বিএনপি-জামায়াত কথার লড়াই তুঙ্গে
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির একসময়ের মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে বাকযুদ্ধ ও তিক্ততা বেড়েই চলেছে। দুই দলই একে অন্যের বিরুদ্ধে ‘আওয়ামী লীগের ভাষায়’ কথা বলার অভিযোগ করছে, যা রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি করেছে।
প্রসঙ্গত, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরোধিতা করা জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ হয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। এরপর ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর জামায়াতের সমর্থন নিয়েই সরকার গঠন করেছিল বিএনপি। পরে ১৯৯৬ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জোটবদ্ধ হয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ের পর জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। জামায়াতের দুজন শীর্ষ নেতা প্রথমবারের মতো সরকারেও ঠাঁই পেয়েছিলেন মন্ত্রী হিসেবে।
তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এক পর্যায়ে দূরত্ব তৈরি হয় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যকার জোটও ভেঙ্গে যায়। এরপর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দলের মতবিরোধ আরও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করায় তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করে জামায়াত ইসলামী।
আবার জামায়াতসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তুললে তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয় বিএনপি। নির্বাচন নাকি সংস্কার-কোনটি আগে কয়েক মাস আগে এমন বিতর্কেও দল দুটি একে অপরের অবস্থানের বিপরীতে ছিল। এরপর থেকেই মূলত জামায়াত নেতারা কখনও সরাসরি আবার কখনও ইঙ্গিতে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির বিরুদ্ধে। এর জবাবে বিএনপি নেতারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধিতার তথ্য দিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন জামায়াতের।
সাম্প্রতিক সময়ে দল দুটির কেন্দ্রীয় নেতারা সভা- সমাবেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে আলোচনায় আসছিলেন। তবে এটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে দুই দলের দুই শীর্ষ নেতাও সেই ধারায় বক্তব্য রাখার পর।
শনিবার সিলেটে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেওয়ার পর রোববার ভার্চুয়াল এক বক্তব্যে তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের পরস্পর সমালোচনার বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে উভয় দলের কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে। নিজ দলের প্রশংসা ও প্রতিপক্ষ দলকে ইঙ্গিত করে সমালোচনামূলক নানা পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। দল দুটির মধ্যে তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পাবনা, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, রাজশাহী ও নরসিংদীসহ দেশের কোনো কোনো জায়গায় তা সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে।
পরস্পরবিরোধী বাহাস কিংবা তিক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে, দুই দলের নেতারা এ জন্য একে অন্যকে দায়ী করে রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, ‘আমরা যা বলছি তা ইতিহাস ভিত্তিক ও সত্যি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে’। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলছেন, ‘বিএনপির দিক থেকে কিছু আক্রমণাত্মক বক্তব্য আসছে যা অপ্রত্যাশিত’।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দল দুইটির নেতাদের বক্তব্য শুনে তার মনে হয়েছে যে তারা উভয়েই একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। তার ধারণা, এটি চলতে থাকলে ভোটের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আরেকজন বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, মূল বিষয় হলো ভোট টানা এবং এক্ষেত্রে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ ইস্যু আর জামায়াত দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির ইস্যু সামনে নিয়ে এসেছে।
বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যা বলেছেন : শনিবার সিলেটে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, একদল চাঁদাবাজির কারণে জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আরেক দল আবার তার চেয়ে বেশি শক্তি নিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। একদল দখলদার বনতে গিয়ে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, আরেক দল বেপরোয়া দখলদার হয়ে উঠেছে। একদল জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, আরেক দল একই পথ ধরেছে, এমনকি নিজেদের মধ্যে মারামারিতে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে।
