জুলাই বিপ্লব সংবিধানকে শুদ্ধ করার প্রস্তাব করেছিল
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লব সংবিধানকে উল্টে দেওয়ার প্রস্তাব করেনি; বরং এর সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততাকে শুদ্ধ করার প্রস্তাব করেছিল। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সংবেদনশীলতা- এই তিনটি গুণ জনসাধারণের বিবেকের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এসব কথা বলেন।
অনিশ্চিত সেই মাসগুলোতে একমাত্র বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ কার্যকর সাংবিধানিক অঙ্গ হিসেবে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করে যে এই সীমানার মধ্যে কোনো অধিকারকে অলীক করে তোলা হবে না, কোনো প্রতিষ্ঠানকে বন্দি করা হবে না এবং কোনো নাগরিককে পরিত্যক্ত করা হবে না।’
বিচার বিভাগের শক্তি কোনো একক পদে নয় বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগের শক্তি কোনো একক পদে নয়; বরং সততা, ভারসাম্য এবং দূরদর্শিতার সঙ্গে ন্যায়বিচার পরিবেশনের আমাদের সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যে নিহিত।’
প্রথা অনুসারে গতকাল প্রধান বিচারপতিকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রধান বিচারপতির কর্মময়জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন। পরে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এরপর বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি হিসেবে স্বল্প সময়ের এই মেয়াদে আপনি আপনার প্রজ্ঞা, মেধা ও দূরদর্শিতা দ্বারা স্থাপন করেছেন এক অনন্য বিচার বিভাগীয় মানদ-, যাকে আমি নাম দিয়েছি ‘দ্য রেফাত স্ট্যান্ডার্ড’। যা বিচারিক সাহসিকতার এবং পরম স্বচ্ছতার মূর্ত প্রতীক।...বিচার বিভাগীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে আপনি আমাদের কাছে চে গুয়েভারার মতোই এক বিপ্লবী চেতনার মানুষ হয়ে উঠেছিলেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন এক উত্তপ্ত বিপ্লবের ঋতুতে; আর বিদায় নিচ্ছেন বিজয়, শান্তি ও স্বচ্ছতার এক অনন্য ঋতুতে।’ প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আপনি নাগরিকদের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রতা দূর করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন। সমাজের সকল স্তরে বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে আপনি ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী।’ প্রধান বিচারপতির বিদায় সংবর্ধনায় তাঁর এজলাস (আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষ) আইনজীবী, আইন কর্মকর্তাসহ আগত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১১ আগস্ট দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসেবে প্রধান বিচারপতির ৬৭ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে ২৭ ডিসেম্বর। সেদিন ছুটি থাকায় গতকাল তাঁর শেষ কর্মদিবস। প্রথা অনুসারে শেষ কর্মদিবসে বিদায়ী বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়ে থাকে।
