সামরিক অভিযানের আশঙ্কায় নাইজারে উৎকণ্ঠা

* ‘ফ্রান্স গত ৬৩ বছর ধরে আমাদের দেশে ইউরোনিয়াম আহরণ করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে- এমন একটি ড্যাম নাইজারে নেই’ * ‘যেভাবে সামরিক শাসকরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, আমাদের আশা আছে তারা নাইজারের অবস্থা পরিবর্তন করবে’

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

নাইজারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গতকাল রোববার ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা। তবে বাজোমকে ক্ষমতায় পুনঃস্থাপন করতে গতকাল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আফ্রিকার ১৫ সদস্যের জোট ইকোয়াস। এই সময়ের মধ্যে ক্ষমতা না ছাড়লে জান্তার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার হুমকি দিয়েছে ইকোয়াস। আর এই সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের আশঙ্কা থেকে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। জান্তার অভ্যুত্থানের পরই এটির পক্ষে দেশটির রাজধানীতে মিছিল করেন হাজার হাজার মানুষ। তারা ফ্রান্সবিরোধী ও রাশিয়ার পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ফ্রান্সকে ‘ঔপনিবেশিক’ হিসেবেও গালাগাল করেন অনেকে। জান্তার পক্ষে রাস্তায় নামা সাধারণ মানুষের একজন হলেন ইয়েইয়ে ইউসুফু। তিনি দাবি করেছেন, ফ্রান্স নাইজারকে শুধু শোষণ করেছে। তাদের জন্য কিছুই করেনি। তিনি বলেছেন, ‘ফ্রান্স গত ৬৩ বছর ধরে আমাদের দেশে ইউরোনিয়াম আহরণ করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে- এমন একটি ড্যাম নাইজারে নেই।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘যেভাবে সামরিক শাসকরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, আমাদের আশা আছে তারা নাইজারের অবস্থা পরিবর্তন করবে।’ নাইজারের এ অভ্যুত্থানটি ২০২০ সাল থেকে আফ্রিকায় পঞ্চম অভ্যুত্থান। নাইজারের মতো মালি, গিনি, বুরকিনা ফাসো এবং চাদেও একইভাবে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক জান্তা।

তবে নাইজারের অভ্যুত্থান নিয়ে আফ্রিকান জোট ইকোয়াস বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া নাইজেরিয়া দেশটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। নাইজার যত বিদ্যুৎ আমদানি করে তার ৭০ শতাংশই পাঠায় নাইজেরিয়া। তারা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় এখন নাইজারের বেশিরভাগ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন। সামরিক অভিযানের আশঙ্কা : নাইজারের সামরিক জান্তার সঙ্গে আপসের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়েছিল ইকোয়াস। এর অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার নাইজার গিয়েছিল ইকোয়াসের একটি প্রতিনিধি দল। কিন্তু তাদের সঙ্গে জান্তা প্রধান আব্দররহমান চিয়ানি দেখা করেননি। এর পরই গত শুক্রবার সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি চেয়ে নাইজারের প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবো দেশটির সিনেটের কাছে অনুমতি চান। ওই দিনই ইকোয়াসের সদস্যভুক্ত দেশের সেনাপ্রধানরা জানান অভিযান চালানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন তারা। তবে ইকোয়াসের এ হুমকিতে একটুও পিছপা হয়নি নাইজারের জান্তা। এছাড়া তাদের দুই পার্শ্ববর্তী দেশ মালি ও বুরকিনা ফাসো হুমকি দিয়েছে যদি নাইজারে কোনো সামরিক অভিযান চালানো হয় তাহলে এটি তাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণার সামিল হবে। এর ফলে তারাও বল প্রয়োগের মাধ্যমে ইকোয়াসের বাহিনীকে প্রতিহত করবে।

উৎকণ্ঠায় নাইজেরিনরা : গত রোববার ইকোয়াসের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হবে। আর সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নাইজেরিনদের মধ্যে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। তারা আশঙ্কা করছেন, লম্বা সময়ের জন্য যুদ্ধ ও বিগ্রহের কবলে পড়ে যেতে হবে তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন নাইজারে কোনো সামরিক অভিযান চালানো হলে এর ব্যাপক মূল্য দিতে হবে।