চিকিৎসকদের ‘সেফ টু ফ্লাই’ সার্টিফিকেটের অপেক্ষা

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সম্ভাবনা এখন পুরোপুরিই নির্ভর করছে চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ডের চূড়ান্ত মতের ওপর। বোর্ড ‘সেফ টু ফ্লাই’ সার্টিফাই করলেই তাকে (খালেদা জিয়া) দ্রুততম সময়ে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। ডা. জাহিদ বলেন, সব প্রস্তুতি রয়েছে। নিরাপত্তা ও চিকিৎসা-দুটো দিকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি পেলেই বিদেশে নেওয়া হবে। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন। দলীয়ভাবেও চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তকে ‘ফাইনাল অথরিটি’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

গত ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালনকারী মেডিকেল বোর্ডের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার প্রশংসা করে ডা. জাহিদ বলেন, মেডিকেল বোর্ড অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে আসছে। তাদের পরামর্শেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা একনিষ্ঠভাবে চলছে। এ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডা. জাহিদ। তিনি বলেন, সময়ের অভাবে সবকিছু দেখতে পারি না। কিন্তু অনুরোধ, কেউ গুজব ছড়াবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না, অন্যকেও বিভ্রান্ত করবেন না। দোয়া করবেন—আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।

বিদেশযাত্রা প্রসঙ্গে ডা. জাহিদ হোসেন আরও জানান, প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র, লজিস্টিক ও মেডিকেল অ্যারেঞ্জমেন্ট তৈরি রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে কাতার সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকারও সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।

খালেদা জিয়ার সুস্থতার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের আশাবাদের কথা উল্লেখ করে ডা. এজেডএম জাহিদ বলেন, এর আগেও তিনি আরও গুরুতর অবস্থায় ছিলেন আল্লাহর রহমতে তখনো সুস্থ হয়েছিলেন। এবারও আমরা আশাবাদী, ইনশাআল্লাহ দ্রুতই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই ঢাকায় আসবে কাতারের রয়েল অ্যাম্বুলেন্স : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড সবুজ সংকেত দিলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে কাতারের রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে কাতারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনিই এই বিষয়ে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ম্যডামের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে কাতারের রয়েল অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ আসবে। তারা এখন সেইভাবে প্রস্তুত আছেন। মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে এবং বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিয়ে যাবে। সবকিছুই কাতার কর্তৃপক্ষ অ্যারেজমন্ট করেছে।’ জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নই, কাতার কর্তৃপক্ষই জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের অ্যারেজমেন্ট করে দিচ্ছে।

এনামুল হক জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য রয়েল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে সবকিছু করা হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শারীরিক অবস্থা আগের মতই আছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে বেগম খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনও ফ্লাই করার সক্ষমতা অর্জন করেননি। সেজন্য লন্ডন যাত্রা বিলম্ব হচ্ছে। তারা আরও জানান, গত দু’দিনে মেডিকেল বোর্ড কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। সেগুলোর প্রতিবেদনও তারা পর্যালোচনা করছেন। গতকাল (শুক্রবার) দু’দফা মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক হয়। প্রতিদিনই বোর্ডের সভায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ ঘোষণা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ফ্লাইটটিকে ‘ভিভিআইপি’ উল্লেখ করে শিডিউল অনুমোদন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ফ্লাইট অবতরণের ক্লিয়ারেন্সও দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি রেগুলেশন (এফএসআর) বিভাগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে। পুরো প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় হওয়ায় যেকোনো সময় ‘অ্যাম্বুলেন্স বিমান’ ঢাকায় অবতরণ করতে পারে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে কাতার থেকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা থাকলেও নির্ধারিত বিমানে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সেটি বাতিল হয়। পরে কাতার সরকারের সহায়তায় জার্মানি থেকে অন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন বিমানটির ক্লিয়ারেন্স সংক্রান্ত নথি ইতোমধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর হাতে পৌঁছেছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিভিআইপি মুভমেন্ট হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ল্যান্ডিং থেকে টেকঅফ পর্যন্ত সব ধরনের নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় রুট ও অবতরণের সময় চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণ পাওয়া মাত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এসএম রাগীব সামাদ বলেন, আমাদের সব ধরনের পেপারওয়ার্ক সম্পন্ন হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে আসার কথা ছিল। তবে যাত্রার তারিখ পরিবর্তন হচ্ছে।

এদিকে গতকাল শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবি এম আব্দুস সাত্তার ঢাকা বলেন, ম্যাডামের লন্ডন যাত্রা পিছিয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো তারিখ বলতে পারছি না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার পর যেকোনো দিন উনাকে নেওয়া হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা গত কয়েকদিন একই জায়গায় আছে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেরিতে আসার পাশাপাশি ম্যাডোমের শারীরিক অবস্থা ফ্লাই করার জন্য কতটা উপযুক্ত সেটাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।’

বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে কাতারের ব্যবস্থাপনায় নতুন করে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা, সেটি ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় অবতরণের কথা থাকলেও সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করে ৯ ডিসেম্বর করা হয়েছে। সেটি ঢাকা থেকে ১০ ডিসেম্বর ছেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।

খালেদা জিয়াকে দেখতে আবারও এভারকেয়ারে ডা. জুবাইদা : সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন তার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতালের ফটক দিয়ে ডা. জুবাইদা রহমানের গাড়ি প্রবেশ করতে দেখা যায়। এর আগে গত শুক্রবার লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছেই শাশুড়ির খোঁজ নিতে সরাসরি হাসপাতালে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর দুপুর ১২টার দিকে তিনি এভারকেয়ারে যান। সেখানে আড়াই ঘণ্টার বেশি অবস্থান করেন। বেলা আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির পৈতৃক বাসায় গেলেও রাতে আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চকিৎসাধীন আছেন বেগম খালেদা জিয়া। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছে। তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানও সেই বোর্ডের সদস্য। বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিয়ে যেতে গত শুক্রবার ডা. জুবাইদা ঢাকায় এসে পৌঁছান।