দোরগোড়ায় তফসিল ভাষণ রেকর্ড কাল

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অনিশ্চয়তা কেটে অবশেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল দোরগোড়ায় এসে গিয়েছে। তফসিল দেয়ার উদ্দেশ্য আগামী কাল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ভাষণ রেকর্ড করবেন। ইতোমধ্যে আগামী সংসদ ভোট উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি জানায়, তফসিল ঘোষণা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ভাষণ আগামী কাল বুধবার ১০ ডিসেম্বর রেকর্ড করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে বিটিভি ও বেতারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের ভাষণ রেকর্ড করা হবে। ওই দিন অথবা পরদিন ১১ ডিসেম্বর এই ভাষণ সম্প্রচার করা হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভাষণের মধ্য দিয়েই সিইসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সরাসরি (লাইভ) ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করেছিলেন। তবে এবার ভাষণটি আগে রেকর্ড করে পরে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পরই সাধারণত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিইসির ভাষণ ও নির্বাচনের তফসিল প্রচার করা হতে পারে।

ইসি জানিয়েছে, ওইদিনই দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করবে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। নির্বাচন কমিশনের রেওয়াজ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার দিনই রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করে থাকে নির্বাচন কমিশন।

প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি ও বেতারে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। রেওয়াজ অনুযায়ী যেদিনই বক্তব্য রেকর্ড হয় সেদিনই সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনই রেকর্ডের জন্য বিটিভি ও বেতারকে ডেকেছিল নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচনের তফসিল সরাসরি সম্প্রচার করেছিল নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী কাল বুধবারই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এর আগে গত রোববার নির্বাচন কমিশনের দশম সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, খুব শিগগিরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এবং সিইসির বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য বিটিভি ও বেতারে চিঠি পাঠানো হবে। তফসিল-পূর্ব বেশ কিছু কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলেও তিনি জানান। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবশেষে দুই ধাপে ৮১টি দেশীয় সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দিল ইসি। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখা থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ৭৩টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রাথমিক তালিকা নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে যে কোনো দাবি, আপত্তি বা অভিযোগ ২০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে লিখিতভাবে জমা দিতে বলা হয় এবং অভিযোগের সপক্ষে সহায়ক প্রমাণও জমা দিতে হয়।

দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে প্রথম ধাপে ৬৬ দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ইসি। এই ৬৬ পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে ২০৩০ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ইসির নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, দ্বিতীয় ধাপে যাচাই-বাছাই করে আরও ১৫ পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ১৫ সংস্থাকে চলতি বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০৩০ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ছাপাতে ইসির ৯১৫ টন চাহিদার বিপরীতে কর্ণফুলি পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) হতে ইসিতে ৫৩১ মেট্রিক টন কাগজ পাঠানো হয়েছে।

বাকি ৩৮৪ মেট্রিক টন কাগজ ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন, কেপিএম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১১ কোটি ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭ শত ৮১ টাকা।

কেপিএম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কেপিএম মিল হতে ব্রাউন, সবুজ ও গোলাপি কালার কাগজের চাহিদাপত্র দিয়েছে। ডিসেম্বর এর মধ্যে এই কাগজ সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সিংহ ভাগ কাগজ সরবরাহ করেছি। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাগজ সরবরাহ শেষ করা হবে। জানা যায়, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত কর্ণফুলি পেপার মিল হতে চলতি অর্থ বছরে ৯ শত ১৫ মেট্রিক টন কাগজের চাহিদাপত্র দিয়েছে বাংলাদেশ স্টেশনারী অফিস (বিএসও)। বিএসও হতে নির্বাচন কমিশন এই কাগজ কিনে নিয়ে ব্যালট পেপার ছাপবে। কর্ণফুলি পেপার মিলে কাগজ উৎপাদনে প্রচুর পানির প্রয়োজন। যা কাপ্তাই হ্রদ থেকে ব্যবহার করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানান, কাগজ ছাপানোর তিনটি মেশিনের মধ্যে বর্তমানে একটি মেশিন চালু আছে। একটি মেশিনে দিনে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন হয়।