১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল এনডিএফ

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ‘চর দখলের মত’ পরিস্থিতির শঙ্কা নিয়েই ১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপি এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশের নেতৃত্বে গড়া ২০ দলের জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার বনানীর হোটেল শেরাটনে এনডিএফের এক সংবাদ সম্মেলনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরে তিনি সেই উদাহরণ রাখতে পারতেন, আমার দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল একজন নোবেল বিজয়ী মানুষ তিনি আমাদেরকেও জয় করবেন এবং তিনি রাজনীতিতে কখনো এভাবে ছিলেন না, (আশা ছিল তিনি) সকল মানুষের মাঝে থাকবেন। কিন্তু এই গত কয়েক মাস ধরে যা দেখছি, তিনি পিছনের শক্তি প্রয়োগ করে কিছু কিছু লোককে কিছু কিছু দলকে যেভাবে সাহায্য করছেন, তাতে তো লেভেল ফিলিং ফিল্ড এখনো হল না।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছিলাম যে তিনি একটা ভালো নির্বাচন দেবেন। দিতে পারবেন। এরপরে তিনি যখন চলে যাবেন, আমরা সবাই তাকে শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখব। আমি এই ব্যাপারে এখন সন্ধিহন, যে তিনি পারবেন কিনা। এ ব্যাপারে এখনো বলা কঠিন। একটা কঠিন পরীক্ষা আছে। তারেক রহমান আসছেন, কী পরিবেশ হবে, এটা কি চর দখলের মত নির্বাচন হবে? না নিরপক্ষ হবে? দেশে বিদেশে সমাদৃত হবে? এমন একটি নির্বাচন হবে কিনা সেই সংশয় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে এখন আছে।

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মানুষের প্রশ্ন, দেশে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কানে যায় না। আমরা বড় আশা নিয়ে এখানে এই আয়োজন করেছি, আমরা নির্বাচনে যাব। আমরা নির্বাচনমুখী সব নেতৃবৃন্দ। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) দয়া করে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবেন, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয় এবং গ্রহণযোগ্য হয়। সকল দলের অংশগ্রহণে ভালো নির্বাচন দেবে সরকার সেই প্রত্যাশা আমাদের।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এনডিএফের সমন্বয়ক গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, দেশের যে অবস্থা, সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা কীভাবে নির্বাচন করব? রাজনীতিতে আমরা জাতীয়তাবাদীদের পুনর্জাগরণ চাই। নিরাপত্তার সাথে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগামী সংসদে যেতে চাই। আমরা কেউ হাদি হতে চাই না।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, জনমনে কষ্ট, ঢাকার বুকে এক ঘণ্টায় দুটি পত্রিকা অফিস ভাঙচুর, আগুন দিয়ে লন্ডভন্ড করলো, তছনছ করল। অথচ দীর্ঘ সময়ে কোনো পুলিশ এল না।

আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা, যখন তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠল, বাঁচার জন্য আকুতি করছেন, চিৎকার করতেছেন, প্রত্যেকের কাছে তারা সাহায্য চাইতেছেন। কারণ সাংবাদিকরা সবার টেলিফোন নম্বর জানেন। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা উপদেষ্টার সাথে কথা বলতে ফোন করেছেন।

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, সাংবাদিকদের প্রাণে আমরা রক্ষা করতে পেরেছি, কিন্তু ভবন দুইটা রক্ষা করা যায়নি। এ যাবৎকাল বহু সরকার আসছে পাকিস্তান থেকে এই পর্যন্ত, ১৯৪৭ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত, এত বড় আঘাত সংবাদপত্রের উপরে, সাংবাদিকদের উপর আসে নাই। আমরা নিন্দা করতেছি। এই পরিস্থিতিতে ভালো নির্বাচন হবে? দেখা যাক, আমরা দেখি কী হয়।

জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এবারের নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সুন্দর নির্বাচন হবে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? নির্বাচনের আগে দাগি আসামিদের ধরার জন্য অভিযান চালায়। কিন্তু আমরা দেখছি, একটি নির্দিষ্ট দলের গ্রামের নিরীহ কর্মীদের ধরা হচ্ছে। রাষ্টের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন বলছে মামলাও লাগবে না, পাইলেই ধরে ফেলতে হবে।

তাছাড়া আমরা যারা আগে নির্বাচন করেছি, তখন আমাদের লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হত, এখন দেখছি লাইসেন্সসহ গানম্যানও দিচ্ছে। এছাড়া যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দেশে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আমরা আরও কয়েক দিন দেখব।

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফের উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ জোটের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এনডিএফ নেতা ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ৩০০ আসনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১১৯টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।