বিএনপিতে যোগ দিয়ে ‘গর্বিত’ রেজা কিবরিয়া
* বিএনপিতে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়েছে : ফখরুল
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে যোগ দেন তিনি।
রেজা কিবরিয়ার যোগাদানকে স্বাগত জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের একজন অত্যন্ত বিশিষ্ট সন্তান যিনি তার নিজের যোগ্যতা বলে আইএমএফ’র অত্যন্ত উচ্চ পদে কাজ করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে দেশে এসে ২০১৮ সালে তিনি গণফোরাম থেকে আমাদের নির্বাচনি জোটের মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। পরবর্তী সময় আপনারা দেখেছেন, তিনি রাজনীতির সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত যে ড. রেজা কিবরিয়া আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ আসনে (বাহুবল-নবীনগর) ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। বিএনপি মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন ড. রেজা কিবরিয়া তার অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নতুন বিনির্মাণে তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে অবদান রাখবেন। বিএনপিতে যোগদানের জন্য রেজা কিবরিয়াকেও ফুল দেন মির্জা ফখরুল।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করলাম। এ জন্য আমি খুবই গর্বিত। কারণ এই দলের ইতিহাসটা গণতন্ত্রের ইতিহাস। দুই দুইবার তারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের থেকে। একবার শেখ মুজিবের গণতন্ত্র ধ্বংস থেকে জিয়াউর রহমান রক্ষা করলেন। আর দ্বিতীয় বার শেখ হাসিনা ও এরশাদের হাত থেকে গণতন্ত্র উদ্ধার করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। যিনি এখন অনেক অসুস্থ, সবাই দোয়া করবেন তার জন্য। তিনি আবার এটা রক্ষা করলেন।
বিএনপির প্রতি আকৃষ্টতা নিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, এটা একটা ঐতিহাসিক ভূমিকা। একটা দল দুইবার বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষা করেছে। আমি ইতিহাসে এরকম কোনও উদাহরণ অন্য কোনও দেশে দেখি না। এসব কারণে আমি বিএনপির প্রতি আকৃষ্ট এবং জিয়াউর রহমান আমার আদর্শ। তার সাহস, ব্যক্তিগত চরিত্র ও সততা এতো বছরপরও সবাই এখনও গর্ব করে। এমন মানুষ আর বাংলাদেশে জন্মাবে না হয়তো।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বিএনপি এখন যেই নেতৃত্বে আছে এবং সিনিয়র নেতারা যারা আছেন, তারা আমাদের নতুন প্রজন্মের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। তাদের যে ভিশন দেশের জন্যে এটা আগের ভিশন না। অনেক কিছু বদলে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার যে রক্ত এটা কোনও কোয়ালিটির আপনারা যদি চিন্তা করেন– তার বাপ কী ছিলেন এবং মা কী আছেন এটা ইনক্রেডিবল। বাংলাদেশে আর কারও ওই কোয়ালিটির ব্ল্যাড লাইন নেই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই তাকে সাহায্য করবো। তিনি এ মুহূর্তে বিদেশে আছেন, আমাদের মানুষের কাছে নেই একদিকে এটি দুঃখজনক। তবে আরেকদিক থেকে আমি এটাতে খুশি, তিনি বিদেশের সব কোয়ালিটি, সব প্রশাসনিক, সব জিনিসগুলি নিজে দেখছেন, শিখছেন এবং সেগুলো বাংলাদেশে আনবেন। আমি মনে করি, তার ইংল্যান্ডে থাকাও দেশের মানুষের জন্যে একটা লাভজনক জিনিস। তিনি অনেক কিছু নিয়ে আসবেন, এ দেশে যেটা আগে ছিল না।
রেজা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশটাকে উন্নত করতে এশিয়ার প্রথম তিন দেশের মধ্যে আনতে অসম্ভব কিছু না। আপনারা ভাবছেন, আমি কী রূপকথার মতো বলছি। এটা পরে দেখবেন। আমি ৩৫টা দেশে কাজ করেছি প্রায় ৪০ বছর। আমাদের দেশের মানুষের কোয়ালিটি ‘টপ ক্লাস’। এই মানুষগুলোকে দিয়ে একটা প্রথম সারির দেশ তৈরি করা যাবে।
তিনি বলেন, বিএনপিকে এই সুযোগটা যদি ভোটাররা দেন তাহলে আপনারা দেখবেন এ দেশের জন্যে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তারা কী করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আশা করি, আমার এলাকায় নবীগঞ্জ-বাহুবল সেখানে আমার কাজ করার একটা সুবিধা হবে এবং যদি ওনারা মনে করেন জাতীয় কোনও জায়গায় আমাকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার। আমি চাই, দেশের জন্য কাজ করতে। আমি খুব ভালো চাকরি ছেড়ে এসেছি। আইএমএফের চাকরি লাভজনক একটা চাকরি। সেই চাকরি ছেড়ে আমি আসছি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে। এটা ছিল আমার বাবার স্বপ্ন। আশা করি, তা পূরণ করতে পারবো। যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদসহ অন্য নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন , ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ‘বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেকই যোগদান করছেন। এখন বিএনপিতে যোগ দেওয়ার তো হিড়িক পড়ে গেছে, ধুম উঠে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি একমাত্র দল, জনগণ মনে করছে যে সামনে সরকার গঠন করতে পারলে তারা দেশে সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারবে এবং অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।’
রেজা কিবরিয়ার বিএনপিতে যোগদান সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আমার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাকে আমাদের দলে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা আশাবাদী যে ড. রেজা কিবরিয়ার যোগদান আমাদের কর্মকাণ্ডগুলোকে আরও শক্তিশালী করবে। এই যোগদান সারা দেশে একটা প্রভাব বিস্তার করবে। অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নতুন বিনির্মাণে তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে তিনি অবদান রাখবেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন যে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে অনেক কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। তার নেতৃত্বে আমরা ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি, তার নেতৃত্বে জনগণ যদি সমর্থন করে আমরা বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে নির্মাণ করতে চাই। এই রাষ্ট্র নির্মাণে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে তিনবার সরকার গঠন করেছি এবং এর আগে আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। আমাদের সমস্ত এই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বিএনপি যদি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায় তাহলে অবশ্যই বিএনপি বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।’ ২০১৮ সালের নির্বাচনে রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ আসনে (বাহুবল-নবীনগর) ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেধাভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও অগ্রচিন্তার মানুষদের নিয়ে বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ ও আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। আমাদের ৩১ দফার মূল বক্তব্যও তাই।’ তিনি বলেন, ‘এখন প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য আমাদের প্রয়োজন অনেক মেধাবী নেতৃত্ব ও প্রতিভাবান মানুষদের। যারা যথেষ্ট জাতীয় রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কারে ভূমিকা রাখতে পারবেন এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের স্বপ্নের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ নির্মাণ করতে পারবো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ড. রেজা কিবরিয়ার বিএনপিতে যোগদানকে আমরা স্বাগত জানাই।’
