বিএনপির ভোট ৩০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীর ২৬

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ৩০ শতাংশ ভোটার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে ভোট দেবেন। জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবেন ২৬ শতাংশ ভোটার। অর্থাৎ দুই দলের মধ্যে ব্যবধান মাত্র ৪ শতাংশ।

মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে রিপাবলিকান পার্টি-ঘনিষ্ঠ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। আইআরআইয়ের ওয়েবসাইটে সোমবার জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চের পক্ষে জরিপটি পরিচালনা করেছে একটি স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় সিএপিআই পদ্ধতিতে সরাসরি উপস্থিত হয়ে।

এই জরিপে ৪ হাজার ৯৮৫ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি। বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাঙামাটি জেলা থেকে কোনো নমুনা বাছাই করা হয়নি।

জরিপকারীদের দাবি, এই জরিপের আস্থার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। তবে আরও নিশ্চয়তার ভিত্তিতে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এদিক-সেদিক হতে পারে।

জরিপ অনুসারে, একই শর্তে, অর্থাৎ আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ভোট দেবেন ৬ শতাংশ ভোটার। জাতীয় পার্টিকে ভোট দেবেন ৫ শতাংশ ভোটার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ভোট দেবেন ৪ শতাংশ ভোটার। এবং অন্যান্য দলকে ভোট দেবেন ৮ শতাংশ ভোটার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জরিপ অনুসারে সমর্থন বিচারে প্রধান দুই দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ব্যবধান কম থাকায় ছোট দলগুলো ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। বিশেষ করে এনসিপি, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে যেকোনো একদিকে নির্বাচনি জোটের পাল্লা ভারী করে দেওয়ার সুযোগ আছে।

পছন্দে এগিয়ে জামায়াত, এরপর বিএনপি : দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে পছন্দে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। এ দলটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্নে ৫৩ শতাংশ মানুষ পছন্দের কথা বলেছেন। বিএনপিকে নিয়ে প্রশ্নে দলটিকে পছন্দের কথা বলেছেন ৫১ শতাংশ মানুষ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যক্রম পছন্দ করেছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতি নিজেদের পছন্দের কথা জানিয়েছেন ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পছন্দ করেছেন ২৫ শতাংশ মানুষ।

দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে : দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারও ভালো কাজ করছে বলে জনমত জরিপে উঠে আসে। দেখা যাচ্ছে, ৬৯ শতাংশ মানুষের আস্থা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ নাকি ‘মন্দ’ মনে করছেন? ২৯ শতাংশ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। ‘মোটামুটি ভালো’ বলেছেন ৪৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৭২ শতাংশ মানুষ দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। অন্যদিকে ৭ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এ সময়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। ৪২ শতাংশ মনে করছেন, ভুল পথে এগোচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে : অন্তর্বর্তী সরকার কেমন করছে- এই প্রশ্নের জবাবে ২৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। আর ‘মোটামুটি ভালো’ বলেছেন, ৪৪ শতাংশ মানুষ। সব মিলিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন ৭০ শতাংশ মানুষ। পুরুষদের মধ্যে ৭২ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট। নারীদের মধ্যে এ হার ৬৯ শতাংশ।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘মোটামুটি খারাপ’ করছে। ১১ শতাংশের মতে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ‘খুবই খারাপ’।

আস্থা অধ্যাপক ইউনূসে : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘খুবই ভালো’ করছেন বলে মনে করেন ২৬ শতাংশ। আর ৪৩ শতাংশ মনে করছেন, তিনি ‘মোটামুটি ভালো’ করছেন। সব মিলিয়ে ৬৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখেছেন।

নারীদের তুলনায় বেশি সংখ্যক পুরুষ মনে করেন অধ্যাপক ইউনূস ভালো করছেন। পুরুষদের মধ্যে এ হার ৭০ শতাংশ। নারীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ।

অন্যদিকে জরিপে অংশ নেওয়া ১৭ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘মোটামুটি খারাপ’ করছেন। ৯ শতাংশের কাছে প্রধান উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড ‘বেশ খারাপ’।

ভোট দেবেন কতজন : আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল- আসছে নির্বাচনে ভোট দেবেন কি না? ৬৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ভোট দেবেন। ২৩ শতাংশ বলেছেন, কিছুটা সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা কম। ২ শতাংশ ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মতামত দেননি আরও ২ শতাংশ মানুষ। যারা ভোট দিতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৭১ শতাংশ। অন্যদিকে নারী ৬১ শতাংশ।

বাংলাদেশ কি সঠিক পথে : অগ্রযাত্রার পথে এখনকার অর্থনৈতিক অবস্থাকে ভালো বলেছেন ২০ শতাংশ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ১৭ শতাংশ; আর ৮ শতাংশ মনে করছেন, খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার হয়েছে ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম গতি পেয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে বলে মনে করেন ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

অন্যদিকে জরিপে অংশ নেওয়া ২২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করছেন, দ্রব্যমূল্য এখনো বেশি। ১৮ শতাংশের মতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। গণতন্ত্রের অভাব বোধ করেন ৮ শতাংশ। আর ৬ শতাংশের মতে, কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনো কম এবং দুর্নীতি বাড়ছে। তাঁদের মতে, এগুলো দেশের অগ্রযাত্রার পথকে বিচ্যুত করতে পারে।

২০২৩ সালের জরিপে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ভোটারদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ মনে করেন দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে প্রধান কারণ বলে মনে করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ। অপর দিকে ৪৪ শতাংশ মানুষ মনে করেছিলেন দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। এর প্রধান কারণ, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন।

একক প্রধান সমস্যা কোনটি : বাংলাদেশের জন্য এককভাবে কোন সমস্যাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? জবাবে ২১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দুর্নীতি। অন্যদিকে ১৮ শতাংশের মতে, সেটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অপরাধ আর সন্ত্রাসবাদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মনে করেন ১২ শতাংশ। ৮ শতাংশের মতে, বেকারত্ব। নির্বাচনী ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দলে সংস্কারকে প্রধান সমস্যা বলেছেন ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ৬ শতাংশের মতে, প্রধান সমস্যা মাদক।

বেশির ভাগই দেশ নিয়ে আশাবাদী : জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি দেশ নিয়ে আশাবাদী। জবাবে ‘খুবই আশাবাদী’ বলেছেন ৪২ শতাংশ মানুষ। ‘মোটামুটি আশাবাদী’ বলেছেন ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে ১১ শতাংশ বলেছেন, তাদের আশা ‘খুবই ক্ষীণ’। ‘একটুও আশাবাদী নন’ আরও ৬ শতাংশ মানুষ।