আক্রান্ত ৭৭১৭, ১১ জনের মৃত্যু
কক্সবাজার
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার অফিস
কক্সবাজারে চলতি মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) পর্যন্ত এ মাসে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। তবে আক্রান্ত হয়েছে ৩০৮ জন। এ পর্যন্ত চলতি বছর জেলায় ৭ হাজার ৭১৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭২০ জন রোহিঙ্গা নাগরিক।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর জেলায় ১০ জন রোহিঙ্গা ও একজন স্থানীয় বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দুই বছরের তুলনায় এ বছর আক্রান্ত কম হলেও মৃত্যু বেড়েছে। এদিকে কক্সবাজারে মশা নিধন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার প্রধান কারণ হলো বর্জ্য ও আবর্জনার স্তূপ এবং অবৈধ দখল। বিশেষ করে পর্যটন এলাকাগুলোতে হোটেল-মোটেল থেকে নির্গত বর্জ্য এবং অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট করে ফেলার কারণে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের জন্য একটি বড় ভোগান্তির কারণ এবং ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মতো রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
মশার উপদ্রবের কারণ : হোটেল থেকে নির্গত বর্জ্য, জমে থাকা আবর্জনা এবং বিভিন্ন খাল ভরাট করার ফলে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। খাল এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক জলাশয় অবৈধভাবে দখল করার কারণে পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, যা মশার উপদ্রব বাড়াতে সাহায্য করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণ তাপমাত্রা মশা এবং অন্যান্য রোগ বহনকারী জীবের প্রজনন ও বেঁচে থাকার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে, যা মশার উপদ্রব বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
মশার উপদ্রবের প্রভাব : পর্যটন এলাকাগুলোতে মশার কারণে পর্যটকদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন। মশাবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগগুলোর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মশার উপদ্রব স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সমাধানের উপায় : সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং হোটেলগুলোর বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। খালগুলো থেকে আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে।
অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খাস জমিগুলো উদ্ধার করতে হবে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। মশানিধনে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ বাড়াতে হবে এবং মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মশানিধন কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। নিয়মিত ফগার মেশিন চালানো বা লার্ভা ধ্বংসে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঘরে থাকা দায় হয়ে গেছে। কুতুবজুম ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইয়্যিদ মঞ্জু বলেন, ‘মশার কামড় অতিষ্ঠ করছে, শিশুরা ঘুমাতে পারছে না’। কয়েল বা স্প্রে কাজ করছে না।
পৌরসভার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, ড্রেন, খাল ও আবর্জনা মশার প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে এবং ফগার মেশিনের ধোঁয়া পর্যাপ্ত না হওয়ায় কার্যকারিতা কম।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ফিল্ড হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এরইমধ্যে কক্সবাজার শহর, রোহিঙ্গা শিবির ও আশপাশের এলাকায় এডিস মশার প্রজনন ঠেকাতে ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক পণ্য, নালা-নর্দমা, খাল-বিল পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
