চট্টগ্রামে আট দলের বিশাল সমাবেশ

‘ফ্যাসিবাদীরা বিদায় নিয়েছে ফ্যাসিবাদ এখনও আছে’

* ১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিজয় চাই। সেই আকাঙ্ক্ষার বিজয় হবে কোরআনের আইনের মাধ্যমে : ডা. শফিকুর রহমান * নির্বাচনকে পেছনে হটানোর ষড়যন্ত্র চলছে। যথাযথ পরিবেশ তৈরি করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে হবে : ফয়জুল করীম * সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখা শেষ- এবার আল-কোরআনের বাংলাদেশ দেখতে চাই : মামুনুল হক

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদীরা বিদায় নিয়েছে, ফ্যাসিবাদ এখনও বিদায় নেয়নি। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, ফ্যাসিবাদ কালো না লাল, কোনো ফ্যাসিবাদকে আর বাংলার জমিনে বরদাশত করা হবে না, ইনশাআল্লাহ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে আন্দোলনরত ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কেউ যদি আবার ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলেন, কেউ যদি আবার ফ্যাসিবাদীদের মতো আচরণ করেন তারা, তারা কোনো পথ খুঁজে পাবেন আমরা জানি না। কিন্তু আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, এ দেশের তরুণ, ছাত্র-জনতা এবং মেহনতি মানুষ আর ফ্যাসিবাদকে বরদাশত করবে না। আমরা অতীতে রুখে দিয়েছিলাম, আল্লাহর ওপর ভরসা করে। ভবিষ্যতে কেউ মাথা তুললে তাও রুখে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা কোনো বিশেষ দলের বিজয় চাচ্ছি না, ৮ দলেরও বিজয়ও চাচ্ছি না। আমরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিজয় চাই। সেই আকাঙ্ক্ষার বিজয় হবে কোরআনের আইনের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ। এটা প্রমাণিত হয়েছে, এর বাইরে গিয়ে কোনো কিছু দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত মানুষ স্বস্তিতে কথা বলতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতন, অবিচারের শিকার হয়ে কোথাও সামান্যটুকু বিচার পায়নি। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ভেসে গিয়েছিল। দেশের টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা হয়েছিল। এক নয়, দুই নয় ২৮ লাখ কোটি টাকা।

তারা রাস্তাঘাট ও দালান তৈরি করেছিল, রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। একবার একটা মেয়েকে বলতে শুনলাম, আজ যদি কবি বেঁচে থাকতেন তিনি বলতেন, বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই, চাঁদের জায়গায় চাঁদ তো আছে বাঁশগুলো সব কই। ফ্যাসিবাদীরা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনাতেন। বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ এখন কানাডা। হ্যাঁ বাংলাদেশ কানাডা হয়েছে, তাদের জন্য। এই ফ্যাসিবাদ শুধু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে আঘাত করেনি। তারা বড় আঘাত করেছে আলেমণ্ডওলামার ওপর। হেফাজতের নেতারা সারা দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের বিরুদ্ধে কিছুসংখ্যক বেয়াদব প্রকাশ্যে চর্চা করেছিলেন। তাদের জবাব দেওয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করেছিলেন। তাদের হত্যা করা হয়েছিল। ৫ মে হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উপহাস করে বলেছিলেন, কেউ মারা যায়নি। ওইখানে লাল রঙের তরল পদার্থ দেখা গেছে, সেটা মোল্লা মৌলভীরা রঙ ছিটকিয়ে রেখেছিল। লজ্জা, মানুষ খুন করার পর রক্ত নিয়ে উপহাস। এটিই ছিল তাদের বৈশিষ্ট্য। জামায়াত আমির বলেন, এরা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল, রক্তাক্ত হাতে বিদায় নিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর পিলখানায় ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন। তারা জুলাই-আগস্টে সারা দেশের আমাদের সন্তানদের হত্যার পর বলেছিলেন, অমুকের মেয়ে দেশ ছেড়ে পালায় না। অথচ..। আমাদের দুঃখ লাগে, তারা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও আমাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। দেশের মানুষের জানমাল রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সদস্য ও কর্মকর্তাদের তারা ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রের একটা প্রতিষ্ঠানকেও তারা ঠিকমতো দাঁড়াতে দেয়নি। বিচার বিভাগ ধ্বংস করেছে, নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে বগলের নিচে নিয়েছে, মানবাধিকার কমিশনকে তারা পকেটে ঢুকিয়েছে। এভাবে সব কিছু তারা ধ্বংস করেছে।

নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে- ফয়জুল করীম : আট দলের মহাসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচনকে পেছনে হটানোর ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা সরকারকে বলতে চাই, নির্বাচনের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ভেবেছিলাম এবার বৈষম্য দূর হবে, চাঁদাবাজ মুক্ত দেশ গড়বো। কিন্তু ২৪-এর পরও চাঁদা বন্ধ হয়নি। নিরাপত্তা নেই, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন না। এ দেশ আমরা চাইনি। তিনি বলেন, আগামীতে একটা আন্দোলন হবে। আগামীতে ইসলামি হুকুমত কায়েম করতে চাই। ইসলামি হুকুমত হলে কোনো অন্যায়, বৈষম্য থাকবে না। কেউ খাবে কেউ খাবে না- তা হবে না। দেশের একটা টাকাও বিদেশে পাচার হবে না। আগামী নির্বাচনে মানুষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে মন্তব্য করে ফয়জুল করীম বলেন, কেউ দেশের পক্ষে আর কেউ ভারতের পক্ষে। আজ থেকে দেশের পক্ষে ইসলামকে বিজয়ী করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, এবার ইসলামের বাংলাদেশ চাই- মামুনুল হক : আগামীতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বিজয়ের মাধ্যমে কোরআনের শাসন শুরু হবে বলে মন্তব্য করেছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখা শেষ- এবার আল কোরআনের বাংলাদেশ দেখতে চাই, ইসলামের বাংলাদেশ দেখতে চাই। মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আমরা বাংলাদেশে আমাদের অধিকার চাই, মালিকানা কায়েম করতে চাই। গরিব মেহনতি মানুষকে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। ইসলামে যে বৈষম্যহীনের কথা বলা হয়েছে, পুঁজিবাদর অর্থব্যবস্থা কবর দিয়ে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবতায়ন করতে হবে। আগামীতে ইসলামি হুকুমত কায়েম করতে চাই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইসলামি হুকুমত হলে কোনো অন্যায়, বৈষম্য থাকবে না। কেউ খাবে কেউ খাবে না- তা হবে না। দেশের একটা টাকাও বিদেশে পাচার হবে না। এসময় আগামী গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল দুপুর পৌনে ২টার দিকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এ উপলক্ষ্যে বেলা ১২টা থেকে সমাবেশস্থলে লোকজন জড়ো হতে থাকেন। লালদিঘী মাঠেই জুমার নামাজ আদায় করেন সমাবেশে উপস্থিত লোকজন। সমাবেশে বক্তব্য দেন ৮ দলের শীর্ষ নেতারা। সমাবেশে ৮ দলের ঘোষিত পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন, জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সমান সুযোগের পরিবেশ নিশ্চিত করা, বিগত সরকারের সব জুলুমণ্ডনির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা।