আগামী তিন-চার কার্য দিবসের মধ্যে হয়ে যাবে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু সেই গণভোট নিয়ে এখনও অধ্যাদেশ জারি হয়নি। আর অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় গণভোট নিয়ে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ করা যাচ্ছে না বলে নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হচ্ছে। বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে গণভোটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। সেখানে তিনি বলেন, অধ্যাদেশটা হলে তখন আমার একটা দায়বদ্ধতা আসবে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার। কিন্তু রাজনীতিকরা অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন, কীভাবে করবেন, কীভাবে এগুলোর জবাব দেবেন, কতটা বাক্স করবেন। এগুলোর সব চিন্তা, এক্সারসাইজ শুরু করব আমরা অধ্যাদেশটা হওয়ার পর।
হাসিনাকে ফেরাতে নতুন পথে হাঁটছে সরকার : জুলাই অভ্যুত্থানে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালানোর অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এ সময় তিনি ভারতকে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যথাযথভাবে ফেরতের আহ্বান জানান। আইন উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ভারতের উচিত হাসিনাকে ফেরত দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানানো।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন : দীর্ঘদিনের দাবির পর অবশেষে মন্ত্রণালয় থেকে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা সরকারের সবুজ সংকেত পেল, যা থাকবে উচ্চ আদালয়ের অধীনে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ প্রস্তাব নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গত ২০-৩০ বছরের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। আজকে আমরা মাসদার হোসেনের মামলার রায় পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার শেষ ধাপ সম্পন্ন করলাম।
১৯৯৫ সালে বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে এ মামলা করেন। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেয়। সেই রায়ের ২৬ বছর পর বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার পদক্ষেপে সরকারের অনুমোদন মিলল।
বিফ্রিংয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগামী সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ- ২০২৫ এর গেজেট জারি করা হবে।
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব রাজনৈতিক দল এর পক্ষে মত দিয়েছে। বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের নীতিগত অনুমোদন আগেই হয়েছিল। আজ চূড়ান্ত অনুমোদন হল।’ এ অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলাজনিত বিষয়, ছুটির পাশাপাশি নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগর সব কিছু সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় করবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাদেশ জারি হলে শুধু বিচার কাজে নিয়োজিত বিচারকরা থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু অন্যত্র প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা বিচারকরা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত থাকবেন। যেমন- নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জুডিশিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা আইন মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত থাকবেন।
কখন থেকে এই সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখা যাবে? - এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতের সচিবালয় সম্পূর্ণ কার্যকর হয়ে যাবে।’ উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের মাধ্যমে নিম্ন আদালতের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা আর্থিক স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে তুলে ধরেন তিনি। প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের নেতৃত্বে একটা যাচাই বাছাই কমিটি থাকবে। যাচাইবাছাই কমিটি প্রকল্প গ্রহণ করবে। সেই প্রকল্প একটা কমিটির কাছে পাঠানো হবে পরামর্শের জন্য। প্রধান বিচারপতির অনুমোদনক্রমে আপিল বিভাগের একজন বিচারক সেই কমিটির প্রধান থাকবেন। সুপারিশকৃত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় যদি ৫০ কোটি টাকার কম হয় সেক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এটা অনুমোদন করবেন। আর ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে এটা পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে একনেকের সভায় উপস্থাপন করবেন প্রধান বিচারপতি।’ আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের সঙ্গে সচিবালয়ের সব ব্যয় সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে যখন উচ্চ আদালতের বাজেট অনুমোদন করা হবে। এই বাজেট ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা উচ্চ আদালতের থাকবে।
