ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি অগ্রহণযোগ্য চাঁদাবাজি
বললেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে ‘অগ্রহণযোগ্য চাঁদাবাজি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ব্রাজিলের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন- এই শুল্ক নীতি দুদেশের মধ্যে ‘অবিচারপূর্ণ’ বাণিজ্যিক সম্পর্ক সংশোধনের জন্য প্রয়োজন।
গত ৯ জুলাই ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ব্রাজিলের ওপর কড়া শুল্ক আরোপ করতে চান। কারণ হিসেবে বলেন, ব্রাজিলে তার কট্টর ডানপন্থি মিত্র ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হয়রানি করা হচ্ছে।
ট্রাম্প অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ধারাবাহিকতায় ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এই শুল্ক বৃদ্ধিকে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একটি ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হলো- ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিচার প্রক্রিয়া। বলসোনারোকে ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে। ট্রাম্প এই বিচার প্রক্রিয়াকে ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করে বলসোনারোর বিচার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
ইরনা’র বরাতে পার্সটুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের বামপন্থি নেতা লুলা দা সিলভা তার ভাষণে ট্রাম্পের নীতিকে সমর্থনকারী ব্রাজিলের রাজনীতিবিদদেরও সমালোচনা করেন। তাদের ‘মাতৃভূমির বিশ্বাসঘাতক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সুসম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাবেন। তবে তিনি সতর্ক করেন যে ব্রাজিলের একমাত্র মালিক দেশটির জনগণ। ২০২২ সালের নির্বাচনে লুলা দা সিলভার কাছে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে বর্তমানে তার বিচার চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে তিনি সর্বোচ্চ ৪০ বছরের কারাদণ্ড পেতে পারেন।
ট্রাম্প একজন চাঁদাবাজ, তার সঙ্গে ‘কল্ট’ হাতে আলোচনা করতে হবে : ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কের প্রস্তাব ইউরোপীয় নেতাদের ক্ষুব্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে ইইউ’র সাবেক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জ্যাঁ-লুক ডিমারটি ইউরো নিউজকে বলেন, ‘ট্রাম্প কোনো সমঝোতা চান না, তিনি মাফিয়া স্টাইলে চাঁদাবাজি করছেন।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ইইউ’র উচিত ৯৩ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের জবাবি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়াও নতুন ‘অ্যান্টি-কোয়ার্শন’ (জবরদস্তিবিরোধী) কৌশল সক্রিয় করা। ট্রাম্প যা করছেন তা স্পষ্ট জবরদস্তি, আর আমাদেরও দেখাতে হবে যে আমরা কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত-যেন আলোচনার টেবিলে আমাদের কল্ট (বন্দুক) রেখে দিয়েছি।’ ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের কলামিস্ট মার্টিন উল্ফ লিখেছেন, ‘ট্রাম্প আবার তার প্রিয় অস্ত্র-‘শুল্ক’ ব্যবহার করতে ফিরেছেন। যেন কুকুরটি আবার তার পুরোনো হাড়ে কামড়ে পড়েছে। এবার সংশোধিত তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র থেকে শুরু করে বিশ্বের কিছু দরিদ্রতম দেশও তার আক্রমণাত্মক বাণিজ্য নীতির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই শুল্ক ১ আগস্ট, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।’ এই ব্রিটিশ সাংবাদিক আরও লিখেন, ‘ট্রাম্প যেহেতু যুক্তিযুক্ত চিন্তায় আগ্রহী নন, তাই তার কাছ থেকে বাস্তবসম্মত বাণিজ্যচুক্তির আশা করাও অনর্থক। হয়তো এবার সে পুরো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে চাইছে যা বিশ্ববাজারে এক ভয়ানক অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। সম্ভবত এবার তিনি তার পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে চান যা ঘটলে গত মে মাসে ৮.৮ শতাংশ থাকা মার্কিন শুল্কের হার আরও বেড়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি একদম নতুন এক রূপ নেবে।’
