বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল ইসলাম অমর

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কয়েকদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন এবং বিদেশে নেওয়ার মতো স্থিতিশীল নয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে যে মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে, তারা গত শুক্রবার রাতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে সভা করেছেন। সেখানে সব চিকিৎসকই বর্তমান অবস্থা, ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে মতামত দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আপাতত বিদেশে নেওয়ার মতো স্থিতিশীল নয়। তবে প্রয়োজনীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভিসা, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ সব রকম যোগাযোগ রাখা হয়েছে। তিনি ফ্লাই করার মতো অবস্থায় এলে বিদেশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, হাসপাতালে নেতাকর্মীসহ বহু মানুষের ভিড়ের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিব্রত হচ্ছে এবং এতে ম্যাডামসহ অন্যান্য রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। বিএনপি মহাসচিব অনুরোধ করে বলেন, অনুগ্রহ করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভিড় করবেন না। সময়মতো আমরা ম্যাডামের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক হেলথ বুলেটিন জানাবো। এদিকে, মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন জানিয়ে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফেসবুক পোস্টে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। গতকাল শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া পোস্টে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ ও সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন। তার রোগমুক্তির জন্য দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল স্তরের নাগরিক আন্তরিকভাবে দোয়া অব্যাহত রেখেছেন। প্রধান উপদেষ্টা তার রোগমুক্তির জন্য দোয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার সর্বত সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।’
তারেক রহমান আরও লেখেন ‘দেশ বিদেশের চিকিৎসক দল বরাবরের মতো তাঁদের উচ্চমানের পেশাদারিত্ব ছাড়াও সর্বোচ্চ আন্তরিকত সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। বন্ধু প্রতীম একাধিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উন্নত চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য সব প্রকার সহযোগিতার আকাঙক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সর্বজন শ্রদ্ধেয়া বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সবার আন্তরিক দোয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন করায় জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একই সাথে বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য সবার প্রতি দোয়া অব্যাহত রাখার জন্য ঐকান্তিক অনুরোধ জানাচ্ছি।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্বেগ : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবরে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল শনিবার রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিবের গণমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দেশবাসীর কাছেও দোয়াও চান রাষ্ট্রপতি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে মাঝরাতে হাসপাতালে যান মির্জা আব্বাস। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা দূরত্ব বজায় রেখে তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি, আমাদেরকে চিনতে পেরেছেন এবং আমরা সালাম দিয়েছি, উত্তর দিয়েছেন।
উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া : অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একটি ‘বিশেষ সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল শনিবার। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেছেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হয়। এই সংশোধনের ফলে বর্তমান আইনের কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এনজিও নিবন্ধনের নিয়ম সহজ হয়েছে। অনুদান অবমুক্তর শর্তগুলোও সহজ করা হয়েছে। এখন থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদানের ক্ষেত্রে আর অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। এছাড়া সভায় পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া উত্থাপিত হয়েছিল। তবে অধ্যাদেশটি আরও বিস্তারিতভাবে এবং সংশোধিত আকারে পরবর্তী পরিষদ সভায় উত্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
সভায় প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আরব আমিরাতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বন্দী থাকা বাকি ২৪ জনকে অচিরেই মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করেন। তিনি জানান, দুই-তিন দিনের মধ্যেই তাঁরা দেশে ফিরবেন।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ারে গেলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল শনিবার দুপুরে তিনি রাজধানীর বাসাবো থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অবহিত হন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন খালেদা জিয়া। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার পরিকল্পনা পরিবারের -মাহদী আমিন : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেই পরিবারের সদস্যরা তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন। গতকাল শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ কথা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই উপদেষ্টা। মাহদী আমিন লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তার চিকিৎসা পরিচালিত হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে। লন্ডন থেকে সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ডা. জুবাইদা রহমান দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। মায়ের চিকিৎসায় যেন কোনো বিলম্ব বা সীমাবদ্ধতা না থাকে সেজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ তদারকি করছেন তারেক রহমান।’
মাহদী আমিন বলেন, ‘হাসপাতালে নেত্রীর শারীরিক অবস্থার খবর নিতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ভিড় করলেও ইনফেকশনের ঝুঁকির কারণে কাউকে সিসিইউতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। দূর থেকেই মানুষ ভালোবাসা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলে তাকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে লন্ডনের সেই হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, যাদের তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের শুরুতে চার মাস চিকিৎসা নিয়ে খালেদা জিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি লাভ করেছিলেন। পাশাপাশি একটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসজ্জিত বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থার উদ্যোগও চলছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশবাসীর দোয়া ও ভালোবাসায় বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে। আধুনিক চিকিৎসা শেষে তিনি আবারও দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করবেন, নেতৃত্ব দেবেন এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ভূমিকা রাখবেন।’
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় জামায়াত আমিরের দোয়া : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গত শুক্রবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির সংবাদ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তার সার্বিক শারীরিক অবস্থা জানতে জামায়াত নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের দ্রুত ও পূর্ণ রোগমুক্তি কামনা করেন জামায়াত আমির। তিনি আরও বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দোয়া করছি, তিনি যেন খালেদা জিয়াকে দ্রুত আরোগ্য দান করেন, তার সব কষ্ট লাঘব করেন এবং তার জন্য উত্তম ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দেন। ডা. শফিকুর রহমান সারা দেশের মানুষের সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্যও দোয়া করেন।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেন মামুনুল হক : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক। গতকাল শনিবার সকাল ৭টার দিকে হাসপাতালে যান মামুনুল হক। হাসপাতালে পৌঁছে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। মাওলানা মামুনুল হক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা ও আরোগ্য কামনা করে দোয়া করেন। খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া করার জন্য খেলাফত মজলিসের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে হাসপাতালে যান এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। এরআগে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান হেফাজতে ইসলাম। সকাল পৌনে নয়টার দিকে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব ও অন্যান্য নেতাদের হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
খালেদা জিয়ার অবস্থা ক্রিটিক্যাল তবে স্থিতিশীল -তাসনিম জারা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ক্রিটিকাল তবে স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখে এসে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ডা. তাসনিম জারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে আছেন, নিবিড় পরিচর্যায় আছেন। উনি সজ্ঞানে আছেন, সজাগ আছেন। শারীরিক অবস্থা ক্রিটিকাল তবে ফাইট করছেন। উনি অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট (উন্নত চিকিৎসা) পাচ্ছেন। এনসিপির এই নেত্রী আরও বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) দলমত সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সবসময় ফাইট করেছেন। আমরা দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে উনার জন্য দোয়া করবো।
এদিকে, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিত তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে উনাদের (বিএনপি) যে লড়াই...যে (বাংলাদেশ) গণতান্ত্রিক উত্তরণের দিকে যাচ্ছে, সেটি যেন উনি (খালেদা জিয়া) দেখে যেতে পারেন।’ শেখ হাসিনার সরকারের সময় খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা নিতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সবাই উনার (খালেদা জিয়া) জন্য দোয়া করছেন উনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন এবং ফ্যাসিস্ট, খুনি হাসিনার ফাঁসি দেখে যেতে পারেন।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও ফ্লাই করার মতো শারীরিক অবস্থা নেই -মান্না : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তবে তার শারীরিক অবস্থা এখন ফ্লাই করার মতো নয় বলে জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। গতকাল শনিবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ শেষ গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা জানান। মান্না বলেন, চিকিৎসকরা মনে করছেন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা শিগগির ‘ফ্লাই করার মতো স্টেবল হবে’। তিনি জানান, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে নেওয়ার সম্ভাব্য বিকল্প ঠিক করা হয়েছে, তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি আশা করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন।
খালেদা জিয়া এখনো শঙ্কামুক্ত নন -খোকন : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। গতকাল শনিবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেখতে এসে তিনি একথা বলেন। খায়রুল কবীর খোকন জানান, উনি এখনো আউট অব ডেঞ্জার নন। আগের মতোই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্টেবল আছেন, কিন্তু এখনও ইমপ্রুভ করেননি। ডাক্তাররাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলতে এবং বিএনপি আশাবাদী, তিনি দ্রুত সুস্থ হবেন। বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে খোকন বলেন, উনাকে বাইরে নেওয়ার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। সবকিছুই নির্ভর করছে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। মেডিকেল টিমই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সকাল থেকেই বসুন্ধরা এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিভিন্ন পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে।
খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও স্থিতিশীল -নাসীরুদ্দীন : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। গতকাল শনিবার সকালে তিনি ও এনসিপির নেতারা খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে যান। এরপরে দুপুরে পাটওয়ারী ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান। ওই পোস্টে এনসিপির এই নেতা জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি চিকিৎসক ও নার্সদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারছেন। তিনি খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবাইকে দোয়া করতে আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সিসিইউতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ধারাবাহিক নিবিড় পর্যবেক্ষণে চলছে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা। খালেদা জিয়া ফুসফুসে সংক্রমণ থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর দেখা দেয় নিউমোনিয়া। এরসঙ্গে রয়েছে কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের পুরোনো সমস্যা। ফলে পরিস্থিতি এমন-একটি রোগের চিকিৎসা দিতে গেলে আরেকটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাকে ‘অত্যন্ত সংকটময়’ বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা খরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির নেতারা বলছেন, গত দুই দিনে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকেরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্ভব হলে দ্রুত বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছেন।
