ঢাকা বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আ.লীগের শরিকরা

নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আ.লীগের শরিকরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার্যক্রম-নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে না পারলেও তার শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টি অংশ নিতে পারবে। তবে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মালিক কে হবে- এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৬টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। বাকি নিবন্ধিত ৫৫টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সময়কার জাপা ও জাসদসহ মহাজোটে থাকা দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারলেও জাতীয় পার্টিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেবে না সরকার। আইনিভাবে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।

এদিকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, কেবল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হলেই তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গী হয়ে ভোটে অংশ নেয় এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি। সংসদে তারা বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখে। তবে দলের অনেকেই পুরস্কার হিসেবে হাসিনার মন্ত্রিসভায় স্থান পান।

তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির মতোই ছিল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ শরিক দলগুলো। গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের সব ধরনের সিদ্ধান্তে এক হয়ে কাজ করেছে এসব দল। হাসিনা সরকারের পতনের পর ঐকমত্য কমিশন, সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনের কোনো আলোচনাতেই এসব দলকে রাখা হয়নি। এমনকি জাতীয় পার্টিসহ এসব দল নিষিদ্ধ করার দাবিও তুলেছেন অনেকে।

তবে আনুষ্ঠানিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া, জুলাই সনদ কিংবা ইসির সংলাপে ডাক না পেলেও ভোটে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বাধা দিতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আইন তাদের বাধা দিচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। রিফাইন্ড বা অন্য কোনো নামেও দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, তাই তারা আগামীনির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি। তবে নির্বাচনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় দলটি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, মাঠের পরিস্থিতি জরিপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পারফরম্যান্স, ভোটের নিরাপত্তা, প্রার্থীদের নিরাপত্তা, ভোটার ও পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা- সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।

সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ।

পাশাপাশি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এরইমধ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে রংপুরের শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডেকে নেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন প্রার্থী দেওয়াসহ বেশ কিছু ‘চমক’ থাকবে বলেও জানান নেতারা।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এটা সত্য। সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও সিলেট বিভাগে দল থেকে ভালো ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী থাকবে। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জয়ী হতে পারে- এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী করা হবে। এরইমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীতালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি- এটা নিশ্চিত। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও তৈরি হয়নি। ভোটের আগেই নির্বাচন কমিশনকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’

এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের দাবিদার একাধিক। মালিক কে, তা আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।’ সিইসির এই বক্তব্যের পর দলটির একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আইন ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান নেতৃত্বই জাতীয় পার্টির একমাত্র বৈধ নেতৃত্ব এবং লাঙ্গল প্রতীকের একমাত্র দাবিদার।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত ৯ আগস্ট জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সম্মেলনে তিনি চেয়ারম্যান এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। তারাই এখন জাতীয় পার্টির বৈধ নেতৃত্ব।

তিনি আরও বলেন, জিএম কাদের বর্তমানে দলের একজন সাধারণ সদস্য। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাঙ্গল প্রতীকের একমাত্র দাবিদার তারাই বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জিএম কাদের বৈধভাবে লাঙ্গল প্রতীকের মালিক। এ নিয়ে কোনো রাজনীতি করার সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আরেকটি জোট গঠিত হয়েছে। জাতীয় পার্টির একাংশ ও জাতীয় পার্টি (জেপি)-এর নেতৃত্বে এই জোটের নাম ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ (এনডিএফ)। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন অংশসহ মোট ১৮টি দল এই জোটে রয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই এনডিএফ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

জোটভুক্ত ১৮টি দলের মধ্যে ৬টির নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন রয়েছে। জোটের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। সভাপতি হয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রধান মুখপাত্র হয়েছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

এছাড়া ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বাধীন জনতা পার্টি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ারকে জোটের প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে।

এনডিএফের শরিক দলগুলো হলো- জাতীয় পার্টির (জাপা) আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি), জনতা পার্টি বাংলাদেশ, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (মহসিন রশিদ), জাতীয় ইসলামিক মহাজোট, বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টি, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পার্টি, অ্যালায়েন্স ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ডেমোক্রেটিক পার্টি, জাতীয় সাংস্কৃতিক জোট, জাসদ (শাহজাহান সিরাজ), ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টি ও গণআন্দোলন।

এই জোটের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ব্রুনেই দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত