ভারত-সমর্থিত ৯ ‘সন্ত্রাসী’ হত্যা, অভিনন্দন শাহবাজের

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযানে (আইবিও) ভারত- সমর্থিত ‘ফিতনা আল-খাওয়ারিজ’ গোষ্ঠীর ৯ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছেন পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল শনিবার সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখার দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শুক্রবার ট্যাংক ও লাক্কি মারওয়াত জেলায় সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনী ওই পৃথক দুই অভিযান পরিচালনা করে।

আইএসপিআর জানায়, ট্যাংক জেলায় নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের অবস্থানকে কার্যকরভাবে লক্ষ্যবস্তু বানায় এবং তীব্র গোলাগুলির পর সাত সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, লাক্কি মারওয়াতে পরিচালিত অপর অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী আরও দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহত ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী নিরাপত্তা বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে বহু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। আইএসপিআর আরও জানায়, ওই এলাকায় আর কোনো ভারত–সমর্থিত সন্ত্রাসী লুকিয়ে আছে কি না, খুঁজে বের করে নির্মূল করতে অভিযান চলছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাকিস্তানে বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ দূর করতে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগ ‘আজম- এ- ইস্তেহকাম’ পূর্ণ উদ্যমে চলতে থাকবে।

খাইবার পাখতুনখাওয়ার ট্যাংক ও লাক্কি মারওয়াতে ফিতনা আল-খাওয়ারিজ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সফল দুটি আইবিও পরিচালনার জন্য প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ইসলামাবাদ বলছে, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব হামলার পেছনে থাকা কিছু গোষ্ঠীকে মদত দিচ্ছে ভারত। তবে ইসলামাবাদের এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে আফগান তালেবান ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তান বারবার আফগান তালেবান সরকারকে বলেছে, তাদের ভূখণ্ড যেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতে না পারে। সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। আফগানিস্তান- পাকিস্তান সীমান্তে মাঝেমধ্যেই দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলাও চলছে।

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাকিস্তান- আফগানিস্তান সীমান্তে গোলাগুলি, নিহত চার : পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অন্যতম প্রধান সীমান্ত ক্রসিংয়ে রাতভর গোলাগুলির ঘটনায় চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের এক কর্মকর্তা গতকাল শনিবার এ তথ্য দিয়েছেন। গত অক্টোবরে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়েছিল। এবার অস্ত্রবিরতি চলার মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

আফগানিস্তানের দক্ষিণে স্পিন বোলডাক অঞ্চলের গভর্নর আবদুল করিম জাহাদ এএফপিকে বলেন, সংঘর্ষে আরও চারজন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের সীমান্ত শহর চামানের স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, হালকা আহত হওয়া তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে চামান ও স্পিন বোলডাক সীমান্তে ‘বিনা উসকানিতে’ হামলার অভিযোগ এনেছে। অথচ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর দুই দেশই একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছিল। গত শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ (শনিবার) রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’ তবে পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানই প্রথমে গুলি চালিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মোশাররফ জায়েদি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘অল্প কিছুক্ষণ আগে আফগান তালেবান প্রশাসন সীমান্তে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে।’ জায়েদির দাবি, তাদের বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সমুচিত জবাব দিয়েছে। সীমান্তের আফগান অংশের বাসিন্দারা এএফপিকে বলেন, রাত প্রায় ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে গোলাগুলি শুরু হয় এবং দুই ঘণ্টার মতো চলতে থাকে। কান্দাহার প্রদেশের তথ্য বিভাগের প্রধান আলী মোহাম্মদ হাকমল বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়। কয়েকটি বেসামরিক বাড়িতে মর্টারের গোলার আঘাত লেগেছে।

২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে। বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে নিরাপত্তা ইস্যু। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে, বিশেষ করে পাকিস্তান তালেবানকে (টিটিপি) আশ্রয়- প্রশ্রয় দিচ্ছে কাবুল। এ টিটিপি পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে হামলা চালিয়ে থাকে। তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে। গত অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতে ৭০ জনের বেশি নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়।

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে লড়াই বন্ধ হয়। পরে দোহা ও ইস্তাম্বুলে একাধিক দফায় আলোচনার পরও তারা কোনো স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যকার সীমান্ত এখনো বন্ধ রয়েছে। গত মাসে কাবুল অভিযোগ করেছিল, সীমান্ত এলাকার ওপর পাকিস্তানের বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনই শিশু। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।