সিলেটে জামায়াত আমির

একদল অপকর্ম করে চলে গেছে, আরেক দল সেই দায়িত্ব নিয়েছে

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সিলেট প্রতিনিধি

গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিলেটে সমমনা আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপিকে কৌশলে তুলাধুনা করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, একদল অপকর্ম করে চলে গেছে, আরেক দল বাংলাদেশে অপকর্মের দায়িত্ব নিয়েছে। একদল চাঁদাবাজি করে জনগণের ব্যানার পুড়িয়েছে, আরেকদল আবার তার চাইতে পেশিশক্তিতে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। একদল দখলদার বনতে গিয়ে জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে, আরেকদল বেপরোয়া দখলদার হয়ে পড়েছে। কেউ বাঁকাপথে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বলব- সেই সূর্য আর উঠবে না। গতকাল শনিবার বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে জামায়াত আমির এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৫৪ বছরে দেশের মানুষ মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ, বর্গীরা চলে যাওয়ার পর দেশের ভেতরে যারা চিল তারা জনগণের সম্পদ ছু’ মেরে চলে গেছে। দেশে দেশে বেগমপাড়া তৈরি করেছে। এভাবে অপকর্মের দায় নিয়ে ফ্যাসিস্টরা পালিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিজমের কালো ছায়া বাংলাদেশ থেকে যায়নি।

জামায়াত আমির বলেন, দেশবাসী আশা করেছিল, অতীতে অপকর্মের অপরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতিবিদরা নতুন রাজনীতি শুরু করবেন। কিন্তু তারা পুরোনো ধারায় পড়ে আছে। তারা সংস্কারে রাজি না, তারা সনদ বাস্তবায়নে রাজি না। গণভোটেও রাজি ছিল না। তার পরে ধাক্কাইয়া রাজি হয়।

আগামী নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি বিএনপির এক নেতার বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, তারা নির্বাচন বলে চিৎকার করে জনগণকে বেহুঁশ করে ফেলেছিল। এখন ভিন্ন সুরে কেউ কেউ বলছেন। এসব ভালো নয়, বাংলাদেশের জনগণ তাদেরকে আগামীতে তাকে লাল র্কাড দেখাবে। এই লাল কার্ড থেকে যদি বাঁচতে গিয়ে নির্বাচনে প্রহসন করে তাদের সব ষড়যন্ত্র ভন্ডুল করে দেবে। কেউ যদি আবার চিন্তা করে বাকাপথে ক্যু করে ক্ষমতায় যাবে; তাদের বলবো- বন্ধু সেই সূর্য আর উঠবে না। নতুন সূর্য কোরআন হাতে নিয়ে উঠবে। আগামী দেশ হবে দেশপ্রেমিক জনতার।

ইসলামী অন্যদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের ঘর সেখানে নয়। ঘরে ফিরে আসুন। আপনারা আমাদের ভাই। দেশের মুক্তিপাগল মানুষ জানে আগামীতে তারা কোথায় ভোট দেবে। এখন কেউ রক্ত চক্ষুকে ভয় পায় না, অমুক দেশ, তমুক দেশকে ভয় পায় না।

আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক এই দেশ জনগণের সম্পত্তি। খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে ও মহানগর জামায়াতের নায়বে আমির নুরুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টির নায়বে আমির আব্দুল মজিত আতহারী, খেলাফত আন্দোলনের নায়বে আমির মুজিবুর রহমান আজাদ, ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মোসাদ্দেক বিল্লাহ জালানী, খেলাফত মজলিসের রেজাউল করিম জালালী, নেজামে ইসলামের আব্দুল মাজেদ আতহারীসহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়রা নেতারা।

