হাদি হত্যায় আসামিদের ভারতে প্রবেশের খবর নাকচ বিএসএফের
* ফয়সাল দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, জানাল পুলিশ * ‘হাদি হত্যাকারীর দুই সহযোগী ভারতে গ্রেপ্তার’ * ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন : উপদেষ্টা * ৭ জানুয়ারির মধ্যে চার্জশিট : আইজিপি * ‘অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীনই বিচার সম্পন্ন হবে’
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান দুই সন্দেহভাজন আসামির ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যাওয়ার দাবি নাকচ করে দিয়েছে মেঘালয় পুলিশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। একইসঙ্গে পূর্তি বা সামি নামে কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করার কথাও স্বীকার করেনি মেঘালয় পুলিশ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস ও মেঘালয় মনিটর এ খবর জানিয়েছে। মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ জানিয়েছে, ওসমান হাদির দুই খুনি ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন বলে বাংলাদেশ পুলিশ যে তথ্য দিয়েছে, সেটির কোনো ভিত্তি নেই।
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ফয়সাল ও আলমগীর হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে মেঘালয়ের পশ্চিম গারো পাহাড়ে প্রবেশ করেছেন। সেখানে ‘পূর্তি’ নামের এক ব্যক্তি তাদের গ্রহণ করেন এবং ‘সামি’ নামের এক ট্যাক্সি চালক তাদের তুরা শহরে নিয়ে যান। মেঘালয় মনিটরের খবরে বলা হয়েছে, মেঘালয়ের পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিজিপি) ইদাশিশা নংরাং এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিএসএফের মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) ওপি উপাধ্যায় বলেছেন, এই দাবি সত্য নয়। এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বানোয়াট।
এসএফ আইজি ওপি উপাধ্যায় বলেন, হালুয়াঘাট সেক্টর দিয়ে এই ব্যক্তিদের সীমান্ত পার হওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। বিএসএফের নজরদারিতে এমন কোনও ঘটনা ধরা পড়েনি। এই দাবিগুলো ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। মেঘালয় পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানান, পূর্তি বা সামি নামে কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাদের মতে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনও প্রকার সমন্বয় ছাড়াই এই তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়নি বলেও জানায় মেঘালয় পুলিশ।
মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বলে হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, বর্ধিত নিরাপত্তা একটি নিয়মিত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, একে মিথ্যা দাবির সত্যতা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। খবরে আরও বলা হয়েছে, মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ উভয় পক্ষই জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। তবে যথাযথ আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে যাচাইকৃত তথ্যের ভিত্তিতেই কেবল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফয়সাল দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, জানাল পুলিশ : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম। গতকাল রোববার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে হাদি হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনার দিনই হাদিকে গুলি করা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ ওরফে রাহুল ও মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখকে শনাক্ত করা হয়। তাৎক্ষণিক তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম সাভার, হেমায়েতপুর, আগারগাঁও, নরসিংদীতে অভিযান পরিচালনা করে। ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির একটি টিম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, ছোরা, মোটরসাইকেল, ভুয়া নম্বরপ্লেট, হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা, ৫৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক ইত্যাদি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া জবানবন্দি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঘটনার পরপরই ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকা থেকে সিএনজি করে আমিনবাজারে যায়। পরবর্তীতে সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুর যায়। সেখান থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছে। আসামিদের চিহ্নিত করার আগেই তারা সীমান্ত অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। হালুয়াঘাটের আগে মুন ফিলিং স্টেশনে ফিলিপ এবং সঞ্জয় নামে দুই ব্যক্তি তাদের গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ফিলিপ তাদের সীমান্ত পার করার পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পুত্তির নামে এক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করে। পুত্তি ট্যাক্সি ড্রাইভার সামীর কাছে তাদের হস্তান্তর করে। সামী মেঘালয় রাজ্যের তুরা নামক জায়গায় তাদের পৌঁছে দেয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, তারা ইতোমধ্যে পুত্তি ও সামীকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, আমরা সন্দেহ করি আসামিরা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। এই ঘটনায় বিভিন্নভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ৪ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে আমরা চার্জশিট দিতে সক্ষম হবো। হাদির হত্যাকারীরা পালিয়ে গেছে এটা কীভাবে নিশ্চিত হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করেছি, তাদের আমরা অভিযুক্তদের ছবি দেখিয়েছি। তাদের ভাষ্যমতে অভিযুক্তরা পালিয়ে গেছে। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এর পেছনে কারা কারা কাজ করেছে সেটা আরও স্পষ্ট হতো। আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে আমরা সেই নামগুলো বলব না। আমাদের ধারণা, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে হাদি খুবই ভোকাল ছিল, তার কথাবার্তা স্পষ্ট ছিল এবং একটি আদর্শকে ধারণ করে। এই আদর্শ বা ৫ আগস্টে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকতে পারে।
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী, জানতে চাইলে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। এটা রাজনৈতিক কারণে হতে পারে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করছি না। আসামিদের ফিরিয়ে আনতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। আমরা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক দুইভাবেই তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
‘হাদি হত্যাকারীর দুই সহযোগী ভারতে গ্রেফতার’ : শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত দুই সহায়তাকারীকে ভারতের মেঘালয় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া দুই সহযোগীর নাম পূর্তি ও সামী। গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে হাদি হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খান বর্তমানে দেশে নেই। তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন। মেঘালয় পুলিশ সেখানেই তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ফয়সালের বাবা-মা, স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন ইতোমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দু’টি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। এছাড়া ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার চেক এবং ভুয়া নম্বর প্লেট জব্দ করা হয়েছে বলে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার।
আগামী ১০ দিনের মধ্যে হাদি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন- উপদেষ্টা : আগামী ১০ দিনের মধ্যে শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোর কমিটির সভা শেষে এ কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আপনারা জানেন, এর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা নিবিড় ও সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।
