পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা

ইসরায়েলকে আরব আমিরাতের হুঁশিয়ারি

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিন ইস্যুতে এবার সরাসরি ইসরায়েলকে কড়া বার্তা দিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি সতর্ক করে জানিয়েছে, পশ্চিম তীর দখলের যেকোনো পদক্ষেপ ইসরায়েলকে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করাবে এবং আব্রাহাম চুক্তির মূল চেতনা ধ্বংস করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসাইবেহ বলেছেন, পশ্চিম তীর দখল শুধু দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকেই ধ্বংস করবে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক সমন্বয়কেও অচল করে দেবে। তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তবে ইসরায়েল সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। জানা যায়, ইসরায়েলের চরমণ্ডউগ্র ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ সম্প্রতি পশ্চিম তীরের চার-পঞ্চমাংশ দখলের প্রস্তাব প্রকাশ করার পরই আমিরাতের এ প্রতিক্রিয়া আসে।

১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে এখন প্রায় সাত লাখ ইহুদি বসবাস করছে। একই এলাকায় বসবাস করছে প্রায় ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতি অবৈধ। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমেই আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তবে শর্ত ছিল, ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা স্থগিত রাখবে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পরিকল্পনা স্থগিত করার কথা বললেও জানিয়ে দিয়েছিলেন, এটি এখনও ‘টেবিলে’ রয়েছে। নেতানিয়াহুর বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম তীর দখলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইসরায়েল অভ্যন্তরে দখল পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। নেতানিয়াহু অবশ্য স্পষ্ট করে বলেছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা’। অন্যদিকে আমিরাত আগেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। লানা নুসাইবেহ বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই আব্রাহাম চুক্তিকে ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষা পূরণের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছি। পশ্চিম তীর দখল আমাদের কাছে রেড লাইন। এটি শুধু চুক্তির চেতনা ধ্বংস করবে না, বরং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি আন্তর্জাতিক ঐকমত্যও ভেঙে দেবে।’ অন্যদিকে জেরুজালেমে সংবাদ সম্মেলনে বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, ‘এখন সময় এসেছে দখলের। দেশ ভাগ করে মাঝখানে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গড়ার ধারণা একেবারে বাতিল করতে হবে।’ তিনি একটি মানচিত্র প্রদর্শন করেন, যেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বসতি প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী পশ্চিম তীরের প্রায় ৮২ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব বিস্তারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাকি ১৮ শতাংশ এলাকা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ছয়টি ফিলিস্তিনি শহরের আশপাশে জেনিন, তুলকারেম, নাবলুস, রামাল্লাহ, জেরিহো ও হেবরন। এ পরিকল্পনায় বেথলেহেমসহ বহু ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রাম বাদ পড়েছে। ইসরায়েল ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ এখনও সেটি স্বীকৃতি দেয়নি। স্মোট্রিচ দাবি করেন, ফিলিস্তিনিরা আপাতত আগের মতোই জীবনযাপন চালিয়ে যাবে, তবে ভবিষ্যতে বিকল্প আঞ্চলিক বেসামরিক প্রশাসনের অধীনে তা পরিচালিত হতে পারে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এটিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নের ওপর সরাসরি হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, পশ্চিম তীরে ইসরায়েল এরইমধ্যে একধরনের বর্ণবাদী ব্যবস্থা চালু করেছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এর আগে গত মাসে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের একটি বড় পরিকল্পনা অনুমোদন করলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনাটি কার্যকর হলে পশ্চিম তীর কার্যত পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে।