বিজয়ের মাস
ঢাকায় হানাদার বাহিনীর প্রবেশ রুদ্ধ হয়ে যায়
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ ৯ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে শুধুই ঢাকা দখলের লড়াই। সবদিকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বাইরে থেকে হানাদার বাহিনীর প্রবেশ রুদ্ধ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার চারপাশ একে একে আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, সাভার, গাজীপুরের কিছু অংশসহ ও ময়মনসিংহ দখলে নিয়ে নেয়। একাত্তরের এইদিনে সকালবেলা হানাদার বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর ঢাকা থেকে প্রথমবারের মতো জেনারেল নিয়াজী স্বীকার করেন, পরিস্থিতি নিদারুণ সংকটপূর্ণ। আকাশে শত্রুর প্রভুত্বের কারণে পুনর্বিন্যাসকরণ সম্ভব নয় বলে একটি সংকেতবাণীও পাঠানো হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। দ্রুত মুক্ত হতে থাকে একের পর এক জায়গা।
৯ ডিসেম্বর দাউদকান্দি শত্রমুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত মেঘনার সম্পূর্ণ পূর্বাঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। এর আগে কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিবাহিনীর হামলায় টিকতে না পেরে পাকহানাদার বাহিনী ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
মুক্তিবাহিনীর টার্গেট ছিল ঢাকার কেন্দ্রে প্রবেশ করে। তখন ঢাকার চারপাশে বসবসরত মানুষে সহযোগিতা নিয়ে ঢাকার দিকে এগিয়ে যাওয়া। নয় মাসের গেরিলা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে মুক্তিবাহিনীর অলআউট অ্যাকশনে নামে। ফলে একের পর এক জনপদ মুক্ত হতে থাকে ঢাকা। মুক্তিবাহিনী ও পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বহু মানুষ নিহত হয়। এখন আমরা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মানবিক মূল্যবোধের জন্য সংগ্রাম করছি। বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আমরা ধৈর্য ধরে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন একটি নৃশংস আক্রমণ শুরু করে এক কোটির বেশি শরণার্থী করতে বাধ্য করে।
আন্তর্জাতিক মহলে এদিন : ৯ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন বলেন, উপমহাদেশের আজকের পরিস্থিতির জন্য বাঙালিরা দায়ী নয়। পূর্ব বাংলার আজকের পরিস্থিতির জন্য পাকিস্তানই দায়ী। তারাই বৈষম্য, নিপীড়নের মাধ্যমে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ : ৯ ডিসেম্বর গাইবান্ধা, নেত্রকোনা, খুলনার কপিলমুনি, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস, গাজীপুরের শ্রীপুর, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, গফরগাঁও, ত্রিশাল, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত করে মুক্তিবাহিনী। টানা ৪ দিন যুদ্ধের পর অবশেষে মুক্ত হয় খুলনার কপিলমুনি। ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় ১৫৫ জন রাজাকার কপিলমুনি হাইস্কুল মাঠে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। রাজাকারদের আত্মসমর্পণের খবর শুনে চারদিক থেকে মানুষ স্রোতের মতো আসতে শুরু করে। পরে উপস্থিত জনতার রায়ে গঠিত গণআদালতের মাধ্যমে ১৫৫ জন রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর দুপুর ২টার দিকে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ দিন হানাদার মুক্ত হয় পাবনার সাঁথিয়া। সাঁথিয়ার নন্দনপুরে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় মুক্তিবাহিনীর। এক পর্যায়ে টিকতে না পেরে হানাদারেরা পালিয়ে যায়। কুষ্টিয়ার কুমারখালী মুক্তিযোদ্ধারা বেলা ১১টার দিকে কুমারখালী শহরের চারদিক ঘিরে ফেলে। এ সময় হানাদার বাহিনী শহরে ঢুকে গণহত্যা চালায়। এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ চালালে তারা কুমারখালী ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ দিন রংপুর ও দিনাজপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনী। এ সময় ২ পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে টিকতে না পেরে হানাদারেরা পালিয়ে যায়।
