ঢাকা শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশে পরিণত করার মাধ্যমে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তার লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আজকের দিনে সে প্রত্যয়ই ব্যক্ত করছি।’ দেশের বিদ্যমান অগ্রগতি ধরে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার অপরাহ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে সভাপতির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর রামপুরার বাংলাদেশ টেলিভিশন সেন্টারের (বিটিভি) শহীদ মনিরুল আলম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা তার বাবাকে নিয়ে লেখা ‘বাবা’ এবং মা’কে নিয়ে লেখা ‘রেনু আমার মা’ কবিতা দুটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করে শোনান বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।

দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুর ভাষণটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভাষণটা ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা। এই ভাষণটা ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র কাঠামো কী রকম হবে, স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে কোন আদর্শে চলবে, সেই আদর্শই তিনি এই ভাষণে দিয়েছিলেন। একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা জাতির পিতার সেই ভাষণে ছিল।’ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ যে বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা বঙ্গবন্ধু সেদিন দিয়েছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটাই আজকে লক্ষ্য, যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা। আজকের দিনে সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ যতটুকু পারি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে দিয়ে যাব এবং দেশবাসীকেও আমি সে আহ্বানই জানাই- আজকের যে অগ্রগতিটা হয়েছে সেটা ধরে রেখে আমরা যেন আরও এগিয়ে যেতে পারি সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূলের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তাদের ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন।’

পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, তখনও যে তিনি নির্ভয় ছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি ভাষণে এটাও বলেছিলেন, যখন তাকে ফাঁসি দেওয়ার নির্দেশ হয়, একটি দাবি তিনি শুধু করেছিলেন যে আমাকে তোমরা মেরে ফেলতে পার, কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও। আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও। পাকিস্তানি কারাগারে তার উপর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছিল, যা কেউ কখনও জানতে পারেনি। জাতির পিতা মৃত্যুকে কখনও ভয় করেননি, জয় করেছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) প্রিয় স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। ফিরে আসাটা আমাদের জন্য যে কত প্রয়োজনীয় ছিল... কারণ এই বাংলাদেশ তিনি স্বাধীন করেছিলেন, তার স্বপ্ন বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবেন।’ তিনি বলেন, ‘যখনই জাতির পিতা সাধারণ মানুষ তথা তৃণমূলের মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য পদক্ষেপ নিলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিলেন তখনই কিন্তু ১৫ আগস্টের আঘাতটা এলো। এই আঘাতটা শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা নয়, এই আঘাত ছিল একটি স্বাধীন দেশের আদর্শ ও চেতনাকে হত্যা করা। কেননা ১৫ আগস্টের পর থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা সেভাবেই রাষ্ট্রটা চালিয়েছিল। ১৫ আগস্টের খুনিরা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারি-তারাই ক্ষমতায় বসেছিল। আর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো চেষ্টাই তারা করেনি। কাজেই যে মানুষগুলোর জন্য তিনি (জাতির পিতা) নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, আজীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন সেই মানুষগুলোর ভাগ্য গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, ‘তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বার বার আমি ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এবং সব থেকে বড় কথা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতার পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসার স্মরণে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি পালন করতে পারছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী স্বাগত ভাষণ দেন। ছোট ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপরই এতে মুজিববর্ষের থিম সং- ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতার স্বদেশে ফিরে আসার ওপর একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।

জাতির পিতার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেওয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ ও অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে ২৯০ দিন বন্দি থাকার পর ১৯৭২ সালের এই দিনে (১০ জানুয়ারি) লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে ফিরে আসেন। এরপর থেকে জাতি দিনটিকে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত