মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের পর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জন্য বড় ধরনের সামরিক সাফল্য এসেছে। ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে পরিচিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট জান্তাকে হটিয়ে পূর্ব মিয়ানমারের একটি বিশাল অংশ দখল করেছে। এই জোটটি মূলত তিনটি শক্তিশালী বিদ্রোহী বাহিনী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), এবং আরাকান আর্মিকে নিয়ে গঠিত। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের যোদ্ধারা এখন মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এমএনডিএএ, কোকাং জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গোষ্ঠী, ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় এবং তারা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের জন্য সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। টিএনএলএ, যা তাং জনগণের স্বাধীনতার দাবি করছে, ২০০৯ সাল থেকে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, আরাকান আর্মি ২০০৯ সাল থেকেই রাখাইন প্রদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে আসছে।
গত বছর ২৭ অক্টোবর থেকে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অধীনে এই তিনটি গোষ্ঠী মিয়ানমারের সরকারি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শান প্রদেশজুড়ে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে, যা ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে পরিচিত। এই অভিযানে প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধা অংশ নেয় এবং তারা সরকারি সেনা চৌকিগুলো দখল করে নেয়, পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শহরও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এই সাফল্য মিয়ানমারের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সামরিক কার্যক্রম সরকারকে চাপে ফেলেছে, বিশেষ করে মান্দালয় শহরে তাদের অবস্থান শক্তিশালী হওয়ায়। এই শহরটি দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত, এবং বিদ্রোহীদের অগ্রগতি জান্তার নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করছে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সাফল্য সরকারি বাহিনীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কন্ট্রোল রিস্কসের গবেষক স্টিভ উইলফোর্ড জানান, সরকারি বাহিনী তাদের অবস্থান রক্ষার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে এবং পরিস্থিতি আরো জটিল হবে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, অভিযানের ফলে প্রায় ৩৩০,০০০ বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যদিও ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সমর্থন পেয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য হলো নিজেদের অঞ্চলের জন্য স্বায়ত্তশাসন অর্জন করা।
চীন এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো— মিয়ানমারের সংঘাত যেন সীমান্তের কাছে না আসে। চীনের সরকার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে, যা তাদের বৈদেশিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
বর্তমানে, ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সামরিক কার্যক্রম মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতি কি মিয়ানমারের ভবিষ্যৎকে নতুন করে নির্ধারণ করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: বিবিসি