খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘খুব ক্রিটিক্যাল’

* দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের নিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে : মির্জা ফখরুল * এভারকেয়ার হাসপাতালে বিদেশি মেডিকেল টিম * খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত তথ্যে ডা. জাহিদ ছাড়া অন্য সূত্র ব্যবহার না করার অনুরোধ বিএনপির * দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন জামায়াতের নায়েবে আমির

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঢাকার একটি হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার লিভারজনিত সংকট, কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস, শ্বাসকষ্টসহ একাধিক শারীরিক জটিলতা একসঙ্গে দেখা দেওয়ায় এক সপ্তাহ আগে জরুরি ভিত্তিতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে, গত রোববার থেকে খালেদা জিয়া ‘খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে’ চলে গেছেন।

চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার ফুসফুসের জটিলতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক মূল্যায়নের পর তাকে বিশেষায়িত ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে অভ্যন্তরীণ রোগ, শ্বাসতন্ত্র ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি চিকিৎসক দল তার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। তার অবস্থার অগ্রগতি বা স্থিতি নিয়ে পরিবারকে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল সোমবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের যুক্ত রাখা হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, ম্যাডাম অসুস্থ। আমাদের চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। দেশি-বিদেশী সব চিকিৎসককে যুক্ত রেখেই তার চিকিৎসা চালানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আমরা সবসময় গোটা দেশবাসী এই দোয়া করছি যে, তিনি যেন তাকে (খালেদা জিয়া) সুস্থ করে আবার আমাদের মাঝে পাঠিয়ে দেন।’

এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশী চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করছে। বোর্ডে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরাও রয়েছেন। লন্ডন থেকে বেগম জিয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে তারেক রহমান সার্বক্ষণিকভাবে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং দেশি-বিদেশী চিকিৎসকদের সঙ্গেও সমন্বয় করছেন। সোমবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ব্রিফিং করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া ‘খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে’ চলে গেছেন। গত রোববার রাত থেকে খালেদা জিয়া এ অবস্থায় গেছেন। আজম খান বলেন, ‘গতকাল (রোববার) রাত থেকে ম্যাডাম খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে চলে গেছেন। ফাইট করছেন আমাদের মাঝে ফিরে আসার জন্য। এখনো অবস্থা ক্রিটিক্যাল আছে। বলার মতো কোনো কন্ডিশনে এখনো তিনি আসেননি। সারা জাতির কাছে দোয়া চাওয়া ছাড়া আর কিছু বলার নেই।’

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘বর্তমানে খালেদা জিয়া ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন। সিসিইউ থেকে আইসিইউ, এরপরে ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট, যা- ই বলেন। আমি এগুলোর বাইরে বলব যে ম্যাডাম খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন।’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের চিকিৎসকেরা যুক্ত ছিলেন। এখন চীনের চিকিৎসকেরাও যুক্ত হয়েছেন বলে জানান আজম খান। তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে ক্লান্তিহীনভাবে চেষ্টা করছেন। বাদবাকি আল্লাহ ভরসা।’

এভারকেয়ার হাসপাতালে বিদেশি মেডিকেল টিম : খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার জন্য গতকাল দুপুরের দিকে পাঁচ সদস্যের একটি বিদেশি মেডিকেল টিম এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছে। মেডিকেল বোর্ড মনে করছে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজন আছে।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত তথ্যে ডা. জাহিদ ছাড়া অন্য সূত্র ব্যবহার না করার অনুরোধ বিএনপির : বিএনপি চেয়ারপার্সনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের বক্তব্য ছাড়া অন্য কোনো সূত্র ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সোমবার বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমের প্রতি এই অনুরোধ জানান।

শায়রুল কবির খান বলেন, গণমাধ্যমের কাছে অনুরোধ করা- গণতন্ত্রের মাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের বক্তব্য ছাড়া কেউ অন্য কোনো সূত্র বা কারো বক্তব্য ব্যবহার করবেন না। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বা কোনো সিদ্ধান্ত হলে মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হবে।

খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন জামায়াতের নায়েবে আমির : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও আরোগ্য কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অপরিসীম ত্যাগ, সাহস ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং রাষ্ট্র গঠনে সারাজীবন ভূমিকা রেখেছেন। দীর্ঘ ১৫ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে তার অনমনীয় অবস্থান ও আন্দোলন জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাবন্দি রেখে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা তাকে মৃত্যুঝুঁকির দিকে ঠেলে দিয়েছে। পর্যাপ্ত ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় তার শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি হয়েছে।

নায়েবে আমির বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ায় আমি এবং দেশের সব মজলুম মানুষ মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছি।

ফ্যাসিবাদের পতনের পর গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের এই সন্ধিক্ষণে দেশবাসী প্রত্যাশা করে, তিনি জাতির পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। এ সংকটময় মুহূর্তে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তার দ্রুত রোগমুক্তি ও পূর্ণ সুস্থতা কামনা করি। আল্লাহ তাকে ও তার পরিবারকে হেফাজত করুন। বিবৃতিতে এটিএম আজহারুল ইসলাম খালেদা জিয়ার পরিবার-পরিজন ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে দেশবাসীর নিকট তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য মহান রবের দরবারে দোয়ার অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, তার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটজনক’। পরদিন তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই খালেদা জিয়ার।