আক্রান্ত ২৫০০ মৃত্যু ছয়

কুমিল্লা

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নজরুল ইসলাম দুলাল, কুমিল্লা

কুমিল্লায় বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এ জেলায় আড়াই হাজারের অধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ক্রমাগতভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় অর্ধশত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের চিত্র এমন হলেও বেসরকারি তথ্যে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) ও বিভিন্ন পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রমের অপর্যাপ্ততার কারণে মশার উপদ্রব এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এতে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু দাউদকান্দি উপজেলাতেই ১২ জন রয়েছেন। চলতি বছরের গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মারা গেছেন। চলতি বছরের জুন মাসে দাউদকান্দি পৌরসভায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছিল। সে সময় দোনারচর গ্রামের ইউসুফ আলী, মাকসুদা বেগম এবং শাহিনুর আক্তারসহ তিনজন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই সময় শুধু দাউদকান্দি পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই ৬ শতাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যার ফলে ওই দুই ওয়ার্ডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে এলেও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এটি আবার বাড়তে শুরু করেছে।

কুমিল্লা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল হক জানান, তিনদিন আগে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর কমলেও তার শরীর দুর্বল। তার পরিবারের আরও দুজন এবং কয়েকজন সহকর্মীও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য নয়। ফগার মেশিন দিয়ে লোক দেখানো স্প্রে করে চলে যায়, যার ফলে নগরীতে ডেঙ্গু মহামারি রূপ নিচ্ছে। একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার তিনজন সহকর্মীও আক্রান্ত। তারা বলছেন, নগরীতে মশক নিধন কর্মসূচি নেই বললেই চলে। যার কারণে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ব্যাপক হারে হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতার কারণেই ঘরে ঘরে ডেঙ্গু বাড়ছে। কুসিক সচিব মোহাম্মদ মামুন বলেন, মশক নিধন কর্মসূচিতে লোকবলের অভাব রয়েছে। এছাড়া কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য মাত্র ১০টি ফগার মেশিন ও ২০টি স্প্রে মেশিন আছে। আর এই কাজে নিয়োজিত লোকবল মাত্র ২০ জন। তিনি বলেন, জনবল ও সরঞ্জমাদির সংকটের কারণে নগরীতে যথাযথভাবে মশক নিধন করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা মশক নিধনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কুমিল্লা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রেজা মো. সারোয়ার আকবর বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া ডেঙ্গু সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়। আমরা প্রতিনিয়ত সভা-সেমিনার করছি এবং সবাইকে বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই সচেতন হলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ও ডেঙ্গু সংক্রমণ হ্রাস পাবে।