সম্মানি ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইমাম মুয়াজ্জিনদের
বললেন তারেক রহমান
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্মানি ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম-খতিব পরিষদ আয়োজিত জাতীয় সম্মেলন-২০২৫-এ লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়েছি। কর্মজীবনে যিনি যে পেশায় নিয়োজিত হতে চান, কিংবা যে চাকরি করেন, এর জন্য দরকার দক্ষতা, সততা। দেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদকে কেন্দ্র করে আরও কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যায় এ বিষয়ে বিএনপি সবার পরামর্শ চায়। তিনি আরও বলেন, অনেক মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের চাকরি মসজিদ কমিটির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আমি মনে করি এটা হওয়া উচিত নয়। এটা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় সার্ভিস রুল প্রণয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। কারণ ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। তারেক রহমান বলেন, লাখ লাখ মসজিদ, মাদ্রাসা, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসাশিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিমূলক কার্যক্রমের বাইরে রেখে দেশে কখনোই টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা থেকে বিএনপি আগামী দিনের কর্মসূচিতে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ইমামণ্ডখতিব পরিষদের দাবির বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বেশ কয়েকটি দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করার সব রকম সুযোগ রয়েছে। ইমাম-খতিব–মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল (চাকরিবিধি) প্রণয়নের দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক। অনেক মসজিদে মসজিদ কমিটির ইচ্ছা–অনিচ্ছার ওপরে ইমাম-মুয়াজ্জিনের চাকরি নির্ভর করে, এটি হতে পারে না। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সার্ভিস রুল প্রণয়নের ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোগ নেবে। অন্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগও গ্রহণ করবে। তবে প্রতিটি দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ যাতে বিএনপিকে দেওয়া হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি মনে করে, সমাজ সংস্কারকের ভূমিকা পালনকারী ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিনদের মধ্যে যাঁরা আর্থিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন বাস্তবতায় তাঁদের মধ্যে যাঁরা আর্থিক টানাপোড়েনে আছেন, তাঁদের প্রতি মাসে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানী ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। ক্ষমতায় যেতে পারলে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের সম্মানী দেওয়ার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। একই সঙ্গে ইমাম–মুয়াজ্জিনদের আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী করার জন্য ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করার চিন্তা রয়েছে বিএনপির।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজি, হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব প্রমুখ।
বাংলাদেশে কোরআন ও সুন্নাহর বিপরীতে আইন করা হবে না, থাকলে বাতিল করা হবে- সালাহউদ্দিন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, কোরআন ও সুন্নাহর বিপরীতে বাংলাদেশে কোনো কানুন (আইন) করা হবে না। যদি আগে করা হয়ে থাকে, সেটি বাতিল করা হবে। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম খতিব পরিষদ আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করেছিলেন। তবে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী সেটি সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছিল। এটি আবার পুনর্বহাল করা হবে।
সম্মেলনে ইমাম ও খতিবদের পক্ষ থেকে সাতটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে একটি হলো উপযুক্ত প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়া কোনো ইমাম-খতিব ও আলেমকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না।
বিষয়টির উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া, প্রাথমিক তদন্ত ছাড়া রাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে গ্রেপ্তার করা যায় না। কিন্তু বিগত সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকার দাড়ি-টুপির বিরুদ্ধে ছিল, আলেমবিদ্বেষী ছিল, তারা যে কাউকে ধরে নিয়ে এসে জঙ্গি বানানোর নাটক করত। সেই বাংলাদেশ এখন নেই। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নবযাত্রা শুরু হয়েছে। এই দেশে আইনকানুনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো বেআইনি কাজ কাউকে করতে দেওয়া হবে না।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি মদিনার ইসলামে বিশ্বাস করে এবং বাংলাদেশে যত ফিরকা-ফেতনা আছে, এগুলোর অবসান চায়। অবশ্যই সম্মিলিতভাবে ইমাম-খতিবরা সেভাবে কাজ করবেন। মসজিদে যেন দুনিয়ার কোনো কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দেওয়া না হয়। সেটি তাদের খেয়াল রাখতে হবে। মসজিদ, ইমাম, খতিবদের যাতে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখা হয়। রাজনৈতিক চর্চার জন্য বহু কেন্দ্র আছে, যাতে কোনো বিতর্ক না হয়, সেটা ইমামণ্ডখতিবদের খেয়াল রাখতে হবে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজি, হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব প্রমুখ।
সম্মেলনে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন মাওলানা আজহারুল ইসলাম। এগুলো হলো সব ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু হয়ে ইসলামি শরিয়াহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে; রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে ইমাম-খতিবদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রতিটি জেলা, বিভাগীয় এবং থানা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে ইমাম-খতিবদের সম্পৃক্ত করতে হবে; মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ করতে হবে; দেশের সব মসজিদের ইমামদের জন্য সার্ভিস রোল-নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে এবং মসজিদ কমিটিতে সম্মানজনক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; উপযুক্ত প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়া কোনো ইমামণ্ডখতিব ও আলেমকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না; সরকার স্বীকৃত দাওরায়ে হাদিসের সনদপ্রাপ্ত আলেমদের সরকারি মসজিদে ইমাম-খতিব নিয়োগ ও স্কুল-কলেজে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং কাজি নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ইমাম-খতিবগণ কর্তৃক সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রম, যেমন: মাদক ও যৌতুক নিরোধ, সুদ, ঘুষ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনে নিরুৎসাহিত করা এবং পারিবারিক ঐতিহ্য ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষামূলক প্রভৃতি কার্যক্রমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে এবং এ জন্য সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।