চাঁদাবাজদের পক্ষে জনগণ নেই : শনিবার বিকেলে সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে ইসলামী ও সমমনা আট দলের বিভাগীয় সর্বশেষ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, নির্বাচনের জন্য যারা পাগল হয়ে যাচ্ছিল, এখন ওরা নির্বাচনকে পেছানোর জন্য পাগল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাশি যখন বামে ঘোরে, তখন যত পরিকল্পনা সব বামেই যায়। আপনারা যত শয়তানি পরিকল্পনা করবেন, ততই বাংলাদেশের জনগণ থেকে আপনারা বিচ্ছিন্ন হবেন, কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, আমরা যারা দেশপ্রেমিক রয়েছি, মানবতা প্রেমিক রয়েছি, আমরা যদি ভুল করি, যদি ব্যর্থ হই। যখন আমাদের ইতিহাস প্রজন্ম লিখবে, তখন কলঙ্কজনক ইতিহাস আমাদের জন্য লিখবে।

মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, আজকে এ সমাবেশ প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষ আমাদের পাঁচদফা পক্ষে রয়েছেন। আমাদের এ দাবিগুলো নিয়ে আমরা রাস্তায় নামলাম কেন? এর মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো ৫ আগস্টে হাজার হাজার মায়ের কোল সন্তানহারা হলো। অনেকে চোখ হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী সাহেব গুম হয়ে ফেরত আসেনি। আর কোনোদিন আসবে বলে মনে হয় না। কিন্তু আজকে দুঃখের মধ্যে বলতে হয়, যে বাংলাদেশের মধ্যে ৫৩ বছর পর্যন্ত যারা আমাদেরকে জিম্মি করে রেখেছিলো তাদেরও চরিত্র আজ আমরা দেখেছি। তারা তাদের নিজেদের কাছে নিজেরা নিরাপদ নয়। আজকে তারা নিজেরা নিজেদের খেয়ে ফেলছে।

তিনি বলেন, আমার দুঃখ হয়, এত গুম হলো, যখন হলো লাখ লাখ দলীয় নেতাকর্মীর জীবনকে বিপন্ন হলো, জেলের মধ্যে গেল। আমাদের দাবি ছিল জুলাই ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান।

দেশকে সুন্দর করার জন্য সংস্কার হবে। এ খুনীদের, গুমিদের, টাকা পাচারকারীদের দৃশ্যমান বিচার হবে। এরপরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু আমরা দেখে হতবাক। আজকে সংস্কারের ব্যাপারে বাধা, দৃশ্যমান বিচারের ব্যাপারে বাধা। আজকে নির্বাচনের জন্য যারা পাগল হয়ে যাচ্ছিল। আজকে যখন তারা দেখেছে, আজকে বাংলাদেশের জনগণ বেসিকদের পক্ষে এবং জালেম চাঁদাবাজদের পক্ষে নয়, ওদের প্রত্যাবস্থান করেছে। এখন ওরা পাগল হয়ে গেছে, আজকে নির্বাচনকে আবার পিছাবার জন্য। কিন্তু আমরা পরিষ্কার বলব নির্বাচন পেছানো যাবে না।

নতুন ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দিতে চাইছে- মামুনুল হক : বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন- নির্যাতন ও কারাবরণের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে খেলাফতে মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘এ দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতারা রক্ত দিয়েছেন, ফাঁসির কাস্টে উঠেছেন, কিন্তু অন্যায়ের সামনে মাথা নত করেননি।’

শনিবার দুপুরে সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ইসলামী ও সমমনা আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ সব কথা বলেন। মামুনুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি বিতাড়িত হওয়ার পরও বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির বাংলাদেশি কিরণরা আবারো নতুন ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দিতে চাইছে। বাংলার মাটিতে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদকে জায়গা দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন শুধু প্রতীক নির্বাচন নয়, এটি ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক ধরনের গণভোটও।’ তাই আট দলের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণকে দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

খেলাফতে মজলিসের আমির আরও বলেন, ‘জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে দেশ এখন দুই শিবিরে বিভক্ত। একটি পক্ষ যেকোনোভাবে সনদ ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কাজ ব্যাহত করতে চায়। তারা ধরে নিয়েছে, বিগত সময়ে যেভাবে একদলীয় শাসন চলেছে, ভবিষ্যতেও তাই হবে। বাংলার মানুষ এবার তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’