জার্মান এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে, যাত্রা কাল
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা কাতার সরকারের উদ্যোগে জার্মানি থেকে আসছে। কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে জানান, কাতার সরকার একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছে, যা জার্মানি থেকে ঢাকায় আসবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মেডিকেল টিমের সুপারিশ অনুযায়ী বিমানটি আসার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার কথা থাকলেও ‘কারিগরি ত্রুটি’ দেখা দেওয়ায় কাতার বিকল্প বিমান ভাড়া করেছে।
কাতার সরকার যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছে সেটি হলো বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০৪ (সিএল৬০)। জার্মানির শীর্ষস্থানীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও মিশন-ক্রিটিক্যাল এভিয়েশন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ এটি পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটি বোম্বার্ডিয়ার বিজনেস জেটের বহর পরিচালনা করে, যা রোগীদের জন্য চিকিৎসা পরিবহন ও ভিআইপি পরিবহন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবসা পরিচালনা করে। চ্যালেঞ্জার ৬০৪ দীর্ঘপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় সক্ষমতার জন্য পরিচিত। এটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা ফ্লাইটের জন্য উপযোগী।
শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে কাল রোববার খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হবে : শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে ও মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলে খালেদা জিয়া আগামীকাল রোববার লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন। কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কারিগরি ত্রুটির কারণে না আসায় খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি কিছুটা পিছিয়ে গেছে। গতকাল সকাল ১০টায় বিএনপির মিডিয়া সেল তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ কথা জানিয়েছে।
ফেসবুক পেজে বিএনপি জানায়, কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এখনো না পৌঁছানোয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে। ওই পেজে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এটি শনিবার পৌঁছাতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা যদি যাত্রার জন্য উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলে ইনশা আল্লাহ ৭ তারিখ (রোববার) তিনি লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবেন।’
চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে- ফখরুল : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথাগুলো বলেন। এর আগে মসজিদে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের আরও বলেন, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উচ্চমানের চিকিৎসকেরা তাঁর চিকিৎসা করছেন। তবে এই চিকিৎসা আরও উন্নত হাসপাতালে করা প্রয়োজন বলে সবাই মনে করছেন। সে কারণে তাঁকে ইংল্যান্ডের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারারুদ্ধ করে রেখেছিল বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, এর মধ্যে দুই বছর তাঁকে নির্জন, পুরোনো কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। সবাই সন্দেহ করেন, সেখান থেকেই তাঁর রোগের সূচনা হয়। চিকিৎসার অভাবে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনার সময় থেকে গত চার বছর তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। এরপর তিনি সুস্থ হলেও কিছুদিন আগে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দোয়া চেয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
হাসপাতালে শাশুড়ি খালেদা জিয়াকে দেখে ধানমন্ডিতে বাবার বাড়িতে জুবাইদা রহমান : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখার পর সেখান থেকে ধানমন্ডির পৈতৃক বাসভবনে পৌঁছেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় এভারকেয়ারে ছিলেন তিনি। পরে বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতাল ত্যাগ করেন জুবাইদা রহমান।
জুবাইদা রহমান লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। শাশুড়িকে দেখতে সেখান থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তিনি। বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটের দিকে জুবাইদা রহমান বসুন্ধরা এলাকায় হাসপাতালটিতে পৌঁছান। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতায় সারা দেশে বিশেষ দোয়া : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সারা দেশে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশের মসজিদগুলোতে বিএনপির পক্ষ থেকে এই দোয়ার আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে রাজধানীর নয়াপল্টনে মসজিদে আয়োজিত দোয়া মাহফিলের অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা।
এ সময় তিনি বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম জিয়া গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। কারাগার থেকেই তার রোগের সূচনা। চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ হন তিনি।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষে দল-মত নির্বিশেষে এই মহান নেত্রীর জন্য দোয়া করছেন। তিনি যেনো সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন এবং দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে তার অভিভাবকত্বে আমরা উত্তোরণ হয়ে যেতে পারি, সেজন্য দেশের জনগণে আল্লাহ তায়ালার কাছে আকুতি করেছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রীর সুস্থতার জন্য চিকিৎসকরা প্রাণপণে চেষ্টা করছেন তাকে সুস্থ করে তোলার। আগামীকাল কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছালে রোববার লন্ডনে নেয়া হবে বেগম জিয়াকে। তবে উনি ফ্লাই করতে পারবেন কি না সেটা চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে তিনি এখনো গুরতর অসুস্থ। সে কারনে তিনি ফ্লাই করতে পারবেন কিনা সেটা চিকিৎসকরা নিশ্চিত করলেই তাকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্য রওনা দেয়া হবে।
সবার কাছে দলীয় চেয়ারপার্সনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে পরম করুনাময়ের কাছে দোয়া করি- যিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গেছেন, সেই নেত্রী যেনো সুস্থ হয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসেন। রাজধানীসহ দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণও দোয়ায় অংশ নেন। একই সঙ্গে দেশনেত্রীর সুস্থতা কামনায় মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার জন্যও অনুরোধ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৩ দিন ধরে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটি কিছুটা উন্নতির দিকে। হৃদ্?যন্ত্রে জটিলতাও কিছুটা কমেছে। তবে অন্য সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মধ্যবর্তী নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (এইচডিইউ) থেকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়।