জামায়াতের আমিরের এ বক্তব্য ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ইঙ্গিত করেছেন। ফলে এটি বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে, যা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতায়।
ঢাকায় কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে তারেক রহমান জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘তাদেরকে তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কীভাবে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাবার আগে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য।’ সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিকে লক্ষ্য করে জামায়াত নেতারা বিভিন্ন সভা- সমাবেশে দুর্নীতির বিষয়ে যেসব অভিযোগ করেছেন তারও জবাব দিয়েছেন তারেক রহমান। ‘কেউ কেউ বলে থাকে পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির সম্পর্কে যেভাবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াতো, আমরা ইদানীং লক্ষ্য করছি কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল ঠিক একই সুরে গান গাইছে বা একই সুরে কথা বলার চেষ্টা করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাদেরও তো দু’জন ব্যক্তি আমাদের সাথে সেইসময় সরকারে ছিল, বলে বলেন তারেক রহমান।
গতকাল সোমবার এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তারেক রহমান বলেছেন, ‘এখন দেশে এক ধরনের প্রচারণা চলছে- একজন বিশেষ কেউ ভাল, আর বাকি সবাই খারাপ এটা গণতন্ত্রের জন্য ডেঞ্জারাস ব্যাপার’।
জামায়াত ধর্ম নিয়ে কাজ করে, ধর্মকে ব্যবহার করে না- আমির : সোমবার ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসে আট দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তাদের দল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর রাজনীতি করে না, বরং জনগণের রাজনীতি করে। ধর্ম নিয়ে কাজ করাই জামায়াতের নীতি, ধর্মকে কখনোই রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয় না। তিনি বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি, জাতীয় নির্বাচন, গণভোট আয়োজন এবং রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইইউ প্রতিনিধিরা জানতে চান, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে তা কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে এবং জামায়াত নির্বাচনের জন্য কতটা প্রস্তুত। এ বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ দুটো ভোট একদিনে হলে বিভ্রান্ত হতে পারেন, যার ফলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই আলাদা দিনে ভোট আয়োজন করা যুক্তিযুক্ত বলেই তারা মত দিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির আরও বলেন, ক্ষমতায় গেলে তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়তে চান, যেখানে কোনও রাজনৈতিক দলকে বাদ দেওয়া হবে না। তার ভাষায়, দেশের স্বার্থে স্থিতিশীল প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে এবং অন্তত পাঁচ বছর দেশকে দিকনির্দেশনা দিতে সব দলের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। তিনি দুইটি শর্তের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রথমত, ক্ষমতায় যারা থাকবে তারা দুর্নীতি করবে না এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেবে না। দ্বিতীয়ত, সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচারব্যবস্থায় কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বরদাশত করা যাবে না। এই দুই বিষয়ে যারা একমত হবেন, তাদের সঙ্গেই সরকার পরিচালনায় কাজ করতে জামায়াত আগ্রহী।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা রাজনীতিতে সংকট তৈরি করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুস্থতা বা অসুস্থতা মানুষের হাতে নয়। দেশবাসী তার সুস্থতার জন্য দোয়া করছে। তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের কারণে রাষ্ট্রের চলমান গতি থেমে থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন সময়মতো হওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, এ নির্বাচন সামান্য পেছালেও দেশ গভীর সংকটে পড়তে পারে। দেশের স্বার্থে ও আগামীর স্বার্থে সব রাজনৈতিক পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ১১ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে এক বক্তব্যে বলেন, ‘জামায়াতের টিকিট কাটলেই কি কেউ বেহেশতে যেতে পারবে? যারা এসব মুনাফেকি করে, তাদের কাছ থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে’।
এরপর ২০ নভেম্বর খুলনায় এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছিলেন, বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলছে। তারা বর্তমানে মাহফিলে বাধা দেয়, মা- বোনদের তালিম প্রোগ্রামে বাধা দেয়। এটি করে তারা জামায়াতকে নয়, মূলত ইসলামকে বাধাগ্রস্ত করছে। এরপর বিএনপি নেতারা জামায়াতের বিরুদ্ধে ধর্ম ব্যবহারের অভিযোগ তুলে কড়া ভাষায় তার জবাব দিয়েছেন।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত বুধবার ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘জামায়াতের জন্য আওয়ামী লীগই ভালো ছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বিরুদ্ধে ছিল, তারা এখন ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে’।
এরপর শিবির নেতা ও ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের ঠাকুরগাঁওয়ে দেওয়া এক বক্তব্যেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি নেতাদের অনেকেই। সাদিক কায়েম তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘লন্ডন, দিল্লি, পিন্ডিতে বসে আর কোনো রাজনীতি চলবে না। নতুন বাংলাদেশের রাজনীতি- দেশেই হবে সিদ্ধান্ত’। ধারাবাহিক এসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মী ও সমর্থকরা।
তিক্ততার যে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন নেতারা : বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার তিক্ততা ও বাদানুবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যা বলছি তা ইতিহাস ভিত্তিক ও সত্যি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু অপর পক্ষ যা বলছে তার কোনো প্রমাণ বা সত্যতা নেই। তারা যা করছ সেটি ব্লেম গেম ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য অনেক সময় এসে যায়। এটি হয়তো তারই অংশ। তবে,আমরা আশা করবো গণতন্ত্রের বিকাশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য বজায় রেখে আমরা সকলে রাজনৈতিক সমালোচনা করবো’। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, বিএনপির দিক থেকেই কিছু আক্রমণাত্মক বক্তব্য আসছে, যা তারা প্রত্যাশা করেননি। রাজনীতিতে স্ব স্ব দলের নীতি আদর্শ আছে। আবার কিছু বিষয় দ্বিমত ভিন্নমত আছে। দিন শেষে জনগণের জন্য রাজনীতি। আমাদের আমির বলেছেন, একটা দল নির্বাচনের জন্য প্রতিদিন কথা বার্তা বলতো। এখন বলছে না। এগুলোতো দৃশ্যমান। গণমাধ্যমে আসছে’।
মাহবুব জোবায়ের আরও বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিন্ন বক্তব্য আসা অস্বাভাবিক না, তবে শিষ্টাচার বজায় রাখার দিকে সবাই গুরুত্ব দিবে।
‘তারা একে অপরকে ঘায়েল’ করতে চাইছেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নয়াদিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলছেন, গত কিছুদিন ধরে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন পরস্পরকে নিয়ে তা দেখে মনে হচ্ছে যে ‘তারা একে অপরকে ঘায়েল’ করতে চাইছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এটি অনেকটা টিট ফর ট্যাট (ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে) এর মতো। দুই দলকেই এর দায় নিতে হবে। এভাবে টাসল (বাহাস) চললে সেটি ভোটারদেরও নিরুৎসাহিত করবে এবং ভোটে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মানুষ এতে বিরক্ত হচ্ছে’।
কেন দুটি ইস্যুতে দুই দল গুরুত্ব দিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, দুই দলই চাইছে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা সামনে এনে ঘায়েল করতে এবং এর মূল লক্ষ্য হলো ভোটের মাঠে সুবিধা করা। তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অবজ্ঞা, মুক্তিযুদ্ধের স্মারকচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলার মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে, যা নিয়ে বহু মানুষই উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত। আবার আওয়ামী লীগের সমর্থকদেরও একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট আছে, যারা এ ইস্যুতে সবসময়ই স্পর্শকাতর। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর সারাদেশে বিএনপির অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগও প্রকট। এসব কারণে বিএনপি নিজেই বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। আমার মনে হয় জামায়াতকে ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবেই বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুটি সামনে আনছে। কারণ বেশিরভাগ মানুষের কাছেই মুক্তিযুদ্ধ অনেক বড় আবেগের জায়গা। আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ভোট নিজের দিকে টানার চিন্তা তো আছেই। অন্যদিকে পাল্টা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের ইস্যু সামনে এনে জামায়াতও জনগণকে বোঝাতে চাইছে যে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির পার্থক্য নেই বলছিলেন তিনি।