তদন্তের স্বার্থে এবং প্রকৃত অপরাধী ও মদদকারীদের শনাক্তের জন্য এখনই সবকিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তদন্তের স্বার্থে যে অংশটুকু জনসমক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব, তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মামলা চলাকালীন এযাবৎ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলো ঘটনার মূলহোতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির, মা হাসি বেগম, স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, গার্লফ্রেন্ড মারিয়া আক্তার লিমা, মো. কবির, নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, সিবিয়ন দিও, সঞ্জয় চিসিম, মো. আমিনুল ইসলাম রাজু, মো. আব্দুল হান্নান। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং ৪ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জব্দ করা উল্লেখযোগ্য আলামতগুলো হলো– হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন ও ছোরা; হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট; ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুলির খোসা, বুলেট, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য আলামত এবং প্রায় ৫৩টি অ্যাকাউন্টের ২১৮ কোটি টাকার চেক (স্বাক্ষরিত)। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অগ্রগতি বিষয়ে আজ ডিএমপি একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত রয়েছে তা উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, সাক্ষীদের জবানবন্দি, উদ্ধার করা আলামত পর্যালোচনা ও সার্বিক বিবেচনায় মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে (৭ জানুয়ারি ২০২৬) এ মামলার চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি। আমি সবাইকে এ বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করছি। আমরা অতি দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য এবং যারা এর পেছনে জড়িত রয়েছে তাদের নাম, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা জনসম্মুখে উন্মোচন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এ কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে ফ্যাসিস্টের দোসর, দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীরা অনবরত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য সবাইকে অনুরোধ করব, আমরা যেন এমন কোনো কাজ না করি, যা আমাদের শত্রুপক্ষকে শক্তিশালী করবে এবং হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে ইনশাআল্লাহ। উপদেষ্টা বলেন, আমি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে ওত পেতে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসর, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বিষয়ে দলগুলোকে সচেতন থাকার অনুরোধ করছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মী ভালোভাবে না জেনে ফ্যাসিস্টের দোসর, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের তাদের দলে স্থান দিচ্ছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করব– এসব ব্যক্তির বিষয়ে আপনারা সচেতন হোন, দলের ভেতরে আড়ি পেতে থাকা সুযোগসন্ধানী, সুবিধাবাদী ও খোলস পাল্টানো দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করুন, এদের থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিন। তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অভিযানে গত ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৯৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া এ অভিযানে ১০২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৫৩ রাউন্ড গুলি, ১৬৯ রাউন্ড কার্তুজ, ৮৯টি দেশীয় অস্ত্র, গ্রেনেড, মর্টারের গোলা, গান পাউডার, আতশবাজি, বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে ১২,৩৪৮ জনসহ সর্বমোট ২২,৩৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মূল আসামি মো. রুবেল (৪১)-কে ২৬ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
৭ জানুয়ারির মধ্যে হাদি হত্যা মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে- আইজিপি : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ শরীফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার চার্জশিট আগামী ৭ জানুয়ারি মধ্যে আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। গত শনিবার দিবাগত রাতে শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। আইজিপি বলেন, “এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে চাঞ্চল্যকর ২১৮ কোটি টাকার একটি স্বাক্ষরিত চেক উদ্ধার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সে দেশত্যাগ করেছে কিনা তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।” এর আগে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, চার্জশিট পাওয়ার পর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এদিকে, রবিবার ( ২৮ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় হাদি হত্যাকাণ্ডের সব শেষ অগ্রগতি জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে পুলিশ। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন এম নজরুল ইসলাম বিস্তারিত জানাবেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুখ ওসমান হাদি গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন তিনি। ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর ঢাকার পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীনই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে : অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীনই শহীদ শরীফ ওসমান হাদিকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার সম্পন্ন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গত শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ইনকিলাব মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে তিনি এই আশ্বাস দেন। রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা শহীদ হাদির পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এই বাংলাদেশের মাটিতে, অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীন সময়ের মধ্যেই যারা আমাদের হাদিকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার সম্পন্ন করে যাব।
তিনি বলেন, শহীদ হাদির মৃত্যু ছিল অত্যন্ত করুণ ও হৃদয়বিদারক। হাদিকে আমি আমার ভাই মনে করতাম। দেশের জন্য তার শহীদ হয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। যে মানুষের জানাজায় ১২ থেকে ১৫ লাখ মানুষ অংশ নেয়, তার হত্যার বিচার নিশ্চিত করা একটি জাতীয় দায়িত্ব। উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো আন্দোলনকারীদের মতো শাহবাগে বসে নেই, তবে সরকার এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা শত্রুপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তদন্ত করছি। তাই এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করছি না, যা প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
রেজওয়ানা হাসান জানান, সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে এই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট সুনির্দিষ্টভাবে দাখিল করা হবে। ইনশাআল্লাহ, ৭ জানুয়ারি ২০২৫-এর পর চার্জশিট দেওয়া হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীন সময়েই দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, অতীতে আসিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাত্র ছয় কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হয়েছে। সে অভিজ্ঞতা থেকেই সরকার এবারও নির্ভুল ও শক্তিশালী চার্জশিট দিতে চায়, যাতে কোনো ধরনের ফাঁকফোকর না থাকে। রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, অভিযুক্তরা দেশত্যাগ করে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ইন অ্যাবসেনশিয়া (অনুপস্থিতিতে) বিচার চালানো হবে। পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে এবং তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে কিছু তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, আগামীকাল সকাল সাড়ে ৬টায় ডিবি পুলিশ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে, যেখানে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
