প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ
‘খালেদা জিয়ার আপসহীনতায় জাতি বারবার মুক্ত হয়েছে’
* খালেদা জিয়ার অবদান জাতি স্মরণ রাখবে : জামায়াত * খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে এনসিপির শোক * আল্লাহ জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিন : আজহারী * পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানালেন আহমাদুল্লাহ
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারাল। তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। প্রফেসর ইউনূস বলেন, বেগম খালেদা জিয়া শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না; তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার অবদান, তার দীর্ঘ সংগ্রাম এবং তার প্রতি জনগণের আবেগ বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলতি মাসে তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার আপসহীন নেতৃত্বের ফলে গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে জাতি বারবার মুক্ত হয়েছে, মুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও জাতির কল্যাণে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল সব সময় পথ দেখিয়েছে। তার মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত রাজনীতিককে হারাল। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন, যিনি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে আসা বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুঃশাসনের পতন ঘটাতে প্রধান ভূমিকা রাখে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বহু কর্ম ও সিদ্ধান্ত দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। তিনি মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করেন, যা বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া ভীষণভাবে সফল ছিলেন। তিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে তিনি পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি যে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, সেখানেই তিনি জয়লাভ করেছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতির একটি মজবুত ভিত্তিস্থাপন করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক। তার আপসহীন ভূমিকা দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে জাতিকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সাফল্যের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা তার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির দিনে তিনি দেশবাসীকে শান্ত থাকার ও ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং যার যার অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন।
খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে- রাষ্ট্রপতি : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় তিনি এ কথা বলেন। শোকবার্তায় তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারর্পাসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার আপসহীন ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির মুহূর্তে আমি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। দেশবাসীকে মরহুমার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার অবদান জাতি স্মরণ রাখবে- জামায়াত আমির : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোটাধিকার আদায় এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শফিকুর রহমান আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় রেখে গেছেন। আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
জামায়াতে আমির খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে শোকবার্তায় তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তার সব ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে যেন আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দেন- সেই প্রার্থনা করেন শফিকুর রহমান। সেইসঙ্গে তিনি শোকাহত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের এই কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণের জন্য দোয়া করেন।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে এনসিপির শোক : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় এই শোক জানানো হয়। শোকবার্তায় বলা হয়, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের পক্ষ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে জানাচ্ছে যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপার্সন, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত ও আপসহীন রাজনৈতিক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ ৩০ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়, বেগম খালেদা জিয়া তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পুনরুদ্ধারে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুবার কারাবরণ, দমন-পীড়ন ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রশ্নে আপসহীন অবস্থান বজায় রেখেছেন। তার রাজনৈতিক দৃঢ়তা ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। শোকবার্তায় বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নেতৃত্ব গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
এনসিপি মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনা করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার, দলীয় নেতাকর্মী ও দেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানায়।
একজন দরদি অভিভাবক হারাল বাংলাদেশ- ইনকিলাব মঞ্চ : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দরদি অভিভাবক হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে দেওয়া এক ফেসবুকে পোস্টে সংগঠনটি এ মন্তব্য করে। সংগঠনটির ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তার এই মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দরদি অভিভাবক হারাল। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।
খালেদা জিয়াকে আল্লাহ জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিন- আজহারী : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শোক জানিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়া দুনিয়ার সফর শেষ করেছেন। আল্লাহতায়ালা তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন, ভালো কাজগুলোকে কবুল করুন এবং জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিন।
খালেদা জিয়ার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানালেন শায়খ আহমাদুল্লাহ : আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার বিদায়ে সারা দেশে নেমেছে শোকের ছায়া, শোক জানিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মহান আল্লাহ তার ভুল-ত্রুটি মার্জনা করে জান্নাতবাসী করুন। এই শোকের দিনে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
