ইসরায়েলবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

‘ইসরায়েল স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা খুবই উদ্বেগের। তারা (সরকার) জিম্মিদের পাশে নেই। দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তোয়াক্কা করছে না।’ কথাগুলো বলছিলেন ৫৯ বছর বয়সী রিনাত হাতাশি। গত শুক্রবার জেরুজালেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন এই ইসরায়েলি। এদিন ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে দেশে দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখা, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে বন্দি থাকা বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলে বিক্ষোভ করছেন দেশটির হাজার হাজার নাগরিক। তাদের মূল ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে।
এ বিক্ষোভের অংশ হিসেবে গতকাল জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরে অবস্থান নেন বহু মানুষ। তাঁদের হাতে ছিল ইসরায়েলের পতাকা ও সরকারের সমালোচনা করে লেখা প্ল্যাকার্ড। পশ্চিম জেরুজালেমে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মাইকেল হালপেরিন বলেন, শিন বেতের বদলে প্রধানমন্ত্রীকে এখন গাজায় মৃত্যুর মুখে থাকা বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দিকে নজর দেওয়া উচিত। জেরুজালেম ও তেল আবিবে গত বুধ ও বৃহস্পতিবারও বড় বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এই দুই এলাকা থেকে অন্তত ১২ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আগের দিন বুধবার জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কগুলোয় অবস্থান নেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের অনেকের স্লোগান ছিল- ‘এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা চালিয়ে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। এরপর কয়েক দফায় বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির সময় ৩৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। বাকিদের যুদ্ধবিরতির পরবর্তী দুই ধাপে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে টানা চার দিন ধরে চলা হামলায় ৫৯০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের মধ্যে দুই শতাধিক শিশু। গাজায় ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা হামলায় ৪৯ হাজার ৬১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে নতুন করে হামলার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন নানা দেশের মানুষ। গতকাল দিবাগত রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরাক, জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের নির্মম হামলার প্রতিবাদে গতকাল বড় বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে রাজধানী ইসলামাবাদে ইসরায়েলের মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ঘেরাও করেন জামায়াত-ই-ইসলামি পাকিস্তানের (জেআই) সদস্য ও সমর্থকেরা।
পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কনস্যুলেট ঘেরাও করা হয়। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকায় আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। রাজনৈতিক দল জেআইয়ের প্রধান নাইমণ্ডউর-রহমান বলেন, সারা বিশ্বের মতো পাকিস্তানও নিপীড়কদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। এর আগে জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুনির আকরাম গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশ ও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। গাজায় হামলার প্রতিবাদে মধ্যপ্রাচ্যেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
জর্ডানের রাজধানী আম্মানে গতকাল জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের হাতে জর্ডানের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যায়। ইসরায়েলবিরোধী নানা স্লোগান দেন তাঁরা। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বাইরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারীদের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকার পাশাপাশি ছিল নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী প্ল্যাকার্ড। এদিকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গতকাল কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপের পর ক্রেমলিন জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসনে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করতে প্রস্তুত রাশিয়া ও কাতার। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দেশটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বেসামরিক প্রত্যেক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করছে যুক্তরাজ্য। গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হয় ১ মার্চ। এরপর দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি ইসরায়েল ও হামাস। এমন পরিস্থিতিতে পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের ‘পাসওভার’ উৎসব উপলক্ষে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ায় নেতানিয়াহু সরকার। তবে নিজেদের দেওয়া সে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে মঙ্গলবার ভোররাতে গাজায় হামলা শুরু করে তারা।
